হঠাৎ সঙ্কট সয়াবিন তেলের

0

 

আকরামুজ্জামান ॥ যশোরে ভোজ্য তেলের বাজারে হঠাৎ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিনে বাজারে ভোজ্য তেলের সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। বিশেষ করে দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে বাজারে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তারা অর্ডার দিয়েও চাহিদামতো তেলে পাচ্ছেন না। আবার কোনো কোনো ব্র্যান্ডের তেলের নতুন অর্ডার নেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে উর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার যশোরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দোকানেই পর্যাপ্ত সয়াবিন তেল নেই। দোকানিরা জানান, সয়াবিন তেল নেই। এক লিটার ও পাঁচ লিটারের বোতল কিছু থাকলেও দুই লিটারের কোনো সয়াবিন সরবরাহ করা হচ্ছে না। বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো চাহিদামতো সরবরাহ না করায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা দাবি করছেন।
যশোরের টিসিবি পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মাহফুজ ট্রেডিংয়ের স্বত্ত্বাধিকারী মাহফুজুর রহমান বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যশোরে টিসিবির পণ্য বিতরণ কর্মসূচি থাকায় খুচরা বাজারে এর তেমন কোনো প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। গত কয়েকদিন টিসিবি পণ্য বিতরণ বন্ধ থাকায় এখন বাজারে ভোজ্য তেলের একটা সংকট দেখা দিয়েছে। আমার কাছেও অনেক ব্যবসায়ী বলেছেন বাজারে পর্যাপ্ত ভোজ্য তেল নেই। তবে এর কারণ কী ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
মেসার্স হাসান ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী রবিউল হাসান। তিনি বলেন, কী কারণে বাজারে ভোজ্য তেল সরবরাহ কমে গেছে তা বুঝতে পারছি না। তবে এ বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। কারণ সামনে ঈদে র্পযাপ্ত ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে।
এদিকে যশোর শহরের বেশ কয়েকটি মেগাশপে গিয়েও দেখা গেছে সেখানে র্পযাপ্ত পরিমাণ তেল নেই। ক্রেতারা অতিরিক্ত তেল কিনতে চাইলেও তা দেয়া হচ্ছেনা। বিশেষ করে ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ হতদরিদ্রদের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে তেল দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও তা পাচ্ছেন না বলে কয়েকজন জানান।
এ বিষয়ে যশোর রেল রোডস্থ চারখাম্বা এলাকায় মেগাশপ স্পপ্নের স্টোর ম্যানেজার রাসেল আল মামুন বলেন, গত কয়েকদিন থেকে ভোজ্য তেলের মারাত্মক সংকটে রয়েছি। তিনি বলেন, আমরা ডিপোতে ৫ হাজার লিটার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের অর্ডার দিলেও দেয়া হচ্ছে মাত্র ১ হাজার লিটার। যেকারণে ক্রেতাদের কাছে আমরা বিব্রত হচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে গত দুই দিন ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ঈদে দুস্থদের জন্য খাদ্য সামগ্রীর অংশ হিসেবে তেল কেনার জন্য আসলেও তা দিতে পারছিনা। ঢাকা থেকে বলা হচ্ছে মিলগুলো থেকে তেলের সরবরাহ কম হওয়ায় এ পরিস্থিতি হচ্ছে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা সিনিয়র কৃষি বিপনণ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরাও চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছি। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার আমি ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যশোরের সহকারী পরিচালক যশোরের বেশ কয়েকজন পাইকার ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদেরকে বলেছেন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় মিল থেকে বেশি দামে তেল কিনতে হচ্ছে। এ কারণে কম তেল কিনে আনছেন তারা। এছাড়া মিল থেকেও পাইকার ব্যবসায়ীদের কাঙ্খিত তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না বলে তারা জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়টি কতটা সত্য তা আমরা যাচাই বাচাই করে দেখছি। তিনি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে কোনো চক্র তেলের বাজার অস্থির করার চেষ্টা করলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ যশোরের সহকারী পরিচালক মো. ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে যশোরে তেল কম আসছে। আমাদেরকে ব্যবসায়ীরা বলছেন তেলের সরবরাহ কম হওয়ায় তারা চাহিদামত পাচ্ছেন না। এ কারণে এ সংকট হচ্ছে। তবে এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কীনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি আমার উর্ধ্বতণ কতৃপক্ষকে জানিয়েছি।