অভয়নগরে ১৯ দিনে ১৯ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে

0

 

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর(যশোর)॥ যশোরের অভয়নগর উপজেলায় বৃষ্টির পানি জমতে শুরু করার সাথে সাথেই ডেঙ্গু রোগের ভয়াবহতা বাড়তে শুরু করেছে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গত ১৯ দিনে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে তথ্য মিলেছে। এছাড়া অনেকে যশোর ও খুলনায় চিকিৎসা গ্রহন করেছেন। কেউ কেউ বাড়িতেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এই ভয়াবহতার মাঝেই একদিন আগে গত ২০ আগস্ট নিরবে পার হয়ে গেছে বিশ্ব মশাদিবস। বিশ্ব মশা দিবসে এ উপজেলার কোথাও জনসচেতনতামূলক কোন কর্মসূচি গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ফলে এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও উদাসীনতায় এ উপজেলায় মশাবাহিত এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে শুরু করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নওয়াপাড়া পৌরসভার প্রায় সব ওয়ার্ডেই বৃষ্টি হলে পানিবদ্ধতার হয়। এছাড়া দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং ড্রেনগুলো যথাযথভাবে পরিষ্কার না করায় জলাবদ্ধতা বেড়েই চলেছে। ফলে এসকল জলাবদ্ধ অঞ্চলে জন্ম নিচ্ছে ডেঙ্গু রোগের বাহক ভয়ংকর এডিশ মশা। তাছাড়া শিল্প-বাণিজ্য ও বন্দর নগর নওয়াপাড়ার পৌর এলাকায় জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির সাথে সাথে অধিকাংশ বাসা বাড়ির সদস্যরা ছাদ বাগান ও ইনডোর প্লান্টের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে এসব গাছের টবগুলো দিনের পর দিন পরিষ্কার না রাখায় এবং পানি পরিবর্তন না করায় এসকল টবে এডিশ মশা বংশ বিস্তারের সুযোগ পাচ্ছে। ফলে দিন গেলেই এ উপজেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়া তথ্য মতে, গত ১ আগস্ট হতে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ১৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। তারা হলেন, কবির (২২), রিপা (২৮), অধরা (১১), আক্কেল (৬৫) সজল (২৩), লিটন (৪০), শেখ সাদি (২০), আকলিমা (২৪), লতিফা (৩৫), সজিব (১৮), হাজেরা (২৯), সুমাইয়া (১৩), জব্বার (৬৫), হুমায়ুন (১৮), মফিজুল (৩৫), অনিক (২০), রিমন (১২), ওমর ফারুক (৯) ও রাশিদা (৪০)।
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাহামুদুর রহমান রিজভী বলেন, অভয়নগর উপজেলায় সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগী উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। ১৯ দিনে হাসপাতালে ১৯ জন ভর্তি হলেও এর বাইরে অসংখ্য ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অনেকে ডেঙ্গু জ্বরকে সাধারণ জ্বর মনে করে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অধিকাংশ সুস্থ হয়ে উঠছেনও। তবে পরবর্তীতে শারীরিক দুর্বলতাসহ নানা জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। যাদের শারীরিক অবস্থায় ডেঙ্গু রোগীর লক্ষণ স্পষ্ট। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সকলকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ডেঙ্গু ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি পৌর কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে। সেই সাথে বাসা বাড়ির ফ্রিজ, এসি, গাছের টবসহ তৈজসপত্রাদীতে জমে থাকা পানির ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এসব পানিতে বেশি পরিমাণ এডিশ মশার জন্ম হয় বলে দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি মশক নিধন কার্যক্রম, জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ জলাব্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকার অনুরোধ করেন ডা. রিজভী। এক প্রশ্নে ড. রিজভী বলেন, বিশ্ব মশা দিবসে কোন কর্মসূচি নেয়া হয়নি। তবে আমরা মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের দ্বারা সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ চলমান রেখেছি। এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীনের সাথে কথা বললে তিনি অভয়নগরের ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানেন না বলে জানান। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেও তাকে কিছু জানানো হয়নি। বা কোন পরামর্শ করেনি।