ঝিকরগাছায় বৃষ্টির পানিতে মাঠে মাঠে ভাসছে কাটা ধান, ক্ষতির মুখে কৃষক

0

 

তরিকুল ইসলাম, ঝিকরগাছা (যশোর) ॥ যশোরের ঝিকরগাছায় বৃষ্টির পানিতে মাঠে মাঠে ভাসছে কৃষকের কাটা ধান। গত কয়েকদিনের বৃষ্টির পর গতকাল বুধবার সকালে রোদ্রোজ্জ¦ল দেখে কৃষকের চোখে মুখে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেলেও আবারো কয়েক দফা ভারী বৃষ্টি কৃষকের মাঝে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এদিন কয়েক দফা বৃষ্টির কারণে ধান গোছাতে ফের নাকাল হয়ে পড়েন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় অশনি’র সৃষ্ট ভারী বৃষ্টির আগে ঝিকরগাছা উপজেলার ৬৬ শতাংশ জমির বোরো ধান কাটা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ কৃষক তাদের ধান ঘরে তুলতে সক্ষম হন। বাকি ১২ শতাংশ ধান কাটা অবস্থায় মাঠেই রয়েছে। এছাড়া ৩৪ শতাংশ ধান কাটার অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের মতে, পৌর সদরসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১৭৯টি গ্রামের বড়, মাঝারী, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক মিলিয়ে সর্বমোট ৫৯ হাজার ১শ ৮৪টি কৃষক পরিবার রয়েছে।
এদিকে উপজেলার গঙ্গানন্দপুর, মাগুরা, শিমুলিয়া, গদখালী, পানিসারা, ঝিকরগাছা সদর, নাভারণ, নির্বাসখোলা, হাজিরবাগ, শংকরপুর ও বাঁকড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি দেওয়া তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি বোরো ধান মাঠে রয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে শংকরপুর ও বাঁকড়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী বিল কচুয়া, গঙ্গানন্দপুর ও শিমুলিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী বৃহৎ বিল বনমান্দার সংলগ্ন পাল্লা, রাজাপুর, আজমপুর, খাশখালী, শ্রীরামকাঠি, কাগমারি, বিশহরি, বালিয়া, শ্রীচন্দ্রপুর, গোয়ালহাটি, ব্যাঙদাহ, দোসতিনা, জামালপুর, মধুখালী, নির্বাসখোলা ইউনিয়নের বল্লা, কানারালী, সাদিপুর, নিশ্চিন্তপুর, ঝিকরগাছা সদর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর, সাগরপুর, লক্ষ্মীপুর, মল্লিকপুর, লাউজানী, কাশিপুর, পদ্মপুকুর, চাপাতলা, বেড়েলা, চন্দ্রপুর, মির্জাপুর, চন্দ্রপুর, ফারাসাতপুর, পায়রাডাঙ্গাসহ পৌর সদরের মোবারকপুর, কীর্তিপুরসহ অসংখ্য গ্রামের কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক বর্গাচাষির পরিবারের স্বপ্নভঙ্গের কারণ হয়েছে ঘূর্ণিঝড় অশনির সৃষ্ট ভারী বৃষ্টি। বহু কৃষক ধারদেনা করে স্বপ্নের বোরো ধান রোপণ করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ভারী বৃষ্টিতে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই কৃষকের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া শ্রমিক সঙ্কট প্রকট হলেও ধান বাঁচাতে নিজ নিজ ক্ষেতের ধান নারী-পুরুষ মিলে জমির আইল, রাস্তা অথবা আশপাশের কোন উঁচ ুস্থানে উঠাতে দিনভর কাজ করে যাচ্ছেন। উপজেলার ঝিকরগাছা সদর ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম দিনভর বৃষ্টি হলেও বুধবার তারা পরিবারের লোকজন মিলে এক বিঘা জমির পানিতে তলিয়ে থাকা কাটা ধান বাড়িতে নিয়ে ছাটাই করেছেন। তবে ২/১ দিনের মধ্যে রোদ না হলে উল্লিখিত ধান দুর্গন্ধসহ চারা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে কৃষক রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মাসুদ হোসেন পলাশ ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ঝিকরগাছা পৌরসভাসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১৭৯টি গ্রামে চলতি বছর ১৮ হাজার ৮ শ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছিল। বিগত বছরে ছিল ১৭ হাজার ৯ শ ৫০ হেক্টর জমি। চলতি বছরে এক হাজার হেক্টর জমিতে বেশি ধান চাষ করা হয়েছিল। এ বছর উৎপাদিত ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭১ হাজার ৬ শ ৩০ মেট্রিক টন। যার গড় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রতি হেক্টরে ৫ দশমিক ৮ মেট্রিক টন।