চৌগাছায় ফলের গায়ে আগুন! কেনার সাধ্য নেই সাধারণের

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় এবার চাল, ডাল, চিনি, কাঁচা মারিচ, মাছা মাংস এক কথায় নিত্যপণ্যের পর ফলের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। নানা অজুহাতে ফল ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম হাকিয়ে ফল বিক্রি করছেন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে নিম্নআয়ের মানুষ সাধ থাকলেও একটি ফল কিনে খেতে পারছেনা। অনিয়ন্ত্রিত বাজারে ঠকছে ভোক্তা আর পকেট ভারি করছে ব্যবসায়ীরা। দ্রুত বাজার তদারকি করে অসাধু এসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি সচেতন মহলের।
চৌগাছা বাজার বরাবরই ফল ব্যবসার জন্যে বিখ্যাত। ভারত সীমান্তের গা ঘেষে গড়ে ওঠা এই উপজেলাতে অতি সহজেই ভারতীয় সব ধরনের ফলের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানীকৃত নানা ধরনের ফল পাওয়া যায়। এছাড়া স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত ফলের সমাহার তো আছেই। মৌসুমী সব ধরনের ফল হাত বাড়ালেই এখানে পাওয়া যায়। কিন্তু চৌগাছা বাজারে বর্তমানে প্রতিটি ফলের গায়ে যেন আগুন লেগেছে। গত দু’মাস যাবত অস্থির ফলের বাজারের কারণে সাধারণ মানুষ এর স্বাদ নিতে ভুলে গেছে।
শুক্রবার চৌগাছার সাপ্তাহিক হাটের দিন, সংগত কারণে বাজারের নিয়মিত ফল ব্যবসায়ীসহ মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দোকানে ফলে ঠাসা। বাজারে কোনো ফলের কমতি ছিলনা, অথচ দাম আকাশ ছোঁয়া।
এদিন সকালে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জাতীয় ফল কাঁঠাল খুচরা বাজারে আকার ভেদে ৫০ টাকা হতে আড়াই শ টাকা দরে প্রতি পিচ বিক্রি হচ্ছে। পাকা কলা, আগে পিচ হিসেবে বিক্রি হলেও এখন তা দাঁড়ি পাল্লায় উঠেছে। ১ কেজি পাকা কলা ৩০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আম ৭০ থেকে দেড়শ টাকায় কেজিতে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ১ কেজি আশ্বিনে জাতের দাম ৭০, ফজলি ১২০, হাড়িভাঙ্গা ১২০ হতে দেড়শ টাকা কেজি।
আমদানিকৃত ফলের দাম শুনে অনেক ক্রেতার চোখ ছানাবড়া হয়ে যাচ্ছে। চৌগাছা বাজারে শুক্রবার ১ কেজি বেদেনা বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকায়। মাল্টা ২৬০, লটকন ১০০, লাল আঙ্গুর ৪৫০, ড্রাগন ২৫০ হতে ৩২০ টাকা কেজি, কমলালেবু ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। কিছু কিছু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে তাদের ইচ্ছামত দাম হাকিয়ে ফল বিক্রি করলেও ক্রেতা সাধারণের কিছুই করার ছিল না।
চৌগাছা ইসলামী ব্যাংকের সামনে ফল বিক্রি করছেন ৩ জন ব্যবসায়ী। তিন ব্যবসায়ীর নিকট একই ফল তিন দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এখানকার ব্যবসায়ী পাশ্ববর্তী ঝিকরগাছার গদখালির আইনুল ইসলাম। তিনি ১ কেজি ড্রাগন বিক্রি করছেন ৩০০ টাকায় অথচ ২০ হাত দূরে উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামের কফিল উদ্দিন সেই একই ড্রাগন বিক্রি করছেন আড়াইশ টাকা কেজিতে। সামান্য ব্যবধানের দুই ব্যবসায়ীর নিকট দু’রকমের দামে ফল বিক্রি হতে দেখে অনেকেই হতবাক। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী আইনুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর মেলেনি, তবে তিনি বলেন, সকালে বেশি দামে কিনেছেন তাই কিছু বেশি দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে। অপর ব্যবসায়ী কফিল উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার কেনা ছিল ড্রাগন তাই আড়াই শ টাকায় বিক্রি করতে পারলাম। এ ধরনের নানা অজুহাতে ফল ব্যবসায়ীরা মনের ইচ্ছামত দাম হাঁকিয়ে চলেছে।
ফল কিনতে আসা বেলেমাঠ গ্রামের ভ্যান চালক জাকির হোসেন বলেন, তার সন্তানটি বেশ কয়েক দিন জ্বরে ভুগছে। ওর জন্যে একটি মাল্টা কিনতে গেলে ১টি মাল্টা ওজন করে দোকানি জানালো ৫৪ টাকা দাম, না কিনেই চলে আসতে হলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্বল্প বেতনের চাকরিজীবী পরিবারের জন্য ১ কেজি ড্রাগন কিনতে বাজারে এসেছেন। দু’সপ্তাহ আগেও ১৮০ টাকায় যে ড্রাগন কিনেছেন শুক্রবার সেই ড্রাগন তাকে ৩শ টাকা কেজি কিনতে হয়েছে। আমদানী কম তাই দাম বেশি বলে বিক্রেতারা তাকে জানান।
ফল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম, ইয়াছিন আলী বলেন, আমাদনীকৃত সব ধরনের ফলের দাম হুহু করে বাড়ছে। আজ যে ফল ৫ টাকায় কিনছি কাল তা ১০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যখন যে দামে ফল কিনতে পারি তার চেয়ে কিছু বেশি দরে বিক্রি করি তবে গলাকাটা ব্যবসা করিনা।
অস্থির ফলের বাজারসহ সকল ধরনের নিত্যপণ্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার জন্য বেশি বেশি বাজার তদারকির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ উপজেলার সচেতন মহল।