মহা নামযজ্ঞে বাঁধা দেয়ার প্রতিবাদে রামপালে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

0

এম, এ সবুর রানা, রামপাল (বাগেরহাট)॥ বাগেরহাটের রামপালে মহা নামযজ্ঞে বাঁধা দেয়ার প্রতিবাদে সগুনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হয়েছে। সগুনা মহানামযজ্ঞ উদযাপনে বাঁধা প্রদান, ভয়ভীতি প্রদর্শন, গালাগালি ও হুমকির প্রতিবাদে প্রধান শিক্ষক শেখ তুহিন বাদশার বিরুদ্ধে রবিবার সকালে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সগুনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন সগুনা গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীরাসহ এলাকাবাসী। মানববন্ধনে সগুনা মহানামযজ্ঞ উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় নারী, পুরুষ ও শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন।


মানববন্ধনে বক্তৃতায় নামযজ্ঞ উদযাপন কমিটির সভাপতি অনাদি রঞ্জন পাল বলেন, আমাদের সনাতন ধর্ম নিয়ে কটুক্তি, নামযজ্ঞ করতে বাঁধা দেয়া ও নামযজ্ঞ কমিটির নেতৃবৃন্দদের লাঞ্চিত ও গালাগালি এবং তালেবান দিয়ে নামযজ্ঞ ভন্ডুল করার হুমকি দেন প্রধান শিক্ষক শেখ তুহিন বাদশা। আমরা দীর্ঘ ২৪ বছর ধরেই এ নামযজ্ঞ করে আসছি, কিন্তু এবার প্রধান শিক্ষক তাতে বাঁধা দিচ্ছেন। আমরা তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পাশাপাশি তাকে অপসারণের দাবী জানাচ্ছি। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে বাইনতলা ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা বিক্ষোভকারীদের সমস্যার কথা শোনেন এবং সমাধানের আশ্বাস দেন।

খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে ওই প্রধান শিক্ষক সাংবাদিকদের উপর ও চড়াও হন এবং অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন। এ সময় তিনি নিজের ক্ষমতা দেখাতে স্কুল বন্ধ করে তালাবদ্ধ করার হুমকি দেন উপস্থিত সকলের সামনে। এতে উপস্থিত শিক্ষা কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান, এলাকাবাসী ও সাংবাদিকরা হতভম্ব হয়ে যান। তার বিভিন্ন অনিয়মের বিবরণ তুলে ধরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, তিনি আমাদের সবসময় অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। বিদ্যালয়ের কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের সহযোগিতা নেন না। স্কুলের মালামাল ও টিন কাউকে না জানিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন।

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বসার রুমের সংকট থাকলেও ওই শিক্ষক রুমের ভেতরে ওয়াল তুলে খাস কামরা বানিয়ে একটা রুম দখল করে রেখেছেন। তার নির্দেশ অমান্য করলে তালেবান দিয়ে নামযজ্ঞ ভন্ডুল করে দিবো বলেও হুমকি দেন ওই শিক্ষক। এতে ওই এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে এবং হিন্দু অধ্যুষিত ওই এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী ঘটনা তদন্তপূর্বক ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানান।


এ বিষয়ে সগুনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ তুহিন বাদশার কাছে জানতে চাইলে তিনি তালেবান দিয়ে নামযজ্ঞ ভন্ডুল করা গালাগালি করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সগুনা মহানামযজ্ঞ কমিটি আসছে রমজানে স্কুল খোলা থাকালীন সময়ে স্কুলেই নামযজ্ঞ করার অনুমতি চেয়েছেন। কিন্তু তাতে রমজানের পবিত্রতা ও স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হবে। তাই তাদেরকে হয় রমজানের আগে না হয় রমজানের পরে অনুষ্ঠান করার জন্য বলেছি। কারণ ওই সময়ে স্কুলের অনেকে রোজা থাকবেন, তাদের সামনে স্কুলে নামযজ্ঞ ও খাওয়া দাওয়া করার বিষয়টি বেমানান হবে। তাই তাদেরকে রোজার আগে কিংবা পরে করতে বলায় তারা তা না মেনে রোজার মধ্যেই করার উদ্যোগ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।


এ বিষয়ে বাইনতলা ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন পরিস্থিতি তো আপনারা স্ব চোখে দেখলেন, আমি সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে তিনি ওই প্রধান শিক্ষকের আচারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা বিদ্যালয়ের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং সকলের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছি। কেন ওই শিক্ষক এমনটি করছেন সেটি ক্ষতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।