পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কেন এই উত্তেজনা?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে! যদি হয়, তাহলে তাতে ব্যবহৃত হবে পারমাণবিক অস্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মন্তব্যের জবাবে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন। বাইডেন সম্প্রতি বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার একমাত্র বিকল্প হলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বৃহস্পতিবার এ মন্তব্যের জবাব দিচ্ছিলেন সের্গেই ল্যাভরভ। এর আগেই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার পারমাণবিক অস্ত্র বিষয়ক বাহিনীকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি যে গতিতে ইউক্রেনে ছুটেছিলেন, দৃশ্যত তা অর্জিত হয়নি। ফলে তিনি হতাশা থেকে পারমাণবিক বাটনে চাপ দিতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। তাই যদি হয়, তবে তাতে ভয়াবহ এক পরিণতি ঘটবে বিশ্বে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এক সপ্তাহ অতিক্রম হয়েছে। এরই মধ্যে খারকিভ, খারসন দখল করে নেয়ার দাবি করেছে রাশিয়া। তবে এমন দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেন। কারণ, গুরুত্বপূর্ণ এসব শহরে তীব্র লড়াই চলছে উভয় পক্ষে। খারকিভের দক্ষিণের অংশ রাশিয়ার সেনারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তারা দক্ষিণের আরও শহর নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছে। তাতে সফল হলে ইউক্রেনিয়ার সেনারা সমুদ্র ব্যবহার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। রাশিয়া সীমান্তের কাছে কৌশলগত মারিউপোল বন্দরে গোলার আঘাতে নিহত হয়েছেন কয়েক শত মানুষ। এখানকার সিটি কাউন্সিল বলেছে, রাশিয়ার সেনাবাহিনী অব্যাহতভাবে এবং বাছবিচারহীনভাবে বেসামরিক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে গোলা নিক্ষেপ করছে। রাজধানী কিয়েভ এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাশিয়ার বিপুল পরিমাণ সেনাবহর এখনো রাজধানী থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেছে। জাতিসংঘের হিসাবে এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। যুদ্ধাপরাধের তদন্তে আইসিসি প্রসিকিউটররা ইউক্রেনে: হেগের আদালত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) একদল তদন্তকারী ইউক্রেনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন। তারা সেখানে তদন্ত করে দেখবেন ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হচ্ছে কিনা। আইসিসি’র শীর্ষ প্রসিকিউটর বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ কথা বলেছেন। প্রসিকিউটর করিম খান ঘোষণা দিয়েছেন যে, আনুষ্ঠানিক তদন্তে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য তিনি কাজ শুরু করবেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ওই টিমটি ইউক্রেনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। করিম খান বলেন, বুধবার আমি একটি টিম গঠন করেছি। তারা বৃহস্পতিবার ওই অঞ্চলে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, তার অফিস সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যার বিষয়ে তদন্ত করবে। যে-ই করুক তা, তদন্ত হবে। এক মিনিটে সব শেষ: মঙ্গলবার রাতে রাজধানী কিয়েভের পশ্চিমে ঝিতোমিয়ার শহরে নিজের বাড়িতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছেন কাতিয়া নামে একজন গৃহবধূ। তার স্বামী ওলেগ রুবাক বলেছেন, তার বয়স ছিল ২৯ বছর। এক মিনিট আগে তিনি বেডরুমে ছিলেন। মিনিটের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সেই রুমের কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। ইউক্রেনে সামরিক শত্রুতা বন্ধের আহ্বান আসিয়ানের: আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অবিলম্বে ইউক্রেনে সামরিক শত্রুতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, এখনো আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ আছে। এ বিষয়ে তারা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। তবে তাতে সরাসরি রাশিয়ার নাম উল্লেখ করা হয়নি। আসিয়ানের শীর্ষ কূটনীতিকরা বলেছেন, যেকোনো সম্ভাব্য উপায়ে তারা কিয়েভ এবং মস্কোর মধ্যে একটি সমঝোতা করে দেয়ার জন্য প্রস্তুত। এতে আরও বলা হয়, পরিস্থিতির ভয়াবহতায় তারা গভীরভাবে হতাশ। আসিয়ান হলো ১০ সদস্য রাষ্ট্রের সংগঠন। এসব দেশ হলো- ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। পুতিনের জয়ের কোনো সুযোগই নেই: কুলেবা: ইউক্রেনে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে মস্কোর সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দমিত্র কুলেবা। জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়ান সেনাদের প্রবেশপথে বেসামরিক লোকজন অবরোধ সৃষ্টি করেছে। সেই চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন কুলেবা। বলেন, এই যুদ্ধে রাশিয়া জিততে পারবে না। ইউক্রেনের জন্য এটা হলো জনগণের সত্যিকার যুদ্ধ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এই যুদ্ধে জেতার কোনো সুযোগই নেই। ওদিকে বুধবার অনলাইনে যেসব ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যায়, ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় বিপুল সংখ্যক অধিবাসী ও শ্রমিক। