হারানো যৌবন ফিরে পেতে কবিরাজের পরামর্শে পুরুষাঙ্গ কেটে কৃষানকে হত্যা

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরপর দুটি নারীকে বিয়ে করেছিলেন লিটন মালিথা (৪০)। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতার কারণে দুই স্ত্রীই তাকে ছেড়ে চলে যান। এরপর শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি ও চির যৌবন পাওয়ার আশায় বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন তান্ত্রিক কবিরাজের পরামর্শে বৃদ্ধ নকিম উদ্দিনকে খুন করেন লিটন মালিথা। হত্যার পর পুরুষাঙ্গ, অণ্ডকোষ ও চোখের মনি নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। ক্লুলেস এই মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে ডিবি পুলিশ। এরপর তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে হত্যার সাথে জড়িত লিটন মালিথা প্রথম এবং পরে তার হুকুমদাতা তান্ত্রিক কবিরাজ আব্দুল বারেককে (৬৩) আটক করে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার সকালে যশোর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। বাঘারপাড়া উপজেলার পশ্চিম পাইকপাড়ার চাঞ্চল্যকর নকিম উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন বিষয়ে এই প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
ডিবি পুলিশের হাতে আটক লিটন মালিথা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোহাম্মদ জামা গ্রামের মৃত হানিফ আলী মালিথা ছেলে এবং আব্দুল বারেক দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুর গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, বাঘারপাড়া উপজেলার ধুমখালী গ্রামের বাসিন্দা নকিম উদ্দিন পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গত ২৬ মে কৃষানের কাজ করার জন্য ছাতিয়ানতলা বাজারে যান। এ সময় তাকেসহ ৩ জনকে কাজ করানো জন্য নিজ বাড়িতে নিয়ে যান পশ্চিম পাইকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বেনজির আহমেদ। সেখানে ২ দিন কাজ করার পর একজন সেখান থেকে চলে যান। এরপর ৩০ মে সকাল ৬টার দিকে বেনজির আহমেদ একটি ঘরে থাকা কৃষানদের ডাকতে যান। ডাকাডাকি করে কারো কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি দরজা খুলে ঘরের ভেতরে যান। এ সময় সেখানে নকিম উদ্দিনের মৃতদেহ খাটের ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। কিন্তু অপর কৃষানকে কোথাও খুঁজে পাননি। এ খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। সুরতহাল তৈর করতে গিয়ে পুলিশ দেখতে পায় নিহত বৃদ্ধের চোখের মনি, পুরুষাঙ্গ এবং অণ্ডকোষ নেই। পরে হত্যার ঘটনায় নিহতের ছেলে মাজহারুল ইসলাম অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে বাঘারাপাড়া থানায় মামলা করলে রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের ধরতে মাঠে নামে ডিবি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইনসপেক্টর মো. শহিদুল ইসলাম ও তার সঙ্গী এসআই মফিজুল ইসলাম তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে পলাতক থাকা অজ্ঞাতনামা ওই কৃষানকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান। এক পর্যায়ে নিশ্চিত হওয়ার পর গত বুধবার দুপুরে কৃষকের ছদ্মবেশে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার চর ঘিওর মাঠে অভিযান চালান। সেখানে মাঠে কাজ করছিলেন অজ্ঞাতনামা ওই কৃষান। তাকে সেখান থেকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে তার নাম ঠিকানা জানতে পারেন। এ সময় তার স্বীকারোক্তিতে মাঠে থাকা বিচালীর গাদার ভেতর লুকিয়ে রাখা কর্তন করা পুরুষাঙ্গ, অণ্ডকোষ ও চোখের মনি উদ্ধার করা হয়। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন গভীর রাতে দামুড়হুদার লোকনাথপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে তান্ত্রিক কবিরাজ আব্দুল বারেককে আটক করা হয়। তান্ত্রিক কবিরাজের আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন কবিরাজি সরঞ্জাম।
লিটন মালিথাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তান্ত্রিক কবিরাজ আব্দুল বারেকের পরামর্শে ও হুকুমে বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন লিটন মালিথা শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি ও চির যৌবন পাওয়ার নেশায় মানুষ হত্যাপূর্বক পুরুষাঙ্গ,অণ্ডকোষ ও চোখের মনি সংগ্রহের চেষ্টা করতে থাকেন। এ জন্য দেশের অনেক স্থানে গিয়েছেন এবং বিভিন্ন ব্যক্তিতে টার্গেট করে হত্যার চেষ্টা করেন উল্লিখিত অঙ্গ নেওয়ার জন্য। কিন্তু সফল হননি। এক পর্যায়ে যশোরের বাঘারপাড়ায় এসে সফল হন। ঘটনার দিন রাতে মোবাইল ফোনে তান্ত্রিক কবিরাজ আব্দুল বারেকের সাথে যোগাযোগ করে তারই হুকুমে রশি দিয়ে নকিম উদ্দিনকে রশি গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর পুরুষাঙ্গ, অণ্ডকোষ ও চোখের মনি চাকু দিয়ে কেটে নিয়ে যান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইনসপেক্টর মো. শহিদুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে আসামিদের যশোরের আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক পলাশ কুমার দালাল তাদের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ।