নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন: সাক্ষ্য আইনে ধারা বাতিলে শুনানি ৮ মার্চ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন সংশোধনসহ ভুক্তভোগী নারীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ বলার বা চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ সংক্রান্ত আইনের ১৫৫ (৪) ধারা বিলুপ্ত করার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের বিষয়ে শুনানি পিছিয়ে আগামী মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দিন ঠিক করা হয়েছে। রিটকারী আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. শাহিনুজ্জামান শাহীন ও ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার শিউলী। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অ্যাডভোকেট মো. শাহিনুজ্জামান শাহীন। তিনি জানান, আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আদালতে দিন ধার্য ছিল। কিন্তু আমাদের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন উপস্থিত না থাকায় আমরা সময় চেয়েছিলাম। তখন আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য পিছিয়ে আগামী মঙ্গলবার দিন ঠিক করেন। এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একই বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান, সাক্ষ্য আইনের দুটি ধারা সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় এই খসড়া প্রস্তুত করেছে।
সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ও ১৪৬ (৩) ধারা বাতিল চেয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও নারীপক্ষ গত বছরের ১৪ নভেম্বর রিট করে। এর শুনানিতে গত ১৬ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, সাক্ষ্য আইন সংশোধনসহ আইনের ১৫৫ (৪) ধারা বাতিল করার প্রক্রিয়া চলছে। এজন্য খসড়া বিল আকারে তৈরি করা হয়েছে। সেদিন আদালত ১৫৫ (৪) ধারা বাতিল বিষয়ে পদক্ষেপ রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে বলেন। ১৪৬ (৩) ধারার বিষয়টিও আমলে নেওয়ার কথা বলেন।শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন সংশোধনে যে প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে, তা দাখিল করা হয়েছে। খসড়ায় ১৫৫ (৪) ধারা বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৪৬ (৩) ধারার বিষয়ে জেনে হালনাগাদ তথ্য জানানো হবে। রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘তাহলে ১৫৫ (৪) ড্রপ (বাদ) হয়ে যাচ্ছে। ১৪৬ (৩) রয়ে গেছে। রিট আবেদনকারীদের কপি দেন।’ আইনজীবী শারমিন আকতারের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘১৫৫ (৪) ধারা ডিলিট করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৪৬ (৩) ধারাটি রয়ে গেছে। এ বিষয়ে এই খসড়ায় উল্লেখ নেই। খসড়াটি নিয়ে দেখেন। রোববার শুনানির জন্য রাখছি।’
সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যখন বলাৎকার বা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়, তখন সাধারণভাবে অভিযোগ দায়ের করা নারীকে দুশ্চরিত্রা দেখানোর সুযোগ থাকে। আর আইনের ১৪৬ (৩) ধারা অনুযায়ী, চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ এবং সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা যায়। এই দুটি ধারা অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা চেয়ে রিটটি করা হয়। এর আগে ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং নারীপক্ষ, এ তিন সংগঠনের পক্ষে এ রিট আবেদন করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। রিটে আইন মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করা হয়। রিট আবেদনে ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের বিদ্যমান ধারায় ১৫৫ (৪) এবং ১৪৬ (৩) দুটি বিধান বাতিল চেয়ে রিট আবেদন করা হয়েছিল। রিটে ‘যৌন অপরাধের অভিযোগকারী নারী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা’- ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের এমন বিধানসহ দুটি ধারা বাতিল চাওয়া হয়। একইসঙ্গে ১৯৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ও ১৪৬ (৩) ধারা কেন অসাংবিধানিক ও বাতিল করা হবে না, সেই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ ও ১৪৬ ধারা দুটিতে বলা আছে, একজন নারী যদি যৌন অপরাধের অভিযোগকারী হন তাহলে আদালতে তার চরিত্র এবং ইতিহাস নিয়ে তাকে প্রশ্ন ও জেরা করা যায়। অনেকদিন ধরে এগুলো বাতিলে আন্দোলন হয়েছে। এখন হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছি। রিটে ধারা দুটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারা অনুসারে, কোনো লোক যখন বলাৎকার কিংবা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা। জেরায় প্রশ্ন করা নিয়ে ১৪৬ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, ‘তাহার চরিত্রের প্রতি আঘাত করে তার বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যায়, যদিও এরূপ প্রশ্নের উত্তরের দ্বারা সে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো অপরাধের সহিত জড়িত হতে পারে, কিংবা সে দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হতে পারে, অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাহার দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তথাপি অনুরূপ প্রশ্ন করা যাবে।’ এর আগে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারা নারীর মানবাধিকারের বিরোধী। তাই এটি বাতিলের প্রস্তাব হয়েছে। এ উদ্যোগ নারীর মর্যাদাহানি রোধ করবে।