২৮শে মার্চ পর্যন্ত স্থগিত ইমরানের ভাগ্য নির্ধারণী অধিবেশন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ধারণা করা হয়েছিল শুক্রবারই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ভোটাভুটি হবে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে। তবে আপাতত এ সপ্তাহের জন্য ক্ষমতায় টিকে গেলেন ইমরান খান। কারণ পার্লামেন্টের স্পিকার আসাদ কায়সার অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন না করেই শুক্রবারের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন। আগামি ২৮শে মার্চ আবারও অধিবেশন বসবে। সেদিনই অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ভোটাভুটি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে ডন। এর আগে পাকিস্তান সময় শুক্রবার সকাল ১১টায় অধিবেশন শুরু হয়। পূর্ব নির্ধারিত এই অধিবেশনে কুরআন তেলওয়াতের পর ধর্মমন্ত্রী নুরুল হক কাদরি মৃত আইনপ্রণেতা খায়াল জামানের জন্য উপস্থিত সদস্যদের নিয়ে দোয়া করেন। এই অধিবেশনে সরকারি দল পিটিআই’র তরফ থেকে যোগ দেন শাহ মাহমুদ কুরেশি, শিরিন মাজারি, আসাদ উমর এবং আলি মুহাম্মদ খান।
বিরোধী নেতাদের মধ্যে উপস্থিত হন পিপিপি দলের চেয়ারম্যান বিলালওয়াল ভুট্টো এবং সহকারী আসিফ আলি জারদারি। অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করে আসাদ কায়সার বলেন, কোনো পার্লামেন্ট সদস্য মারা গেলে অধিবেশন পিছিয়ে দেয়ার ঐতিহ্য পাকিস্তানের রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এই নিয়ম মানা হয়েছে। অতীতে ২৪ বার এরকম ঘটনা ঘটেছে। তারপরেও অধিবেশন মুলতবির ঘোষণার পর এর প্রতিবাদ জানান বিরোধী নেতারা। তবে স্পিকার তাদের মাইক চালু করেননি। সময়ক্ষেপণ না করে তিনি তার চেম্বারে ফেরত যান। এসময় হাউসে কমপক্ষে ১৫০ বিরোধী নেতা উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশন শেষে বিরোধী নেতা মোহসিন শাহনওয়াজ বলেন, আজকেই ইমরান খানের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দেয়া সম্ভব হতো। তিনি বিশ্বাস করেন, ভোটের দিন ইমরান খানের বিরুদ্ধে দুই শতাধিক ভোট পড়বে। অধিবেশন মুলতবি নিয়ে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি বলেন, আজকে পার্লামেন্টে আর কিছু হবে না। যা হওয়ার তা হবে কাদ্দাফি স্টেডিয়ামে। তিনি মূলত অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান তৃতীয় টেস্টের কথা বুঝিয়েছেন এ বক্তব্যের মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে আপাতত বেঁচে গেলেও এখনো ইমরান খানের ক্ষমতায় টিকে থাকা অনিশ্চিতই থেকে যাচ্ছে। এটি এখন নির্ভর করছে পিটিআই’র মিত্র দলগুলোর উপরে। এই দলগুলো গত এক মাস ধরে নিরপেক্ষ অবস্থা ধরে রেখেছে। তবে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি আশা প্রকাশ করে বলেন, মিত্ররা আজই তাদের সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করবে এবং তাদের উচিৎ পিটিআই সরকারকে সমর্থন দেয়া। এমকিউএম-পি সরকারকে সমর্থন দেবে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পিপিপি তাদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছে তাতে তাদের উচিৎ সরকারের পাশে দাঁড়ানো। পিটিআই সরকার এমকিউএম-পি’কে সরকারে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছে। তাদের সঙ্গে এই জোট ধরে রাখতে চায় পিটিআই।
উল্লেখ্য, ইমরানের বিরুদ্ধে ৮ মার্চ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটির জন্য অধিবেশন ডাকতে স্পিকার আসাদ কায়সারের প্রতি লিখিত আবেদন জানায় তারা। পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, লিখিত আবেদন জমা পড়ার ১৪ দিনের মধ্যে স্পিকারকে আলোচনার জন্য অধিবেশন ডাকতে হবে। সে অনুযায়ী, ২২ মার্চের মধ্যে অধিবেশন আয়োজন করার কথা ছিল। তবে ২২ মার্চ থেকে জাতীয় পরিষদে ওআইসির দুই দিনব্যাপী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হওয়ায় তা আর হয়নি। এমন অবস্থায় শুক্রবার অধিবেশন ডাকেন স্পিকার। তবে তাতেও অনাস্থা প্রস্তাব না তুলেই মুলতবি ঘোষণা করা হয় অধিবেশন। পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, ৩৪২ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাব পাসের জন্য প্রয়োজন ১৭২ ভোটের। সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও কয়েকজন মন্ত্রী অভিযোগ করেছেন অনাস্থা ভোটকে সামনে রেখে বিরোধী দলগুলো বাণিজ্য শুরু করেছে। অর্থের বিনিময়ে ইমরানের নিজ দল পিটিআইয়ের আইনপ্রণেতাদের কিনে নেয়ার চেষ্টা করছে তারা। এসব নিয়েই গত দুই সপ্তাহ ধরে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের রাজনীতি। ধারণা করা হচ্ছে, আগামি ২৮শে মার্চই ইমরান খানের ভাগ্য নির্ধারিত হবে।