পতনের বাজারে ‘পচা’ শেয়ারের কেরামতি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ গেল সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হলেও কেরামতি দেখিয়েছে ‘পচা’ বা জেড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। পতনের বাজারে সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে জেড গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষ ১০টি স্থানের সাতটি দখল করেছে জেড গ্রুপ।
এর মধ্যে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে সব থেকে বড় দাপট দেখিয়েছে বছরের পর বছর ধরে লোকসান করা মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ। এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার গত সপ্তাজুড়েই দাম বেড়েছে। ফলে দাম বাড়ার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার।
গেল সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। টাকার অংকে বেড়েছে ৬ টাকা ৪০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা ৪০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ২১ টাকা।
শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি সর্বশেষ কমে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে তার কোনো তথ্য ডিএসইর ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। তবে ডিএসইর ওয়েবসাইটে ২০১৭ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক চিত্রের কিছু বর্ণনা দেওয়া আছে।
ওই তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান করে ৪০ পয়সা। পরের বছর ২০১৮ সালে ৩৯ পয়সা, ২০১৯ সালে ৩২ পয়সা, ২০২০ সালে ৩০ পয়সা এবং ২০২১ সালে ৩৩ পয়সা শেয়ারপ্রতি লোকসান করে কোম্পানিটি। আর চলমান হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (২০২১ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১২ পয়সা।
নিয়মিত এমন লোকসান করা প্রতিষ্ঠানটির প্রতি বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নেই। ফলে এ দুই শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানিটির শেয়ার নেই। মাত্র ১২ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি ৫০ শতাংশ আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।
এদিকে শেয়ার দাম বাড়লেও বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে আগ্রহী হয়নি। ফলে সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
গেল সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জেড গ্রুপের আর এক প্রতিষ্ঠান মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক। এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ২০ দশমিক ৬১ শতাংশ। এর পরের স্থানটিতে রয়েছে সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ। এ কোম্পানিটিও ‘পচা’ জেড গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত। সপ্তাহজুড়ে এ কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ। বছরের পর বছর ধরে লোকসান করা এ দুটি কোম্পানি সর্বশেষ কবে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য ডিএসইর ওয়েবসাইটে নেই।
এছাড়া দাম বাড়ার শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা ‘পচা’ জেড গ্রুপের অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে জিল বাংলা সুগার মিলের ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ, ইমাম বাটনের ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ, জুট স্পিনার্সের ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং উসমানিয়া গ্লাস শিটের ৮ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ দাম বেড়েছে।
দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নেওয়া এ গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের ১১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ দাম বেড়েছে। আর গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
একাধিক পচা শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখালেও গেল সপ্তাহজুড়ে পতন হয়েছে অধিকাংশ ভালো কোম্পানির। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ৫৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১৯টির। আর ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১৪২ পয়েন্ট পড়ে গেছে। আর বাজার মূলধন কমেছে ১১ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা।