যেসব অভিযোগে জামায়াতের সাবেক এমপি খালেকের মৃত্যুদণ্ড

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মুক্তিযুদ্ধের সময় সাতক্ষীরা এলাকায় হত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক মণ্ডলসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দণ্ডিত অন্য আসামি একই এলাকার জামায়াতের সমর্থক খান রোকনুজ্জামান। বৃহষ্পতিবার (২৪মার্চ) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল ২০৮ পৃষ্ঠার এ রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পাঠ করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম। এসময় মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, প্রসিকিউটর রানাদাস গুপ্ত, প্রসিকিউটর ঋষিকেশ শাহা, প্রসিকিউটর মো. মোখলেসুর রহমান বাদল, প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন, প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান, প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি, প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন ও ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ, আইনজীবী আব্দুস সুবহান তরফদার ও গাজী এইচএম তামিম ও সাতক্ষীরা জামায়াতের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
যেসব অভিযোগে দণ্ড: প্রথম অভিযোগ মুক্তিযুদ্ধের সময় ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডোকে অপহরণ করে সাতক্ষীরা বোধহাটা এলাকার রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন ও দুই কমান্ডোকে হত্যার অপরাধে খালেক মণ্ডলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
দ্বিতীয়ত মুক্তিযুদ্ধের সময় সাতক্ষীরায় আবুল হোসেন নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার অভিযোগে খালেক মণ্ডলকে সর্বোচ্চ দণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সাতক্ষীরার বৈকারি গ্রামে দুই নারীকে ধর্ষণে সহযোগীতার অপরাধে খালেক মণ্ডলকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে একইধরনের অভিযোগে খান রোকনুজ্জামানকে ফাঁসির রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া সাতক্ষীরার গোবিন্দপুর গ্রামের কমরউদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রোকনুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
তৃতীয়ত মুক্তিযুদ্ধের সময় সাতক্ষীরার ফয়জুল্লাহপুর গ্রামের সদর আলী নামে এক ব্যক্তিকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগে রোকনুজ্জামানকে সর্বোচ্চ দণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।এছাড়া আরও অভিযোগে সাতক্ষীরার আইসপাড়া এলাকার চারজনকে নির্যাতনের অভিযোগে রোকনুজ্জামানকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীদের তথ্য মতে, এ মামলায় আসামি ছিলেন চারজন। এর মধ্যে আবদুল্লাহ আল বাকী ও জহিরুল ইসলাম ওরফে টিক্কা খান নামে দুই আসামি বিচারাধীন অবস্থায় মারা যান। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাঁচ ব্যক্তিকে গলা কেটে ও বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যার অভিযোগে আবদুল খালেকসহ নয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ২ জুলাই সাতক্ষীরায় মামলা হয়। পরে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ২০১৫ সালের ১৬ জুন মামলার তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রসিকিউশনে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। ২০১৮ সালের ৫ মার্চ অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৭ জন সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে গত বছরের ১১ নভেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন ট্রাইব্যুনাল। আজ সেই মামলায় রায় ঘোষণা করা হলো। প্রসিকিউশনপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামি খালেকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার, মো. মতিউর রহমান আকন্দ ও মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন। পলাতক আসামি রোকনুজ্জামানের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।
রেজিয়া সুলতানা চমন বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ সাক্ষ্য, দলিল ও যুক্তিতর্কের মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এ রায়ে সন্তোষ্ট। আসামি খালেক মণ্ডলের আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, রাজনৈতিকভাবে তার (খালেক মণ্ডল) বিরুদ্ধে এ মামলা হয়েছে। সাক্ষ্যে যে অসঙ্গতিগুলো ছিল সেগুলো রায়ে উঠে আসেনি। আমরা দণ্ডের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করবো।