মুসলমান ব্যবসায়ীর কলা কিনে চাপের মুখে মন্দির কর্তৃপক্ষ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কর্নাটকের মেঙ্গালুরুর উপকণ্ঠে অবস্থিত অনন্তপদ্মনাভ মন্দির। সম্প্রতি এ মন্দিরের কলা সরবরাহ নিয়ে চাপের মুখে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। উগ্রপন্থীদের অভিযোগ, হিন্দু মন্দিরের জন্য মুসলমান ব্যবসায়ী থেকে কেন কলা কেনা হচ্ছে?
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, গত বছর মন্দির কর্তৃপক্ষ কলা সরবরাহের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করেছিল। সেই সূত্রেই এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কলা সরবরাহের দায়িত্ব পান এক মুসলমান ব্যবসায়ী।
সম্প্রতি চাউর হয়, কলা সরবরাহকারী একজন মুসলিম ব্যবসায়ী। এই নিয়ে প্রতিবাদে নামে কয়েকটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। এখন মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, চলতি মাসে চুক্তি শেষ হলেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে!
তারা আরও বলছে, কলা সরবরাহের জন্য চার ব্যবসায়ী আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্যে ওই মুসলিম ব্যবসায়ীই সবচেয়ে কম দামে কলা সরবরাহের আশ্বাস দেন।
মন্দির কর্তৃপক্ষের আশ্বাস পেয়ে আপাতত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উগ্রপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলো।
তবে এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে কি না, সেই নিয়েও শুরু হয়েছে আলোচনা।
বিরোধীদের বক্তব্য, আগামী বছর কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ধর্মীয় বিভাজনের মাধ্যমে মেরুকরণের উদ্দেশ্যেই কলা সরবরাহ নিয়ে হইচই করা হচ্ছে।
তাদের বক্তব্য, প্রায় এক বছর ধরে মন্দিরে কলা সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছেন ওই মুসলিম ব্যবসায়ী। ঠিক চুক্তি শেষের সময়েই কেন এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে? এর পাশাপাশি অনেকের বক্তব্য, মন্দির কর্তৃপক্ষ যেখানে আপত্তি করছেন না, সেখানে কয়েকটি সংগঠন কেন আপত্তি জানিয়ে এত নড়েচড়ে বসল? এমন হলে ভিন্ন ধর্মের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে সমস্ত জিনিস ব্যবহার করা প্রয়োজন। তা করা কি আদৌ সম্ভব?
এর পাশাপাশিই অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটের সময়ে শিক্ষাঙ্গনে হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, ভোট মিটতেই থিতিয়ে গেছে সেই বিতর্কও।
বিরোধীদের অভিযোগ, কর্নাটকেই দুর্নীতি আকাশছোঁয়া। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, রাজ্য সরকারের এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ৪০ শতাংশ কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পরে সেই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। অথচ তার যথাযথ তদন্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সফরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৬ কোটি টাকার রাস্তা খারাপ হয়ে গেলেও তা নিয়ে কারও ভ্রূক্ষেপ নেই। অথচ মন্দিরে কলা বিক্রি নিয়ে প্রতিবাদ করা হচ্ছে।
কংগ্রেস নেতারা এই বিতর্কের ঘটনায় সরাসরি সরকারি মদতের অভিযোগ তুলেছেন। তাদের বক্তব্য, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সরকারি মদত পাচ্ছে বলেই মাথাচাড়া দিচ্ছে। অগ্নিপথের মতো প্রকল্পের প্রতিবাদে যখন দেশ উত্তাল, মূল্যবৃদ্ধির জেরে নাকাল সাধারণ নাগরিক সেই সময়ে ইচ্ছাকৃত ভাবেই উন্নয়নের বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে ধর্মীয় বিতর্ককে মদত দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি কর্নাটকের উদুপি, দক্ষিণ কন্নড় এবং শিবমোগার বেশ কিছু জায়গায় মন্দিরের বাইরে পোস্টারে লেখা ছিল, হিন্দু উৎসবের সময়ে মন্দিরের বাইরের মেলায় দোকান মুসলমানরা দোকান দিতে পারবেন না।