পাম, সয়াবিন তেলের দাম আবার বাড়ছে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশের ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে সরকার দুই দফায় ৩০ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করলেও গত সপ্তাহ ধরে পাম ও সয়াবিন তেলের দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনো আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের বাজার চড়া। প্রতিদিনই অল্প অল্প করে দাম বাড়ছে। এ কারণে দেশের বাজারে পাম ও সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা বাড়ছে।
গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাম তেলের দাম মণপ্রতি বেড়েছে ৭৫০ টাকা এবং সয়াবিনের দাম মণপ্রতি বেড়েছে ৬৫০ টাকা।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহ আগে মণপ্রতি পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৫০ টাকায়। বর্তমানে ৭৫০ টাকা বেড়ে পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৮৫০ টাকায় এবং একই সময়ে মণপ্রতি সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৪০০ টাকায়, বর্তমানে মণপ্রতি ৬৫০ টাকা বেড়ে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৫০ টাকায়।
জানতে চাইলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোজ্যতেলের বাজার আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে সেই প্রভাব দেশের বাজারে পড়ে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দামের তুলনায় আমাদের দেশের বাজারের দাম এখনো কম আছে।
তিনি বলেন, জেনেছি আন্তর্জাতিক বাজার অস্থির হওয়ায় বর্তমানে অনেক ব্যবসায়ী আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। তাই বাজারে সরবরাহ সংকট হচ্ছে বলে আমার ধারণা।
খাতুনগঞ্জের একাধিক তেল ব্যবসায়ীরা জানান, যুগ যুগ ধরে খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে বেশ কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের আর্থিক সুবিধার জন্য অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবেও স্বীকৃত নয়। এর মধ্যে-অন্যতম ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) সিøপ ব্যবসা। তেল কিংবা অন্য কোনো পণ্যে ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আগাম লেনদেন হয়ে থাকে। বলা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই সিøপটিই বেচাকেনা হয়ে থাকে। কোনো ব্যবসায়ী বা কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, অনেক ব্যবসায়ী বা কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক। এর ফলে ওই কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে না।

তারা বলেন,এ ক্ষেত্রে দেশের পাইকারি বাজারের সর্বোচ্চ আড়ত খ্যাত খাতুনগঞ্জে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি হয়। এক কথায় এই ডিও কারসাজির কারণে মাঝে মাঝে পণ্যের দাম ক্রমশ বাড়তে থাকে। এই সুযোগে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। বাজারে ওই পণ্যটির দাম বেড়ে যায়।
তবে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, অন্যান্য বারের চেয়ে তেলের দাম এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে। মণপ্রতি কিছু কিছু বেড়েছে। তবে তা সামনে ঠিক হয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় দাম বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের দেয়া তথ্যমতে, রমজানকে সামনে রেখে এ বছর প্রচুর পরিমাণ ছোলা, ডাল, চিড়াসহ যাবতীয় ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে। পাইকারিতে বর্তমানে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ২৫ টাকা, চীনা রসুন ৯৫ টাকা, অস্ট্রেলিয়ান ছোলা কেজিতে ৬০ টাকা ও চিড়া ৪০ টাকা, মসুর ডাল কেজিপ্রতি ১১০ টাকা, সাদা মটর ৪২ টাকা, এলাচ ১ হাজার ৭শ টাকা, জিরা ৩৪০ টাকা, লবঙ্গ ২ হাজার ৩০ টাকা, দারুচিনি ২৯৫ টাকা, চীনা আদা ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।