সাইফুর রহমান সাইফ ॥ আজ ১০ মহররম। পবিত্র আশুরা। এদিনের তাৎপর্য অনেক। তার ভেতর বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ স.এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হুসাইনের শাহাদত বরণ অন্যতম।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথানত না করার ইমাম হুসাইনের সেদিনের সে আত্মত্যাগ আজো শুধু মুসলমান না, সমগ্র বিশ্ব শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। অথচ ইচ্ছে করলেই ইয়াজিদের অন্যায় শর্ত মেনে নিয়ে ইমাম হুসাইন (রা.) লাভবান হতে পারতেন। দিনটি ছিল ৬৮০ খ্রিস্টাব্দের ১০ মহরম। হিজরি ৬১ সাল। সেদিন সে মর্মন্তুদ ঘটনায় কেঁদেছিল আকাশ, কেঁদেছিল বাতাস, ফুরাতের পানি। পাখপাখালি ডুকরে কেঁদে বুক ভাসিয়েছিল।
আশুরা বা মহররমের ১০ তারিখের যেসব তাৎপর্য রয়েছে তার ভেতর আছে- এ দিন আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করেন, এ দিনই আবার কেয়ামত হবে, এ দিন হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) বেহেশত থেকে দুনিয়ায় নেমে আসেন, ১০ মহররম আল্লাহ নবী স. এর উসিলায় আদম ও হাওয়া (আ.)-র তওবা কবুল করেন, এ দিনই মা হাওয়া (আ.)-র সঙ্গে আরাফার ময়দানে বাবা আদম (আ.)-র দেখা হয়, হজরত নুহ (আ.)-র জাতির অবাধ্য লোকেরা আল্লাহর গজব মহাপ্লাবনে নিপতিত হওয়ার পর আল্লাহ ১০ মহররম নৌকাসহ ইমানদার বাহিনীকে জুদি পাহাড়ে অবতরণ করান, হজরত ইবরাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ৪০ দিন পর ১০ মহররম সেখান থেকে মুক্তিলাভ করেন, হজরত আইয়ুব (আ.) ১৮ বছর কঠিন রোগ ভোগ করার পর মহররমের এ দিন আল্লাহর রহমতে সুস্থতা লাভ করেন, হজরত ইয়াকুব (আ.)-র ছেলে ইউসুফ (আ.) তার ১১ ভাইয়ের ষড়যন্ত্রে কূপে পতিত হন এবং এক বণিক দলের সহায়তায় মিসরে গিয়ে হাজির হন। তারপর আল্লাহর বিশেষ কুদরতে তিনি মিসরের প্রধানমন্ত্রী হন, আবার ৪০ বছর পর ১০ মহররমে পিতার সাথে ছেলের মিলন হয়, হযরত ইউনুস (আ.) জাতির লোকদের প্রতি হতাশ হয়ে নদী অতিক্রম করে দেশান্তরিত হওয়ার সময় পানিতে পতিত হন এবং মাছ তাকে গিলে ফেলে। মাছের পেট থেকে তিনি আল্লাহর রহমতে ৪০ দিন পর মুক্তি পান ১০ মহররম, হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের অত্যাচারের কারণে তার দলবলসহ অন্যত্র চলে যান। পথিমধ্যে নীল নদ পার হয়ে তিনি ফেরাউনের হাত থেকে আশুরার দিন মুক্তি পান। আর ফেরাউন দলবলসহ নীল নদে ডুবে মারা যান। হজরত ইসা (আ.)-র জাতির লোকেরা তাকে শহীদ করার চেষ্টা করলে ১০ মহররম আল্লাহ তাকে আসমানে উঠিয়ে নিয়ে মুক্তি দান করেন। এ দিন হজরত সুলাইমান (আ.) সাময়িকভাবে হারানো রাজ্য পুনরায় ফিরে পান এবং তার পিতা দাউদ (আ.)-র ওপর জবুর কিতাব নাজিল হয়।
মহররম ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। ইসলামী পরিভাষায় মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলে।
আশুরা আরবি ‘আশারা’ থেকে এসেছে। এর অর্থ ১০। আর আশুরা মানে দশম। অন্য কথায় বলতে গেলে এ মাসের ১০ তারিখ ১০টি বড় বড় ঘটনা ঘটার কারণেও এ তারিখকে আশুরা বলা হয়। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার দিনে রোজা রাখতে হতো। তাই ১০ মহরমের গুরুত্ব অনেক।