‘সরকার পতনের পূর্ব মুহূর্তে অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে’ দেখে মনে হবে কর্মসূচি পুলিশের খুলনায় বিএনপির মঞ্চ দখল!

0

 

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা ॥ দেখে মনে হবে কর্মসূচিটা পুলিশের। মাঝারি আকৃতির মঞ্চের পুরোটাই দখল করে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ। সবার সামনে রয়েছেন খোদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)। অথচ মহানগরী খুলনার সদর থানা সংলগ্ন কে ডি ঘোষ রোডে বিএনপি অফিস সম্মুখস্থ ফুটপাথে মঞ্চ নির্মিত হয়েছিল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্র থেকে দেশব্যাপী তিনদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। তারই প্রথম দিন বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় খুলনা মহানগর বিএনপি কর্মসূচি পালনের সার্বিক প্রস্ততি গ্রহণ করে। মঞ্চ নির্মাণ, ব্যানার টানানো, মাইক স্থাপন, চেয়ার সেটিং সব কাজ শেষ। প্রখর রোদ থেকে কর্মীদের রক্ষা করতে টানানো হয়েছিল সামিয়ানা। বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল আসার প্রাক্কালে ওসির নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এসে বিএনপির মঞ্চ দখল করে নেয়। পৌনে ১১টার দিকে অতর্কিতে পুলিশ এসে তান্ডব শুরু করে। তারা বিএনপি নেতৃবৃন্দকে সরিয়ে দিয়ে মঞ্চের সম্পূর্ণ দখল নেয়। বিক্ষোভ কর্মসূচির প্যানা ছিঁড়ে ফেলে। ভেঙে দেয় মঞ্চ। খুলে ফেলে সামিয়ানা। কেড়ে নেয় মাইক্রোফোন। নেতাদের বসার চেয়ারগুলোও নিয়ে যায়। ওসির নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা বন্দুক উঁচিয়ে, বাঁশি ফুঁকে, লাঠি হাতে সমাবেশে আগত কর্মীদের দিকে তেড়ে যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে নগরীর ব্যস্ততম ও জনবহুল ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র বড় বাজার এলাকায়। বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড থেকে মিছিল আসতে থাকলে পুলিশ ছুটে গিয়ে তাদের বাধা দেয় এবং কর্মীদের আটক করা চেষ্টা করে। এ সময় আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দোকানপাট আতঙ্কে বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের মারমুখি আচরণে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন পথচারী, নারী শিশুরা। প্রাণভয়ে অনেকেই ছোটাছুটি করতে থাকেন।
বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা পুলিশ বিএনপির অফিসের নিচে ও আশপাশে অবস্থান নেয়। কর্মসূচি পালন করতে না পেরে বিএনপি নেতারা দুপুর পৌনে ১২টার দিকে দলীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন।
এ সময় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘গ্যাসসহ পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে এবং দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকি প্রদানের প্রতিবাদে আমরা কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলাম। এটি আমাদের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি। ইতোমধ্যে পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে অনুমতি নিয়েছি। বুধবার আমরা দলীয় কার্যালয়ে প্রস্ততি সভাও করি। সকাল থেকে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কোন পর্যায়েই পুলিশ প্রশাসন আমাদেরকে বাধা দেয়নি কিংবা কর্মসূচি পালন করা যাবে না বলেনি। যখন দলীয় নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছে সে সময় হঠাৎ করেই পুলিশ এসে রীতিমতো ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসূচি পন্ড করেছে।’ ক্ষোভের সাথে তিনি বলেন, ‘সরকারের সময় শেষ হয়ে এসেছে। পতনের পূর্ব মুহূর্তে তারা অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। দ্রব্যমূল্য এতোটাই বেড়েছে যে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। সরকারের লুটপাট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ব্যাংক দেউলিয়া। বিদেশ থেকে পণ্য কেনার মতো পর্য্প্তা ডলার এখন তহবিলে নেই। শ্রীলংকার মতো পরিণতি হতে চলেছে বাংলাদেশের। মানুষ আর এই সরকারের সাথে নেই। ইনশা আল্লাহ দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশনায় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সংগ্রামে আমাদের বিজয় অর্জন হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারামুক্ত হবেন এবং দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে।’
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, ‘আমাদের পূর্ব অনুমোদিত কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। আমরা সংঘাত এড়াতে চেয়েছি। এই সরকার পুলিশ দিয়ে টিকে থাকতে চায়। ভবিষ্যতে আমরা আর পুলিশের অনুমতির অপেক্ষায় থাকবো না। রাজপথে মোকাবেলা করবো।’
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন কাজী মো. রাশেদ, স. ম আব্দুর রহমান, কাজী মাহমুদ আলী, আজিজুল হাসান দুলু, শের আলম সান্টু, আবুল কালাম জিয়া, বদরুল আনাম খান, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, একরামুল হক হেলাল, মাসুদ পারভেজ বাবু, শেখ সাদী, চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজ, শেখ জাহিদুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, হাফিজুর রহমান মনি, ওয়াহিদুর রহমান দীপু, বেগ তানভিরুল আযম, শাহিনুল ইসলাম পাখী, রোবায়েত হোসেন বাবু, মুর্শিদ কামাল, কে এম হুমায়ুন কবির, বিপ্লবুর রহমান কুদ্দুস, সাজ্জাদ হোসেন তোতন, সৈয়দ সাজ্জাদ আহসান পরাগ, কাজী মিজানুর রহমান, এহতেশামুল হক শাওন, নাজির উদ্দিন আহমেদ নান্নু, শেখ ইমাম হোসেন, হাবিব বিশ^াস, হাসান উল্লাহ বুলবুল, শেখ জামালউদ্দিন, আবু সাঈদ হাওলাদার আব্বাস, আফসারউদ্দিন, মোল্লা ফরিদ আহমেদ, আনসার আলী, নাসির খান, আব্দুস সালাম, আলমগীর হোসেন, কাজী শাহনেওয়াজ নীরু, তারিকুল ইসলাম, খন্দকার হাসিনুল ইসলাম নিক, মো. জাহিদ হোসেন, মিজানুর রহমান মিলটন, শফিকুল ইসলাম শফি, আক্কাজ আলী, ফারুক হোসেন, আজিজা খানম এলিজা, মাসুদ খান বাদল, জাসাসের মহানগর আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার নুর ইসলাম বাচ্চু, মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কানিজ ফাতেমা আমিন, যুবদলের আব্দুল আজিজ সুমন, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সজীব তালুকদার প্রমুখ।
এদিকে পুলিশের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হেলাতলার মোড় থেকে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি স্টেশন রোডের মোড়, হেরাজ মার্কেট, সোহরাওয়ার্দী মার্কেট, নিক্সন মার্কেট ক্লে রোড এলাকা ঘুরে ডাকবাংলো মোড়ে শেষ হয়। মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শেখ সাদী ও হাসানুর রশিদ মিরাজ, সদস্য খন্দকার হাসিনুল ইসলাম নিক, ছাত্রদলের ইসতিয়াক আহমেদ ইস্তি ও তাজিম বিশ^াস, যুবদলের আব্দুল আজিজ সুমন, মাহমুদ হাসান বিপ্লব, স্বেচ্ছাসেবক দলের খায়রুজ্জামান সজীবের নেতৃত্বে মিছিলে বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী অংশ নেন।