যা ঘটেছে সিলেটের সাবেক মেয়র কামরানের বাসায়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের বাসায় হামলা নিয়ে সিলেটে চলছে উত্তেজনা। বুধবার রাত। তারাবিহ’র নামাজ চলছিল ছড়ারপাড়, মাছিমপুরের মসজিদে। এ সময় শুরু হয় সংঘর্ষ। এতে হামলা হয় সিলেটের সাবেক মেয়রের বাসা। ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করা হয় বাসা। গুলির শব্দও শোনা যায়। তখন বাসায় ছিলেন আসমা কামরান।
তিনি নামাজ পড়ছিলেন। হঠাৎ হামলায় তটস্থ হয়ে যান তিনি। বড় ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু ছিলেন নামাজে। হামলার পর কামরানের বাসায় ছুটে গেছেন সবাই। ভোররাত পর্যন্ত সিলেটের রাজনীতিবিদ সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটে যান। রাত ১০টার দিকে খবরটি ছড়ায় সিলেটে। তখনো এলাকায় উত্তেজনা। নগরের মাছিমপুর ও ছড়ারপাড়ের অবস্থান পাশাপাশি। কামরানেরই এলাকা। দুই পাড়ার শত্রুতারও কমতি নেই। প্রায়ই হয় সংঘর্ষ। জীবদ্দশায় কামরান দুই পাড়ার অনেক ঘটনা নিজেই সমাধান করে দিয়েছেন। দুই মহল্লার অভিভাবক হওয়ার কারণে তেমন বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কামরানকে মানতেন সবাই। কিন্তু কামরানের মৃত্যুর পর ফের ওই পাড়ার মানুষের মধ্যে তিক্ততা বাড়ছে। কামরানপুত্র সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু পিতার মতো দুই এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরে নানা বিষয় নিয়ে ছড়ারপাড় ও মাছিমপুরের মানুষের মধ্যে তিক্ততা বেড়েছে। আর সেই তিক্ততার বিস্ফোরণ ঘটেছে বুধবার। মোটরসাইকেল চালানোকে কেন্দ্র করে সোমবার ছড়ারপাড় ও মাছিমপুরের দুই তরুণের মধ্যে কথাকাটাকাটি এরপর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি জানাজানির পর দুই সিটি কাউন্সিলর আব্দুল মুমিন ও মোস্তাক আহমদ বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেন। মঙ্গলবার উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে তারা বিষয়টির সমাধানও করে দেন। এরপরও ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। এ ঘটনার জের ধরে বুধবার রাতে সাবেক মেয়র কামরানের বাসার পাশের ব্রিজের উপর ছড়ারপাড় ও মাছিমপুরের যুবকরা সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষকালে উভয়পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। কয়েকটি গুলির শব্দও শোনা যায়। সংঘর্ষের সময় একপক্ষ কামরানের বাসার সামনে অবস্থান নিলে ওই বাসাকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে কামরান সহ তার ভাইদের বাসার গ্লাস, গাড়ি, জানালা ভাঙচুর করা হয়। হামলার সময় বাসার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। ওই সময় বাসার ভেতরে থাকা মহিলা ও শিশুরা চিৎকার করতে থাকেন। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ফাঁকা গুলি ও লাঠিচার্জ চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। এদিকে সংঘর্ষের সময় স্থানীয় মসজিদে তারাবিহ’র নামাজে ছিলেন কামরানের বড় পুত্র ডা. আরমান আহমদ শিপলু সহ অন্যরা। সংঘর্ষের খবর পেয়ে স্থানীয় মুসল্লিরাও আসেন। ঘটনার পর কামরানের বাসায় হামলার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ- জীবদ্দশায় কামরান এলাকার মানুষের জন্য অনেক কিছু করে গেছেন। দুই মহল্লার মানুষকে নিয়ে মিলেমিশে চলেছেন। এখন তার বাসায় এক পক্ষের হামলার ঘটনা কেউ মেনে নিতে পারেননি। সংঘর্ষের ঘটনার পরপরই খবর পৌঁছে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে। তিনি ছুটে যান কামরানের বাসায়। খবর পেয়ে সেখানে যান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। এ ছাড়া, স্থানীয় ছড়ারপাড় ও মাছিমপুর এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এবং মুরুব্বিয়ানরা আসেন। এ সময় কামরানের ড্রয়িংরুমে বসে তারা কামরানপত্নী আসমা কামরান ও ছেলে ডা. শিপলু সহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলেন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বাসায় হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাবেক মেয়রের বাসায় হামলার বিষয়টি কেউ মেনে নিতে পারছেন না বলে জানান তিনি। তবে বিষয়টি নিয়ে তারা শিগগিরই বৈঠকে বসবেন বলে জানান। এ ছাড়া, আসাদউদ্দিন আহমদও ক্ষোভ জানান। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও নির্দেশ দেয়া হয় মেয়রের তরফ থেকে। ঘটনার পর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তরফ থেকে উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজবাহার শেখ ঘটনার পর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে রাবার বুলেট ছুটেছে। সংঘর্ষকালে গুলি বর্ষণের ঘটনা তাদের জানা নেই বলে জানান। ঘটনার পর তিনি কামরানপত্নী আসমা কামরান সহ বাসার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এদিকে- বাসায় হামলা হলেও এলাকার মানুষের সিদ্ধান্তের উপর মতামত ছেড়ে দিয়েছেন কামরানপুত্র ডা. শিপলু। তিনি এ ব্যাপারে আইনি উদ্যোগ নেননি। বরং দুই এলাকার মানুষের মধ্যে বিবদমান দ্বন্দ্ব মিটমাট করতে মেয়রের সহযোগিতায় সমঝোতার পথেই হাঁটছেন। গতকাল বিকালে ডা. শিপলু জানিয়েছেন, সমঝোতার মাধ্যমে আমরা ঘটনার শেষ করতে চাই। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। বরং চাওয়া হচ্ছে দুই এলাকার মানুষ যেন মিলেমিশে থাকেন। এ কারণে এলাকার মানুষের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তার পক্ষ থেকে মামলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে বলে জানান ডা. শিপলু। এদিকে রাতে কামরানের বাসামুখী ছিল নেতাকর্মীদের স্রোত। আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন সহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ কামরানের বাসা পরিদর্শন করেছেন।