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ইউরোপের মধ্যে সর্ববৃহতের অন্যতম। সেখানে স্থানীয় ও শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে রাশিয়ান সেনাদের সামনে এগুনো বন্ধ করে দিয়েছে। তবে ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি এজেন্সি বলেছে, মস্কো সোমবার ডিরেক্টর জেনারেল রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি’কে জানিয়েছে যে- ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারপাশের বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে রাশিয়ার সেনারা। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি যে, ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ নিরাপদে তাদের অধীনে রাখতে সক্ষম হয়েছেন কিনা। প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে সহিংসতা: পোল্যান্ড সীমান্তবর্তী শহর লাভিভ থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক অ্যানড্রিউ সিমন্স জানাচ্ছেন, সহিংসতা কমার কোনো লক্ষণ নেই। সেখানে রাশিয়ার আগ্রাসন দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়েছে। প্রতি ঘণ্টায় সহিংসতার মাত্রা বাড়ছে। প্রথম শহর হিসেবে রাশিয়ানদের নিয়ন্ত্রণে গেছে খারসন। তারা আরও শহর এভাবে দখলের জন্য মরিয়া। এক্ষেত্রে নৈতিকতা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। লাভিভ শহরের কোথাও ইউক্রেনের বাহিনীকে দেখা যাচ্ছে না। তবে এ থেকে কিছু দূরে মারিউপোলের পরিস্থিতি কিছুটা ব্যতিক্রমী। ওদিকে কোথাও কোনো খাবার, পানি ও জ্বালানি নেই। মানুষের মাঝে কোনো আশা নেই বললেই চলে। অন্য পাশ দিয়ে যখন শত্রুসেনারা প্রবেশ করছে, তখন শেষ সময়ে কিছু মানুষ জীবন বাঁচাতে বেরিয়ে পড়ছেন। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে চাপ বেড়েছে। পাল্টা আক্রমণ করছেন ইউক্রেনের সেনারা: প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সামরিক উপদেষ্টা বলেছেন, মস্কোর আক্রমণের জবাবে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। টেলিভিশনে দেয়া ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, প্রতি মিনিটে আমাদের সহায়তা বাড়ছে। আর শত্রুদের শক্তি কমছে। আমরা শুধু আত্মরক্ষা করছি এমন নয়। আমরা পাল্টা আক্রমণও করছি। ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেয়া বন্ধ করতে চায় রাশিয়া: রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেয়া বন্ধ করতে চায় মস্কো। এ জন্যই তাদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানো হয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে আরও কিছু বিষয়। তিনি বলেছেন, তার দেশের সেনারা সামরিক টার্গেটে হামলা চালাচ্ছে। এর ফলে বড় ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে ইউক্রেনে। মস্কোর উদ্বেগের বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলো অবহিত বলে তিনি মনে করেন।
আমাদের ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে: মারিউপোল সিটি কাউন্সিল বলেছে, রাশিয়ার সেনাবাহিনী অব্যাহতভাবে এবং খেয়ালখুশি মতো বেসামরিক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে গোলা নিক্ষেপ করছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই শহরে পানি সরবরাহ, হিটিং এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শহরে সরবরাহ এবং জনগণকে উদ্ধার অভিযানে বাধা দেয়া হচ্ছে। কাউন্সিল থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা খাদ্য সরবরাহে বাধা দিয়েছে। রাস্তায় অবরোধ সৃষ্টি করেছে। যেন সেটা এখন লেনিনগ্রাদ। সাত দিন ধরে তারা শহরের জীবন রক্ষাকারী অবকাঠামোগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। কোনো আলো নেই। পানি নেই। হিটিং সিস্টেমও নেই। এ অবস্থায় শহরের জনগণের জন্য মানবিক করিডোর সৃষ্টির উপায় খুঁজছে কাউন্সিলর। বলা হয়েছে, একটি জাতি হিসেবে আমাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। ইউক্রেনের জনগণের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে গণহত্যা।