মণিরামপুরের ৬ ইউনিয়নে আমন মৌসুমের শুরুতেই সারের তীব্র সংকট

0

 

ওসমান গণি. রাজগঞ্জ (যশোর) ॥ যশোরের মণিরামপুর উপজেলার পশ্চিমাঞ্জলের ছয়টি ইউনিয়নে চলতি রোপা আমন মৌসুমের শুরুতেই সারেরর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এসকল ইউনিয়নের ডিলারদের বিরুদ্ধে সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। কৃষকরা তাদের ক্ষেতে সার দিতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়ছেন। পাশাপাশি চলতি রোপা আমন মৌসুমে সার সংকটের কারণে চাষাবাদ মারাত্মক ব্যাহত হওয়াসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
উপজেলার রোহিতা, খেদাপাড়া, হরিহরনগর, ঝাঁপা, মশ্মিমনগর ও চালুয়াহাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট-বাজারে এখন সারের সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষকেরা সারের জন্যে ডিলারসহ হাট-বাজারের বিভিন্ন দোকানে ছোটাছুটি করেও কিনতে পারছেন না সার। কৃষকেরা বলছেন অতিরিক্ত দাম দিয়ে হলেও তারা সার কিনতে রাজি। কিন্তু তাও মিলছে না। কোথাও কোথাও যাওবা মিলছে তার দামও অনেক বেশি চাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে বেশি দামে সার কিনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের।
জানাগেছে, সরকারি মূল্য অনুযায়ী বর্তমানে বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতি কেজি ফসফেট ২২টাকা, পটাশ প্রতি কেজি ১৫ টাকা, ড্যাপ প্রতি কেজি ১৬ টাকা ও ইউরিয়া প্রতি কেজি ২২ টাকা বিক্রির কথা রয়েছে। তবে এসকল ইউনিয়নের সারের ডিলারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের খুচরা বিক্রেতারা চড়া দামে সার বিক্রি করছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়া হঠাৎ করে ইউরিয়া সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা।
ঝাঁপা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি গোলাম রসুল চন্টা জানান, সারের ডিলারসহ খুচরা বিক্রেতাদের কাছে চাহিদা অনুযায়ী সার পাওয়া যাচ্ছেনা। যদিও সার মিলছে তাও আবার আকাশ ছোঁয়া দাম। অনেকটা বাধ্য হয়ে চড়া মূল্য দিয়ে এক বস্তা সার মিলাতে পেরেছেন তিনি। এখন ও তার চার বস্তা ইউরিয়া সারের প্রয়োজন বলে জানান এ জনপ্রতিনিধি।
উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের চাষি রূপচাঁন আলী ও আমিনুর রহমান, খেদাপাড়া ইউনিয়নের চাষি আব্দুর রহমান, তুষার আহম্মেদ ও সুনিল দাস হরিহরনগর ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন, আবুল কাসেম, শৈলেন বাবু ও ডাক্তার ইলিয়াস কবির মশ্মিমনগর ইউনিয়নের আব্দুল আজিজ, মিলন হোসেন খাঁন ও ফারুক হোসেন, চালুয়াহাটি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আবুল হোসেন, আব্দুল ওয়াদুদ, উজ্জল কুমার, মাস্টার জব্বার আলী, শহিদুল ইসলাম, অখিল কুমার, রতন কুমার ও তাপস কুমারসহ একাধিক চাষি জানান, চলতি মৌসুমে রোপা আমন চাষের শুরু থেকে তাদের এলাকায় তীব্র সার সংকট দেখা দিয়েছে। বেশি দাম দিয়েও হাট-বাজারে কোনো সার পাওয়া যাচ্ছেনা।
রাজগঞ্জ বাজারের সারের সাব ডিলার আব্দুল মজিদ ও রাশেদুল ইসলাম রাশেদ জানান, গত মাসের আটশ টাকা দরের প্রতি বস্তা ইউরিয়া সার বিক্রি হওয়ার পর নতুন করে ১১শ টাকা প্রতি বস্তা সারের চালান দোকানে রয়েছে। হাট-বাজারে সারের কোনো সংকট নেই বলে জানান এ দুই সাব ডিলার।
চালুয়াহাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ ও ঝাঁপা ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হক মন্টু জানান, এলাকার কিছু কিছু কৃষক সারের দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে সরকারের নির্ধারিত দামের বাইরে যদি কেউ বেশি দামে সার বিক্রি করে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এ দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ বিভাগের সার নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার জানান, যে সকল ডিলারদের কাছে কম দামের ইউরিয়া সার ছিল সেগুলো তারা চাষিদের মাঝে ওই দামেই বিক্রি করে দিয়েছে। বর্তমানে প্রতি ইউনিয়নে একজন করে সারের ডিলার রয়েছে। ওই ডিলারের আওতায় ইউনিয়ন প্রতি নয়জন করে সাব ডিলার রয়েছে। এসকল ডিলাদের কাছে সম্প্রতি বেশি দামের এক শত মেট্রিকটন করে সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রোপা আমন মৌসুমে বৃহত্তর এ উপজেলায় সারের কোনো সংকট নেই বলেও জানান কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা।