মূল্য তালিকা টেম্পারিং করা সয়াবিন তেলে যশোরের বাজার সয়লাব : উদ্বিগ্ন ভোক্তারা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রমজান মাসকে টার্গেট করে যশোরে মুনাফাখোর কালোবাজারি, মজুদদার, অসাধু ব্যবসায়ীরা তৎপর হয়ে ্উঠছে। মুনাফা লুটে নেয়ার নানা কৌশল আটছে তারা। ইতোমধ্যে জেলার কয়েকটি স্থানে সয়াবিন তেলের মূল্য তালিকা টেম্পারিং করে নতুন মূল্যে নির্ধারণ করে বিক্রি করার মতো গুরুতর অভিযোগ মিলেছে প্রশাসনের কাছে। এ বিষয়ে বাজারগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
একটি গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, রমজান মাস সামনে রেখে প্রতিবছরের মতো এবারও যশোরের একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপণ্য মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করছে। অনেকটা প্রশাসনের তদারকি ও নজরদারি ছাড়ায় এসব ব্যবসায়ীরা চাল,ডাল, তেলসহ যাবতীয় নিত্যপণ্যের দাম ইচ্ছেমতো নির্ধারণ করে আসছে। যা সাম্প্রতিক সময়ে চরম আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় সামনে রোজার বাজারে যাতে অস্থিতিশীল হয়ে না ওঠে সেজন্য সরকারের শীর্ষ মহল থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় যশোরের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বাজারগুলোর ওপর নজর বাড়ানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে আমরা ইতোমধ্যে কঠোর ভূমিকায় রয়েছি। বিশেষ করে রোজার মাসকে ঘিরে অসাধু কারবারীদের তৎপরতরা রুখতে মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, মাঠ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করেই আমরা বাজারে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে গত দুদিনে ভয়ঙ্কর প্রতারণার প্রমাণ পেয়েছি। এরমধ্যে বুধবার যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা বাজারে ও বৃহস্পতিবার অভয়নগরের নওয়াপাড়া বাজারে। বুধবার খাজুরা বাজারে অভিযানে তেলের বোতলে মূল্য টেম্পারিংসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে ভোজ্য তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সঠিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে কি না তদারকি করা হয়। এতে ভোক্তা-অধিকার লঙ্ঘনজনিত বিভিন্ন অপরাধে ভোক্তা-অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় ও সতর্ক করা হয়। তিনি বলেন,অভিযানের সময় আমরা সয়াবিন তেলের পূর্বের বোতলে মূল্য তালিকা টেম্পারিং করে বর্তমান তালিকায় বিক্রি করার প্রমাণ পেয়েছি। খাজুরা বাজারের অর্ণব স্টোরে এক লিটার সয়াবিন তেলের বোতলে মূল্য টেম্পারিং করে এবং মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখবিহীন খাদ্যপণ্য বিক্রি ও সংরক্ষণ এবং মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় একই জরিমানা করা হয় আতিয়ার স্টোরকে। ১, ২ ও ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলে মূল্য ঘঁষেমেজে তুলে নতুন দামে বিক্রি (মূল্য টেম্পারিং) করায় জোয়ারদার ট্রেডার্সকে জরিমানা করা হয় ৩ হাজার টাকা। এছাড়া আরও একটি কসমেটিকস দোকানে অনিয়মের জন্য ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যশোর জেলা শাখার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার জেলার অভয়নগরের নওয়াপাড়া বাজারেও একই ধরনের অভিযান পরিচালনা করে সয়াবিন তেলের বোতলে মূল্য তালিকা টেম্পারিং করে পরিবর্তনের অভিযোগ পেয়েছে। বাজারের শ্রী দুর্গা বাণিজ্য ভান্ডারে অভিযানের চালিয়ে ১.২ ও ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতলে মূল্য তালিকা তুলে ফেলে টেম্পারিং করে বিক্রির অপরাধে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই অভিযোগ পাওয়া যায় বাজারের দত্ত স্টোরে। ওই দোকানে ২ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলে পূর্বের মূল্যে তুলে টেম্পারিং করে নতুন তালিকা নির্ধারণ করার অপরাধে ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে। এছাড়া মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় পাল স্টোরকে ২ হাজার টাকা, ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি করার অপরাধে নিয়াম ফাস্ট ফুড হাউজ নামে একটি দোকান মালিককে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন যশোর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ওয়ালিদ বিন হাবিব নিজেই বলে তিনি জানান।