মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্বামী-সন্তানের অপেক্ষায় এখনো দিন কাটে জোহুরার

0

এইচএম শফিউল ইসলাম ও সেলিম হায়দার,কপিলমুনি ও তালা ॥ স্বামী মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতে ট্রেনিং শেষে দেশে ফেরার পথে ধরা পড়েন পাক বাহিনীর হাতে। এরপর স্বামীর মৃত্যুর খবরে দেশে ফেরার পথে মেয়েকে ছিনিয়ে নেয় খান সেনারা। সাথে থাকা এক ভাই তার বোনকে উদ্ধারে খান সেনাদের পিছু নিলে তিনিও গুলিবিদ্ধ হন। এরপর কেটে গেছে ৫১ টি বছর। তবু ফিরে আসেন নি স্বামী কিংবা মেয়ে। তবুও অপেক্ষার পালা শেষ হয়নি বয়োবৃদ্ধা জোহুরা বেগমের।

স্বাধীনতার ৫১ বছরেও কেউ খোঁজ নেয়নি তার। খবর রাখেনি সরকার কিংবা মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের কেউ। জীবনের পড়ন্ত বেলায় কেবল শৈশব-কৈশোর কিংবা দাম্পত্য সর্বোপরী যুদ্ধকালীন লোমহর্ষক মর্মান্তিক বিভীষিকাময় দিনগুলোর স্মৃতি হাতড়ে সময় কাটে তার। সরকারের কাছে স্বীকৃতি চান স্বামী ও সন্তানহারা হতভাগা মা জোহুরা। যুদ্ধকালীন নির্মম বিয়োগান্তক ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী জোহুরা বেগমের করুণ আর্তি, জীবনের শেষ সময়ে স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চোখে দেখে যেতে চাই। কান্নামেশানো গলায় কথাগুলো বলছিলেন তিনি। যুদ্ধকালীন ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে খানিকটা বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিল তার।
১৯৭১ সাল। চারিদিকে শুরু হয়ে গেছে মুক্তিকামী মানুষের সাথে পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের তুমুল লড়াই। প্রান্তর জুড়ে প্রতিরোধ। গোটা দেশ যেন রণক্ষেত্র। বাড়ছে লাশের মিছিল। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের মহন্দীর নিভৃত পল্লীর মৃত কাতার আলী সরদার ও গুলজান বিবির ছেলে এবং স্থানীয় ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুল সরদার। স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ট্রেনিং নিতে চলে যান ভারতে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার তালা থানার বীর মুক্তিযোদ্ধা অমলকান্তি ঘোষ জানান, তিনি ভারতের বসিরহাট পিপা ক্যাম্প থেকে বিহার-চাকুলিয়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে টেনিং নেন। তার র‌্যাঙ্ক ছিল এফএফ। তার মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং হেড কোয়ার্টার ছিল কল্যাণী। সেখান থেকে সেক্টর অনুযায়ী বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। তিনি মেজর জলিলের অধিনে ৯নং সেক্টরে যুুুুুুুুুুুুুুুুুুুদ্ধ করেন। অন্যদিকে আব্দুল সরদারসহ অন্যরা বসিরহাটের টাকী ক্যাম্প থেকে ট্রেনিং নিয়ে ৬/৭ জন বাংলাদেশে ফেরার পথে সাতক্ষীরার বিনেরপোতা এলাকায় পৌঁছালে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়েন।
আব্দুল সরদারের মেজ ছেলে আজগর সরদার জানান, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী তারা জানতে পারেন, অন্যদের সাথে তার পিতাকে পাকিস্তানি আর্মিরা ধরে নিয়ে যশোর ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের পর নির্মম নির্যাতন শেষে অন্যদের সাথে খুলনার গল্লামারী নিয়ে হত্যা করা হয়। তবে তখনো খবরটি তাদের কাছে পৌঁছায়নি।
আব্দুল সরদারের মেজ ছেলে ভানচালক আজগর সরদার বলেন, তিনি যুদ্ধ করেন নি,তবে গর্বের সাথে বীরের ছেলে বলে নিজেকে দাবি করেন।