যশোরের পুরাতন কসবায় দলের একই গ্রুপের হাতে যুবলীগের দুই কর্মী খুন

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোর শহরের পুরাতন কসবা কাঁঠালতলা ও গোলামপট্টিতে আলাদা ঘটনায় দলের একই গ্রুপের সন্ত্রাসীদের হাতে যুবলীগের ২ কর্মী খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও এক কর্মী। পৃথক এই হত্যাকা-ের পর গোটা পুরাতন কসবা এলাকায় চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ দুটি হত্যার সাথে জড়িত কাউকে এখনো পর্যন্ত আটক করতে পারেনি। নিহত দুই যুবলীগ কর্মী হলেন পুরাতন কসবা পুলিশ লাইন মাদ্রাসার পেছন এলাকার লিয়াকত পাটোয়ারীর ছেলে হোসাইন মোহাম্মদ রুম্মান (৩৫) ও গোলামপট্টির মোহাম্মদ আলীর ছেলে আলম (৪৮)। অপরদিকে আহত যুবলীগ কর্মীর নাম আরিফ হোসেন শাকিল (২৮)। তিনি পুরাতন কসবা মানিকতলার আব্দুর রহমান বাবুর ছেলে।
আলম গত ২৪ মার্চ ছুরিকাঘাতে আহত হন। আজ ভোরে তার মৃত্যু হয়।


আহত আরিফ হোসেন শাকিলের পিতা আব্দুর রহমান বাবু জানান, তার ছেলে যুবলীগ কর্মী। গত ২৫ মার্চ রাতে তার ছেলে ও বন্ধু যুবলীগ কর্মী রুম্মান চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডস্থ এম এম কলেজের পুরনো হোস্টেলে বসে স্বাধীনতা দিবসের প্যানা বানানোর কাজ করছিলো। এ সময় কাঁঠালতলা থেকে মিলন তাদেরকে মোবাইল ফোন করে সেখানে যেতে বলেন। তাদেরকে বলা হয়, ‘তোরা এখানে আয়। তোদের সাথে অন্যদের কী ঝামেলা আছে মীমাংসা করতে হবে।’ এই ফোন পেয়ে শাকিল ও রুম্মান কাঁঠালতলায় যায়। এরপর রাত ১১টার দিকে তারা কাঁঠালতলায় মিলনের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। এ সময় পুরাতন কসবা ঢাকা রোড রায়পাড়া বটতলা ব্রিজ এলাকার বজলু খলিফার ছেলে আরিফের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেখানে এসে আচমকা তাদের ওপর আক্রমণ করে। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদেরকে এলোপাতাড়ি কোপ ও ছুরিকাঘাত করলে রুম্মান ও শাকিল গুরুতর জখম হয়। পরে স্থানীয় লোকজন আহতের উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ভর্তির কিছুক্ষণ পর মারা যায় রুম্মান। তিনি আরও জানান, তার ছেলে শাকিল বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। কী নিয়ে আরিফদের সাথে শাকিলদের দ্বন্দ্ব ছিলো জানতে চাইলে আব্দুর রহমান বাবু বলেন, সে অনেক কথা। সময় লাগবে এসব কথা বলতে। ঘটনার পরদিন দুপুরে নিহত রুম্মানের বাড়িতে গেলে তার মা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি ছেলে হত্যার বিচার চেয়েছেন।
কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (তদন্ত) শেখ তাসমীম আলম বলেন, হয়ত অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রুম্মান খুন হয়েছে। তবে জড়িতরা আটক হলে হত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তিনি আরও জানান, হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের আটকের চেষ্টা চলছে। পুলিশ জানায়, রুম্মান হত্যার ঘটনায় তার ভগ্নিপতি আলিমুজ্জামান আলী ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে গত শনিবার রাতে কোতয়ালি থানায় একটি মামলা (নং-৮৪) করেছেন। আসামিরা হলেন, শহরের পুরাতন কসবা ঢাকা রোড রায়পাড়া বটতলা ব্রিজ এলাকার বজলু খলিফার ৩ ছেলে আরিফ (৩০), আহাদ (২৭) ও শাহাদত (২৬), পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে ইকরামুল (৩২), শহরতলীর শেখহাটির মতিয়ার রহমানের ছেলে মাইমুন (৩২), নতুন