যশোরে নির্বিকার পরিবেশ অধিদপ্তর

0

তহীদ মনি ॥ যশোরে পরিবেশ দূষণের মহোৎসব চললেও নির্বিকার পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি কিংবা প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি নেই প্রতিষ্ঠানটির। তাদের ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।
যশোরের যত্রতত্র কলকারখানা গড়ে উঠেছে। আবাসিক এলাকাও বাদ যাচ্ছে না, বাজার বা রাস্তার পাশেও ছোট ও মাঝারি কারখানা গড়ে উঠছে। এদের ছাড়পত্র আছে কিনা, থাকলে কতটি ? তার কোন জবাব মেলেনি পরিবেশ অধিদপ্তরে।
জানা গেছে, সরকারি বিধান অনুযায়ি ছাড়পত্র ছাড়া কোনো কলকারখানা, এসিড ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান, ইটভাটাসহ পরিবেশের ভারসাম্যের জন্যে ক্ষতিকর প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে না বা অনুমোদন পায় না। অথচ, যশোর শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় নদীতে বর্জ্য ফেলে দূষণ করা হচ্ছে। ক্লিনিক ও হাসপাতালের ময়না আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদফতরের। এসব বিষয়ে কথা বলতে চাননি মো. সাঈদ আনোয়ার। এক পর্যায়ে তার কাছে পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়া কলকারখানার বিষয় জানতে চাইলে তিনি সরাসরি তা জানাতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে সংখ্যাটি দেয়া হবে, বিস্তারিত নয়।
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ওয়াল্ডের নির্বাহী পরিচালক ও পরিবেশকর্মী আশিক মাহমুদ সবুজ বলেন, পরিবেশ রক্ষায় যশোর পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকা- অপ্রতুল। তার মতে, যশোরে পরিবেশ অধিদফতর নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে কিন্তু তাদের কার্যক্রম দেখার সুযোগ হয়নি। নদী ধ্বংস করা হচ্ছে, কলকারখানার বর্জ্য পড়ছে, পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, বাজারের মধ্যে স্বর্ণের কাজ করার জন্যে এসিড ধোঁয়া হচ্ছে, সার্বিকভাবে পরিবেশ নষ্ট হলেও প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা চোখে পড়েনি।
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, নদী বাঁচাও আন্দোলনসহ অসংখ্য সামাজিক কাজের নেতৃত্ব দানকারী ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) এর সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ ক্ষোভের সঙ্গে যশোর পরিবেশ অধিফতরের বিস্তারিত ফিরিস্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নদী, খাল, বিল দখল হচ্ছে। বর্জ্য, আর আবর্জনার স্তুপ গড়ে উঠছে নদীর ভেতর। বড় বড় ভবন ও অট্টালিকা গড়ে উঠছে, কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে কলকারখানা বসানো হচ্ছে, জেলা পরিষদের নেতৃত্বে হাজার হাজার গাছ কাটা হলো এসব ক্ষেত্রে পরিবেশ রক্ষার চেয়ে টাকা কমানো জরুরি হয়ে উঠলো। কোনো কিছুরই প্রতিকার, প্রতিবাদ বা বন্ধের ব্যবস্থা যশোর পরিবেশ অধিদফতর করলো না। তিনি সকল প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিতে ঠাসা উল্লেখ করে বলেন, যে দেশে রাষ্ট্রীয় মদদে পরিবেশ বিনষ্টকারী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে ওঠে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হাওড়-বাওড়, নদী-খাল-বিল দখল হয়, সেখানে পরিবেশ অধিদফতর তো মওকা পেয়ে সুবিধা আদায় করবেই।
তিনি আরো বলেন, যশোর পরিবেশ অধিদফতরের কাজ কর্ম যশোরবাসীর কাছে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেনি। বরং এটি একটি অযোগ্য ও অথর্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
যশোর পরিবেশ অধিদফতর নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলনও। তার মতে, পরিবেশ অধিদফতর যথার্থভাবে কাজ করছে না। প্রতিষ্ঠানটির উপর রাষ্ট্র যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে আদৌও তা যশোরে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তিনি পাঁচবাড়িয়ায় গড়ে ওঠা ব্যাটারি কারখানার উদাহরণ দিয়ে বলেন, এসিডের ব্যবহার আশেপাশের মানুষের বসবাস করা দায় হয়ে উঠেছে। স্বর্ণপট্টিতে এসিডের কাজ হচ্ছে, যেখানে সেখানে ব্যাটারির কাজ হচ্ছে। নদীতে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, যত্রতত্র কারখানা গড়ে উঠছে। অবৈধ-ইটভাটা, গাছকাটাসহ পরিবেশ ধ্বংসকারী নানা কাজই হচ্ছে। অথচ, পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন দৃশ্যমান ভূমিকা নেই।
যশোরের পরিবেশ অধিদফতরের কার্যালয় শহরের কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে ডিআইজি সড়কে। কয়েকদফা সেখানে তথ্যের প্রয়োজনে যেতে হয়েছে। বেশিরভাগ সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দেখা মেলেনি। গত সপ্তাহে দেখা মেলে উপপরিচালক মো. সাঈদ আনোয়ারের।