দিনে-রাতে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক বিপর্যয়ে নাকাল মানুষ

0

আকরামুজ্জামান ॥ চাহিদার অর্ধেকও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না যশোর অঞ্চলের গ্রাহকরা। দিনে-রাতে বিদ্যুতের এ অস্বাভাবিক বিপর্যয়ে নাকাল সাধারণ মানুষ। ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিসগুলোতে নানাভাবে যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। পরিস্থিতিতে বিব্রত হয়ে পড়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিষয়টি নিয়ে তারাও বেশ চিন্তায় আছেন।
যশোর ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- ১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, তাদের অধীনে যশোর পৌরসভা-ক্যান্টনমেন্ট এলাকাসহ আশপাশের আরও কয়েকটি অংশ মিলে এই মুহূর্তে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৫৫ মেগাওয়াট। অথচ গতকাল সোমবার দিনের বেলায় সেখানে পাওয়া গেছে ২৭ থেকে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। প্রাপ্ত ২৭/৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ৬ মেগাওয়াট সর্বক্ষণ যশোর সেনানিবাস ও এয়ারবেসে দিতে হয়। যে কারণে এর বড় একটি চাপ চলে আসছে বাকি অংশে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের এ বিশাল ঘাটতির কারণে তারাও বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। গ্রাহক পর্যায় থেকে প্রতিনিয়ত অফিসে ফোন দিয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কোনকিছু করার নেই বলে তিনি জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ অবস্থা গোটা দেশের। এটি তাদের মধ্যে শুধু সীমাবদ্ধ নয়। ফুয়েল ও গ্যাসের সঙ্কটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। আর এ কারণেই ঘাটতি বিদ্যুৎ পাচ্ছেন তারা। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিদ্যুতের এই বেহাল পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো। তারা সারা দিনে গ্রাহকদের ১/২ ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ দিতে পারছে না।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর এজিএম কাজী রমজান আলী বলেন, তাদের স্টেশনের আওতায় এই মুহূর্তে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৮২ মেগাওয়াট। সেখানে সোমবার পাওয়া গেছে মাত্র ৩৫ মেগাওয়াট। তিনি বলেন, বিদ্যুতের এ ঘাটতির কারণে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছে স্ব স্ব এলাকার মানুষ। তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানে তাদের কিছুই করার নেই। যতক্ষণ না পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়বে ততক্ষণ এ পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে হবে। একই কথা বলেন যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর এজিএম (সদর দপ্তর) মো. আবু হেনা শফিক কামাল। তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ সবচেয়ে বড় একটি এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়ে আসছে। এর মধ্যে যশোর জেলার বড় একটি অংশের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলা নড়াইল ও খুলনার ফুলতলা উপজেলা রয়েছে। এই বিশাল এলাকায় এই মুহূর্তে তাদের বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১০৪ মেগাওয়াট। অথচ বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৭০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে যশোরের ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিপরীতে ১২ মেগাওয়াট, নড়াইলের ৩৮ মেগাওয়াটের বিপরীতে ৩২ মেগাওয়াট ও শিল্পশহর নওয়াপাড়ার ৫০ মেগাওয়াটের বিপরীতে ২৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের এই বিপুল ঘাটতির কারণে বেশি সমস্যায় পড়ছে শিল্পাঞ্চলের কলকারখানাগুলো। বিশেষ করে নওয়াপাড়া অঞ্চলে বেশি সমস্যা-সঙ্কট দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এই পরিস্থিতির কখন উন্নতি হবে তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে সংশ্লিষ্ট মহল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
এদিকে বিদ্যুতের এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণে যশোরাঞ্চলে মানুষ শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এ অঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ উর্ধ্বমুখি। যে কারণে তীব্র গরম পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে দিনে রাতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়াতে মানুষের কষ্ট বেড়ে গেছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি সমস্যায় পড়েছেন।