উপশহর এলাকার সাজ্জাদ (৩০), শহরের পুরাতন কসবা ঢাকা রোড রায়পাড়া বটতলা ব্রিজ এলাকার সিরাজের ছেলে আব্দুর রহমান (২৯), একই এলাকার হৃদয় ওরফে গেরিলা হৃদয় (২৯), শুভ (২৯), ফারুক হোসেনের ছেলে ভাষা (৩০) ও আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে জোনায়েত শিমুল (৩০)। এজাহারে আলিমুজ্জামান আলী উল্লেখ করেছেন, তার শ্যালক রুম্মান ব্যবসা করতেন। পাওনা টাকা নিয়ে আসামিদের সাথে তার শ্যালকের পূর্ব হতে শত্রুতা চলে আসছিলো। এর জের ধরে তারা তার শ্যালককে খুন জখমের ষড়যন্ত্র করে আসছিলেন। গত ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে আরিফ তার শ্যালককে পাওনা টাকা দেবে বলে জানালে শাকিল কাঁঠালতলার জনৈক ভাঙারি ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বারের দোকানের পেছনে যান। সেখানে যাওয়ার পর আরিফ তাকে টাকা দেবে না বলে জানালে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর এক পর্যায়ে আরিফ ও তার ভাই আহাদ বার্মিজ চাকু দিয়ে রুম্মানের বুকে আঘাত করে। অন্য আসামিদের কয়েকজন দা দিয়ে কুপিয়ে ও চাকু দিয়ে আঘাত করলে তার শ্যালক গুরুতর জখম হন। পরে স্থানীয় লোকজন রুম্মানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত পৌনে ১২টার দিকে রুম্মান মারা যান। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রুম্মান একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানা ও চৌগাছা থানায় অস্ত্র আইনে ১টি ও বিষ্ফোরকদ্রব্য আইনে ৩টিসহ মোট ৭টি মামলা রয়েছে। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে একই সন্ত্রাসী গ্রুপের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রুম্মান গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। এক পর্যায়ে রুম্মান মালয়েশিয়ায় চলে যান। ২০১৮ সালের শেষের দিকে তিনি দেশে ফিরে আসেন। সূত্র জানায়, নিহত রুম্মান ও আহত শাকিল এবং হত্যার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীরা জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার অনুসারি হিসেবে পরিচিত।
অপর নিহত যুবলীগ কর্মী আলমের বড়ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ইতোপূর্বে তার এক ভাই কোরবান আলী পচা সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন। আলম এই মামলার সাক্ষি। এ কারণে হত্যা মামলার আসামি পুরাতন কসবা গোলামপট্টির আব্দুল খালেকের ছেলে আমিরুল তার ভাই আলমকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে আসছিলেন। গত ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে গোলামপট্টির আঞ্জুমান আরা হাইস্কুলের পেছনে তার ভাই আলমকে দেখতে পেয়ে আমিরুলের হুকুমে সন্ত্রাসী আইজুল, বাবলু ও সোহানসহ কয়েকজন ছুরিকাঘাত করে। পরে আহত আলমকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রবিবার ভোরে আলম মারা যান। কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, কী নিয়ে দ্বন্দ্বে আলমকে হত্যা করা হয়েছে তা তারা এখনো জানতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, আলম হত্যার বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এখনো পর্যন্ত এজাহার দাখিল হয়নি। পুরাতন কসবা এলাকার একটি সূত্র জানায়, আলম হত্যার সাথে জড়িতরাও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার অনুসারি। দুটি হত্যার ঘটনার পর এখন পুরাতন কসবায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।