ঝিনাইদহ হাসপাতালের কাপড় ধোলাই করে কনস্ট্রাকশন ফার্ম!

0

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ ॥ দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে ঝিনাইদহ আড়াই’শ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কাপড় ধোলাইয়ের কাজ দেওয়া হয়েছে একটি কনস্ট্রাকশন ফার্মকে। এ নিয়ে রোগীদের পাশাপাশি দায়িত্বরত নার্সরা চরম বিপাকে পড়েছেন। হাসপাতালের ময়লা বেডসিট ও বালিশের কভার পরিস্কার করে যথসময়ে সরবরাহ করতে পারছেন না ঠিকাদার। অনেক সময় ময়লা বিছানায় রোগীরা রাত যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। শিশু ওয়ার্ডের বেশিরভাগ বিছানায় চাদরের দেখা মেলেনি। সময়মতো পরিস্কার কাপড়চোপড় সরবরাহ করতে না পারায় বিক্ষুদ্ধ হয়ে রোগী ও তার স্বজনরা নার্সদের প্রতি চড়াও হচ্ছেন। নিরুপায় হয়ে ১০ ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জরা বিষয়টি তত্ত্বাবধায়ককে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। কিন্তু তারপরও কোন প্রতিকার নেই। নার্সরা জানিয়েছেন, ঠিকাদারের লোকজন রাতের আঁধারে ময়লা কাপড় নিয়ে যান, আবার রাতের আঁধারেই আধাপরিস্কার কাপড় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রেখে যাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যাদের অভিজ্ঞতা বিল্ডিং তৈরি করাসহ নানা প্রকৌশলী যন্ত্রপাতি নাড়াচাড়া করা, সেই তাদের হাতেই সোপর্দ করা হয়েছে হাসপাতালের রোগীদের ময়লা বেডসিট, অপারেশনের গাউন ও বালিশের কভারসহ ২০ আইটেমের কাপড় ধোলাইয়ের কাজ। ফলে রোগীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তত্ত্ব¡াবধায়কের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, টেন্ডারের মাধ্যমে গত পহেলা এপ্রিল থেকে হাসপাতালের ময়লা কাপড় ধোলাইয়ের কাজ শুরু করেন ঝিনাইদহ শহরের মাওলানা ভাসানী সড়কের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম আর ট্রেডিংয়ের মালিক মো. মহিবুল্লাহ। তাকে দরপত্রের ৯ নম্বর শর্ত ভঙ্গ করে কাজ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ৯ নম্বর শর্তে উল্লেখ আছে, ময়লা কাপড় ধোলাইয়ের ক্ষেত্রে দরপত্রদাতার নিজস্ব লন্ড্রির ব্যবসা থাকতে হবে। ঠিকাদার মহিবুল্লার ঘরে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে কোন লন্ড্রির চিহ্ন নেই। ঝিনাইদহ শহরের নয়ন আবাসিক হোটেলের নিচে তার ঠিকাদারি ফার্ম। এদিকে ঠিকাদারি কাজ পাওয়ার পর থেকেই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে হাসপাতালে শোরগোল ওঠে। হাসপাতালের সিলযুক্ত বেডসিট পাল্টিয়ে ছেঁড়া ফাটা বেডসিট সরবরাহ করা, ময়লাযুক্ত বেডসিটই আবার পরিস্কার দেখিয়ে সরবরাহ করে নার্সদের বিপদে ফেলে দিচ্ছেন ঠিকাদার। আবার তিনদিন পর পর ময়লা কাপড় ধোলাই করার নিয়ম থাকলেও তা করা হচ্ছে না। জানা গেছে, ঠিকাদার মহিবুল্লাহ নিজে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঠিকাদারি কাজ করে বেড়ান। তিনি হাসপাতালের ময়লা কাপড় ধোলাইয়ের কাজ করেন না, লোক দিয়ে করান। তার লাইসেন্সে জনৈক ব্যক্তি কাপড় ধোলাইয়ের কাজ করেন। অর্থাৎ হাত বদল হয়ে হ-য-ব-র-ল ভাবে চলছে ধোলাইয়ের কাজ।
মেল মেডিসিন ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জ ফাহমিদা খাতুন জানান, তারা ময়লা কাপড় নিয়ে চরম বিপদে আছেন। ঠিকাদার ঠিকমতো কাপড় ধুয়ে দিতে পারছেন না। এ নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা অতিষ্ঠ। তাছাড়া রোগীদের জীবনও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। একই কথা জানালেন শিশু ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জ রাজিয়া খাতুন। তিনি বলেন, হাসপাতালের সিলযুক্ত চাদর পাল্টে ছেঁড়া ও ফাটা চাদর সরবরাহ করা হয়েছে। সেই চাদর রেখে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেওয়া চাদর ঠিকমতো পাচ্ছি না। ঠিকাদার কাপড় নেওয়া ও সরবরাহ করার কোন নিয়মই মানছেন না। নার্স রাজিয়া খাতুন আরো বলেন, ময়লা কাপড়ের বিষয়ে ১০ ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জরা যৌথ স্বাক্ষর করে বিষয়টি তত্ত্বাবধায়ককে জানিয়েছেন। এদিকে শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে বেশিরভাগ বিছানায় চাদর নেই। ধোলাইয়ের জন্য নিয়ে তা আর ফেরৎ দেয়া হয়নি। শিশু ওয়ার্ডে ইন্টার্নি করা ম্যাটসের ছাত্র হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতি রোববার ও বুধবার ময়লা কাপড় নেওয়ার কথা। কিন্তু তারা নেয় না। আবার ৪০টি চাদর ময়লা হলেও সবগুলো নিয়ে যায় না। পরিস্কারের জন্য ২০টি নিয়ে যায় আর ময়লা চাদর ২০টি রেখে যায়। ফিমেল ওয়ার্ডে কর্মরত নার্স ও স্বেচ্ছাসেবী দেলোয়ারা খাতুন ও নুরুন্নাহার অভিযোগ করেন, চাদর ঠিকমতো পরিস্কার হচ্ছে না। রক্তমাখা বেডসিট পরিস্কার বলে চালিয়ে দিচ্ছে। এদিকে হাসপাতালের হিসাবরক্ষক ফেরদৌস হোসেন জানান, গত দুই মাসে ঠিকাদারকে প্রায় ৯৫ হাজার টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঠিকমতো ধোলাইয়ের কাজ না করার কারণে তারাও বেশ বিপদে আছেন। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নার্সরা তাদের কাছে অভিযোগ করছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা বেশ কঠোর। ঠিকাদারকে ইতিমধ্যে তিনবার শোকজ করা হয়েছে। হাসপাতালের ধোলাইয়ের কাজ নি¤œমানের হচ্ছে বলে নার্সরা তাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হতে পারে।
এ বিষয়ে ঠিকাদার মহিবুল্লাহ জানান, ‘আমি এ কাজ সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমার লাইসেন্স ব্যবহার করে এই কাজ করা হচ্ছে। আমি হাসপাতালের ধোলাই কাজের সঙ্গে জড়িত নই।’