বাগেরহাট-পিরোজপুর জেলার সীমানা বিরোধে উত্তেজনা, পুলিশ মোতায়েন

0

 

বাগেরহাট সংবাদদাতা ॥ বাগেরহাট ও পিরোজপুর জেলার সীমান্তবর্তী কালীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন চরবানিয়ারি ও উমাজুড়ি এলাকার সীমানা নির্ধারণ নিয়ে দুই এলাকার মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে । আজ বুধবার সকালে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সন্তোষপুর ও পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের কয়েক’শ লোক সীমানার দুই পাড়ে অবস্থান নেয়। মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের লোকজনের দখলের হুমকি প্রতিরোধ করতে সন্তোষপুরের লোকেরা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। দুই পক্ষের সংঘর্ষ এড়াতে ঘটনাস্থলের সীমানার দুই প্রান্তে নাজিরপুর ও চিতলমারী থানা পুলিশের দুটি দল অবস্থান করছে।
সন্তোষপুর ইউনিয়নের উমাজুড়ি এলাকার লোকজনের অভিযোগ, দীর্ঘ ৩০-৩৫ বছর বলেশ্বর নদীর পাড়ে উমাজুড়ি ও চরবানিয়ারি মৌজায় তারা বসবাস করে আসছেন। কিন্তু জেলার সীমানা জটিলতার অজুহাতে নাজিরপুর উপজেলার কিছু প্রভাবশালী লোক উমাজুরি ও চরবানিয়ারি এলাকার শতাধিক পরিবারকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করে আসছে। মাটিভাঙ্গা এলাকার লোকদের হুমকিতে কিছুদিন ধরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে উমাজুড়ি ও চরবানিয়ারি এলাকার লোকজন।
সন্তোষপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর (উমাজুড়ি) ওয়ার্ডের সদস্য আবু বকর শেখ বলেন, চিতলমারী উপজেলার কালিগঞ্জ ব্রিজের উত্তরপারে চরবানিয়ারি ও উমাজুড়ি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাট জেলার শতাধিক পরিবার বসবাস করে আসছে। কিন্তু সীমানা নিয়ে নাজিরপুর এলাকার লোকদের সাথে বিরোধ রয়েছে। এজন্য তারা বারবার ওপর হামলা করে। ১৯৯৫ সালে এক’শ ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। পরবর্তীতে আরও কয়েকবার হামলা করেছে তারা। এসব বিরোধ নিরসনে একাধিকবার দুই জেলা ও উপজেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মেপে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবার সম্মতিতে চরবানিয়ারি মৌজায় মুজিবর রহমান শামীমের ইটভাটার মাজখানে সীমানা পিলার দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী সবাই যে যার সীমানায় ভোগ দখল করে আসছিল। কিন্তু জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের একটি আদেশের প্রেক্ষিতে গত ১ জুন একটি সার্ভে টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। নাজিরপুর এলাকার প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে তারা জমি পরিমাপ করে চিতলমারী উপজেলাধীন ১৭ নম্বর উমাজুড়ি মৌজার মাঝে সীমানা পিলার স্থাপন করে যান। যা অত্যন্ত অন্যায়। জরিপ টিম যে সীমানা পিলার স্থাপন করেছে, তাতে উমাজুড়ি এলাকার অন্তত ৭০টি পরিবার নাজিরপুর এলাকার মধ্যে পড়েছে। এই সীমানা পিলার স্থাপনের পর থেকে নাজিরপুর এলাকার বাবুল ও কেরামতসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ওই ৭০টি পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছে। রাতে এসে ঘর-বাড়িতে হামলাও করছে নাজিরপুরের লোকজন। তিনি বলেন, এভাবে ঘরে আগুন দেওয়া, হামলা ভয়ভীতি কোন সমাধান হতে পারে না। দুই জেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বসে সীমানা নির্ধারণ করে দিলে সমস্যার সমাধান হয়। তাতে এলাকার লোকজন শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
স্থানীয় বাসিন্দা রহমত বাওয়ালী বলেন, ‘নাজিরপুর এলাকার লোকজন আগে একবার আমাদের এলাকার এক’শ ঘর পুড়িয়েছে। বছর দুয়েক আগে চারটি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল তারা। আমরা ৩০ থেকে ৩৫ বছর এখানে বসবাস করে আসছি। এই স্থানের জমির রেকর্ডসহ সকল কাগজপত্র আমাদের নামে। তারপরও নাজিরপুর এলাকার লোকজন এসে আমাদের ওপর অত্যাচার করছে। আমরা কোথায় যাব?’ ফিরোজা বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে নাজিরপুর এলাকার বাবুল ও কেরামতের নেতৃত্বে কিছু লোক উমাজুড়ি এসে রাতের আঁধারে ঘরবাড়ির ওপর ঢিল ছুড়ছে, ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এলাকা ছেড়ে না গেলে মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছে তারা। আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই। এধরণের হানাহানি আমরা চাই না।’ এজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই নারী। শুধু তারা নন, স্থানীয় মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল মালেক, মোশারেফ গাজী, বিমল রায়, উষা রানী রায়, রুপিয়া বেগম, কামারুন আক্তার, মজিবুর রহমান মোল্লাসহ সন্তোষপুর ইউনিয়নের শত শত মানুষের বক্তব্য একই।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘সীমানা বিরোধ নিয়ে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি। উভয় উপজেলার লোকদের শান্ত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।’ বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘সীমানা বিরোধ নিয়ে উত্তেজনার খবরে দুই উপজেলার সীমানায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বিভাগীয় কমিশনারকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ এছাড়া সীমানা যেখানেই হোক জমির মালিকানা একই থাকবে বলেও জানান জেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।