মৌসুম শেষ হতে চলেছে, জমেনি  চাঁচড়ার মাছের রেনু ও পোনা বাজার

0

আকরামুজ্জামান ॥ মৌসুম শেষ হতে চললেও এখনও জমে ওঠেনি যশোরের মৎস্যপল্লী চাঁচড়ার রেণু ও পোনার বাজার। মাছ চাষের ভরা মৌসুমেও ক্রেতার অভাবে বাজারে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুর-খালবিলে পর্যাপ্ত পানির অভাবে রেণু ও পোনা বিক্রিতে ধস নেমেছে। অন্যদিকে মাছের খাবার ও বিদ্যুতের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে হ্যাচারি মালিক ও ক্ষুদ্র মাছ চাষিরা।
এমনিতে পর পর গত দুই বছর পোনা উৎপাদনের ভরা মৌসুমে বৈশি^ক করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রচ- ক্ষতির মুখে পড়েন এ অঞ্চলের মাছ চাষিরা। মহামারি করোনার ভয়াবহতার কারণে মাছ উৎপাদন ও বিক্রি কার্যত থমকে যায়। বেকার হয়ে পড়েন হাজার হাজার মাছ চাষি। বন্ধ হয়ে যায় জেলার অনেক হ্যাচারি। এ বছর করোনা পরিস্থিতি কিছুটা কম হওয়ার পর হ্যাচারি মালিক ও মাছ চাষিরা আবারো পুরোদমে মাছ চাষ শুরু করেন। কিন্তু এ বছর মাছের রেণু ও পোনা বিক্রির উপযুক্ত সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না পাওয়ায় এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি মাছের রেণু ও পোনা বিক্রি। এ অবস্থায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে মাছ চাষের সাথে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ। জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র যশোর জেলায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ সরাসরি মাছ চাষে নিয়োজিত। এ জেলায় ১৩ হাজার ৬২৬ হেক্টর জলায়তন বিশিষ্ট পুকুর রয়েছে। বাঁওড় রয়েছে ১৩ হাজার ৩৯১ হেক্টর। আর পুরো জেলাজুড়ে হ্যাচারির সংখ্যা ৫২টি। এসব খামারে বছরে রেণু উৎপাদন হয় ৫৪ হাজার ২০০ কেজি। যা থেকে পোনা উৎপাদন হয় প্রায় ৪৮ কোটি ৩৭ লাখ। কিন্তু এ বছর পানির অভাবে রেণু পোনা বা চারা মাছ বিক্রয়ে ধস নামায় এ বছর লাভতো দূরের কথা পূঁজিও রক্ষা করতে পারছেন না মাছ চাষিরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে মাছ চাষের রাজধানী হিসেবে খ্যাত যশোরে স্বাদু পানির মাছ উৎপাদন কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা হ্যাচারি মালিক ও মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ ফিরোজ খান বলেন, যশোরের মাছ চাষিদের চরম দুর্দিন যাচ্ছে এখন। একদিকে করোনার কারণে মাছের ব্যবসায়ে আমরা গত কয়েক বছর ধরে ক্ষতির মুখে রয়েছি। এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বড় প্রভাব পড়েছে এ খাতের ওপর। মাছের খাবারসহ আনুষঙ্গিক যাবতীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। অথচ মাছের রেণু ও পোনার দাম যেমন নেই তেমনি বিক্রিও নেই। তিনি বলেন, মার্চের মাঝামাঝি সময়ে রেণু ও পোনা বিক্রির ভরা মৌসুম হলেও এখনও পর্যন্ত আমাদের এখানে রেণু ও পোনা বিক্রি নেই বললে চলে। যা বিক্রি হচ্ছে তাও কম দামে। এতে আমরা পূঁজি রক্ষা করতে পারছি না।
প্রায় একই কথা বলেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান গোলদার। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির জন্য যশোরের মাছ চাষ বড় ধরনের ভূমিকা রেখে আসছে। প্রতি বছর এই সময়ে আমাদের বাজার ও হ্যাচারিগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। তবে এ বছর মৌসুম শেষ হতে চললেও এখনও পর্যন্ত পোনা ও রেণু বিক্রি করতে পারছি না আমরা। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যেসব চাষি আমাদের এখানে মাছের রেণু ও পোনা কিনতে আসেন তারা সবাই বৃষ্টির অপেক্ষায় আছে। বর্তমান যে বৃষ্টি হচ্ছে তা মোটেও পর্যাপ্ত না। ভারী বৃষ্টি না হলে ক্রেতারা আসবে না। এ অবস্থা বেশি বিলম্বিত হলে আমাদের পথে বসতে হবে বলে তিনি জানান।
সোমবার সকালে চাঁচড়ার বাবলাতলা মোড়ে পোনা বিক্রির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক খুচরা মাছ ব্যবসায়ী বিভিন্ন জাতের পোনা নিয়ে বসে আছেন। অন্যান্য দিনে বাজারটিতে ক্রেতাদের যেমন ভিড় থাকলেও গতকাল ছিলো ভিন্ন চিত্র। বাজারে কথা হয় মাছের পোনা বিক্রেতা রবিউল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে এই বাজারে পোনা বিক্রি করে আসছি। কিন্তু এ বছরের মতো খারাপ অবস্থা দেখিনি। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের অজুহাত দেখিয়ে মাছের ফিডের দাম বেড়ে গেছে। সাথে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাব। এসব মিলিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যে পাইকাররা এ বাজারে আসতো তারা এখনও পর্যন্ত সাড়া দিচ্ছে না। এতে করে আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছের পোনা বিক্রি করতে পারছি না। তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে মাছ চাষির সংখ্যা হতাশাজনক ভাবে কমে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।