একমাসেও ঠিক হয়নি বিমানবন্দরের স্ক্যানার, বিকল্প উপায়ে রফতানি শুরু

0

চৌধুরী আকবর হোসেন॥ প্রায় একমাস ধরে বিকল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রফতানি কার্গোর স্ক্যানার। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে আকাশপথে কৃষিপণ্য রফতানি বন্ধ ছিল। তবে নির্ধারিত স্ক্যানার ঠিক না হলেও অন্য স্ক্যানার ব্যবহার করে রফতানির অনুমিত দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ফলে ফের শুরু হয়েছে যুক্তরাজ্যে কৃষিপণ্য রফতানি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘ এই বিরতির কারণে বাজার পুনরুদ্ধার করা কঠিন হবে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বিকল্প স্ক্যানার ঠিক হতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নব নিযুক্ত নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, পুরনো দুটো স্ক্যানার যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেয়েছে। ইতোমধ্যে দুটো শিপমেন্ট গেছে। আর নষ্ট ইডিএসটা মেরামতের কাজ প্রক্রিয়াধীন ।
সূত্র জানায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন স্ক্যানার (ইডিএস) গত এক বছরে বারবার বিকল হয়েছে। প্রতিবারই বিকল হলে ঠিক হতে ১৫-২০ দিনের বেশি সময় লেগে যায়। কখনও কখনও একমাসও পার হয়। আর এতে লোকসান হয় ব্যবসায়ীদের। বারবার স্ক্যানার মেশিন নষ্ট হওয়ায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনিও সরেজমিনে সেখানকার অব্যবস্থাপনা দেখে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরে রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সে আরএথ্রি এলাকায় ইউরোপীয় দেশগুলোতে মালামাল পাঠানোর জন্য ৪টি এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিসটেম (ইডিএস) স্ক্যানার ও ২টি এক্স-রে স্ক্যানার আছে। যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি) দুটি ইডিএস ব্যবহারের অনুমোদিত। তবে দুটির মধ্যে একটি ইডিএসের এক বছর ধরেই বিকল হয়ে আছে। চালু থাকা একমাত্র ইডিএসটি মেশিন গত ৯ মার্চ বিকল হয়ে যায়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান বলেন, বিকল হওয়া স্ক্যানার মেশিনটি মেরামতের জন্য যন্ত্রাংশ প্রয়োজন। সেগুলো আসতে সময় প্রয়োজন হয়। এজন্য মেরামতে দীর্ঘ সময় লাগবে।
বাংলাদেশ ফুড ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সভাপতি এস এম এ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বুধবার থেকে স্ক্যানার চালু হয়েছে। এই ২৮ দিন পণ্য রফতানি বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকেই যুক্তরাজ্যে বাজার হারিয়েছেন। কিছু বাজার প্রতিবেশী দেশের হাতে চলে গেছে। সেটা পুনরুদ্ধার করা সহজ নয়। জানা গেছে, ইউরোপের দেশগুলোতে সরাসরি আকাশ পথে কার্গো পণ্য রফতানি করতে মানতে হবে ইউকে এভিয়েশন রেগুলেশন। তাদের অন্যতম শর্ত বিমানবন্দর থেকে শতভাগ পণ্য স্ক্যানিং করে পাঠানো। তবে বিমানবন্দর, স্ক্যানিং মেশিন, স্ক্যানিং মেশিন পরিচালনাকারী, ব্যবহার পদ্ধতি সামগ্রিক বিষয় হতে হবে ইউকে এভিয়েশন রেগুলেশনের মানদণ্ডে। এজন্য ইউরোপ ছাড়া অন্য দেশের বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সকে নিরাপত্তা বিষয়ে অডিট শেষে সনদ দেয় ইউকে। যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি) নিরাপত্তা ছাড়পত্র পেলেই কার্গোপণ্য পরিবহণের সুযোগ মেলে।
সূত্র জানায়, দেশের সকল বিমানবন্দরের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনা ও সরবরাহ করে বেবিচকের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড স্টোর ইউনিটের (সেমসু)। বেবিচকের বিভিন্ন দফতরের চাহিদার ভিত্তিতে সেমসু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনে। কোনও যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে সেগুলো যন্ত্রাংশ মেরামত কিংবা নতুন করে সংযোজনের প্রয়োজন হলেও সেমসু’র মাধ্যমেই করতে হয়। ফলে কোনও যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে সেমসু ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চিঠি চালাচালিতে সময় চলে যায়। একইসঙ্গে গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত গতিতে সেমসুর উদ্যোগ না থাকলে বিপত্তিতে পড়তে হয় সংশ্লিষ্টদের।