বেড়েই চলছে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ গরমে দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কলেরা হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, আইসিডিডিআর,বি’ হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগীরা ভিড় করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসিডিডিআর,বি’র হাসপাতালে ১৩৩১ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। শুধু মার্চ মাসেই ২৯ হাজার ৬৮১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী আইসিডিডিআর,বি’ হাসপাতালে ভর্তি হন। আগের মাসে এই সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৩৪৪ জন। ডায়রিয়া রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালটি। এবার ডায়রিয়া রোগী অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের বেশির ভাগই বাইরের খাবার বা পানীয় পান করছে অথবা অনিরাপদ পানি পান করছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। রাজশাহী ও বরিশালেও পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, তীব্র গরমের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। কয়েকদিন অতিরিক্ত গরমের কারণে পানির চাহিদা বাড়ছে। রাস্তাঘাটে বরফ মেশানো আখ ও লেবুর রসের বিভিন্ন ধরনের শরবত পান করে অনেকে। অনিরাপদ পানি ও খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশ এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপে ঘণ্টায় ৫০ জনের বেশি রোগী আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আইসিডিডিআর,বি’ বলছে, হাসপাতালের শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় অস্থায়ী দুইটি তাঁবু টানিয়ে ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা চলছে। সূত্র বলছে, সারাবছর দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ ডায়রিয়া রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে রোগীর সংখ্যা কিছু বাড়ে। সাধারণত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহে রোগী চূড়ান্তভাবে বাড়ে; কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। আইসিডিডিআর,বি’ কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক ৫০০-এর মতো রোগী এসেছে। দ্বিতীয় সপ্তাহে দৈনিক রোগী বেড়ে হয়েছে ৬০০। ১৬ই মার্চ থেকে প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। এত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তবে সব চিকিৎসা হচ্ছে বিনামূল্যে। ভর্তি রোগীর বড় অংশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতাল ছাড়তে পারছে।
আইসিডিডিআর,বি’ হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, রোগীদের সিংহভাগই বয়স্ক। তবে রোগীদের ৩০ শতাংশ তীব্র ডায়রিয়া বা কলেরায় আক্রান্ত। ডা. বাহারুল আলম বলেন, যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের বেশির ভাগই বাইরের খাবার বা পানীয় পান করছে অথবা অনিরাপদ পানি পান করছে। ঘরে তৈরি খাবার খেয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত হলেও তা সংখ্যায় কম। ঘরের খাবার গ্রহণ করলে ডায়রিয়া কম হয় বলে আমার ধারণা। ঘরে একসঙ্গে তিন চারজনের জন্য রান্না করে। আর মায়েরা রান্নার বিষয়ে কেয়ারলেস হয় না। এজন্য আমরা সবসময় বলি- বাইরের যেকোনো ধরনের খাবার পরিহার করতে। ডা. বাহারুল বলেন, গরমের সময় সিগেলা, ই কোলাই, কলেরা (ভিব্রিও কলেরি) এবং শীতকালে রোটাভাইরাসের মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়ায়। পানিবাহিত এসব জীবাণু পানি ছাড়াও পচা-বাসি খাবারে জন্মে অথবা ছড়ায়। জীবাণুটি কীভাবে ছড়ায় তার উদাহরণ দিতে গিয়ে ডা. বাহারুল বলেন, একটা যদি কোনোভাবে পড়ে পচা-বাসি খাবারে, সে রেপ্লিকেট করে। এটা থেকে চারটা, চারটা থেকে ১৬টা। গরম খাবারে এই জীবাণু পড়লেও সে তেমন ছড়াতে পারে না। ডায়রিয়ার জীবাণু আছে, এমন পানি দিয়ে তৈরি করা খাবার খেলেও ডায়রিয়া হয়।
ঢাকায় এখন যারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই দূষিত পানি ও বাসি খাবারের কারণে বলে মনে করছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, শুধু পানিকে দায়ী করলেও হবে না। ওয়াসার পানি খারাপ হলেও ভালোভাবে ফুটালে তা জীবাণুমুক্ত হয়ে যায়। এ জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। বাইরের বিশেষ করে খোলা খাবার একেবারে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।