রাজগঞ্জে পানির অভাবে অনেক চাষি এখনও রোপা আমন চাষাবাদ করতে পারেনি

0

 

ওসমান গণি. রাজগঞ্জ (যশোর) সংবাদদাতা ॥ মণিরামপুর উপজেলায় রোপা আমন মৌসুমের শুরুতেই তীব্র তাপদহে ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হচ্ছে। পানির সংকটও ছিলো এ উপজেলার ফসলি জমিতে। পানির কারণে রোপা আমন চাষ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। চাষিরা অনেকটা বাধ্য হয়ে পানির চাহিদা মিটিয়েছেন ডিজেল চালিত স্যালো পাম্পের সাহায্যে সেচ দিয়ে। কিছু সংখ্যক চাষি ব্লকের আওতায় থেকে বাঁওড়ের পানি দিয়ে রোপা আমন চাষাবাদ করলেও অধিকাংশ চাষি এখনও পর্যন্ত তীব্র পানির সংকটের কারণে চাষাবাদ করতে পারেননি।
চাষিরা আশায় ছিলেন মুষলধারে বৃষ্টি হবে। আর সেই বৃষ্টির পানিতে স্বস্তি নিয়ে রোপা আমন চাষাবাদ করবে। কিন্তুু বাস্তব চিত্র হয়েছে ভিন্ন। দীর্ঘ তাপদহ শেষে সম্প্রতি নি¤œচাপে একটু বৃষ্টি হলেও এই বৃষ্টি কৃষকের কোন উপকারে আসছে না। অপর দিকে হঠাৎ করে ডিজেল ও সারের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় রোপা আমন চাষে আগের চেয়ে খরচ অনেকগুণ বেড়ে গেছে। এখন হেক্টর প্রতি খরচ হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
মণিরামপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে বৃহত্তর এ উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নসহ মোট উপজেলায় ২২হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তুু ২ ভাদ্র পর্যন্ত ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন লাগানো হয়েছে। পানির অভাবে এখনও পর্যন্ত ১৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়নি। তবে এখনও জমিতে আউশ ধান এবং পাট থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। আর চলতি রোপা আমন মৌসুমে সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১লাখ ১৩ হাজার ২৫০ মেট্রিকটন।
কৃষকরা বলছেন, পহেলা জুলাই থেকে বৃহত্তর এ উপজেলায় রোপা আমনের চাষ শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৫ আগষ্টে। কিন্তুু তীব্র তাপদহের কারণে এবার সময় মতো রোপা আমনের চাষাবাদ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে চলতি মৌসুমে আমনের ফলন একেবারেই কম হতে পারে বলে ধারনা স্থানীয় কৃষকদের। ঝাঁপা ইউনিয়নের হানুয়ার গ্রামের শাহজাহান আলী, শাহদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, গ্রামের চাষি মাস্টার বাবুল আক্তার, ফারুক হোসেন, মেহেদি হাসান টুটুল, চালুয়াহাটি ইউনিয়নের রামনাথপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, মুনছুর আলী, মাহবুর রহমান, কামাল হোসেন, মোবারকপুর গ্রামের সফিকুল ইসলাম টুলু, সাবেক ইউপি সদস্য আমজাদ আলী খাঁন, ইউসুফ আলী,
মশ্মিমনগর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের মামুনুর রশীদ, মশ্মিমনগর গ্রামের ফারুক হোসেন, খেদাপাড়া ইউনিয়নের হেলাঞ্চি গ্রামের ছিদ্দিকুর রহমান, হরিহরনগর ইউনিয়নের ডা. ইলিয়াস কবির, রোহিতা ইউনিয়নের আমিনুর রহমান, রূপচাঁন আলী ও আব্দুস সাত্তার জানান, শ্রাবণ মাসও গেল ভাদ্র মাসের আজ ৩দিন। অথচ বৃষ্টির কোনো দেখা নেই। আর ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমন চাষে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টির হয়েছে। এদিকে আমন ধানের চারার বয়স বেশি হলে সেই চারা রোপণে দেরি হওয়ায় ভালো ফলন পাওয়া যাবে না। ফলে সময় মতো আমন ধানের চারা রোপণ করার জন্য বৃষ্টির পানির দিকে না তাকিয়ে গভীর নলকূপের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিয়ে রোপা আমনের চারা রোপনের কাজ শুরু করে দিয়েছে এ উপজেলার চাষিরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার জানান, চলতি মৌসুমে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে। কারণ এখনও ক্ষেতে আউশ ধানসহ পাট রয়েছে। এগুলো কাটার পর রোপা আমনের চারা রোপণের কাজ শুরু হবে। আর বর্তমান বাজারে সারের কোন সংকট নেই। তবে দাম একটু বেড়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।