দুর্ভোগ নিরসনে রাজগঞ্জকে আলাদা ইউনিয়ন করার দাবি এলাকাবাসীর

0

ওসমান গণি. রাজগঞ্জ (যশোর) ॥ মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জকে আলাদা ইউনিয়ন করার দাবি জানিয়েছেন এলাকার মানুষ। যশোর জেলা থেকে ২২কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী রাজস্বী রাজগঞ্জ মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ। ভৌগলিক দিক থেকে এর অবস্থান ভাল হওয়ায় এখানে গড়ে উঠেছে এ অঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তর স্থানীয় একটি বাজার। কপোতাক্ষ নদ ও ঝাঁপা বাঁওড়ের তীরে বাজারটি হওয়ায় এবং যাতায়াতের সার্বিক ব্যবস্থা ভালো থাকায় বাণিজ্যিক গুরুত্বও বেড়েছে বেশ। যে কারণে বহু পুরনো ঐতিহ্যবাহী রাজগঞ্জ বাজারটিকে মণিরামপুর উপজেলার দ্বিতীয় স্বয়ংসম্পন্ন মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বলা হয়। উপজেলার পশ্চিশ অঞ্চল এবং প্রস্তাবিত রাজগঞ্জ থানার কেন্দ্রস্থলে রাজগঞ্জ বাজারের অবস্থান। অন্যদিকে চালুয়াহাটি ও ঝাঁপা ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে প্রায় চার কিলোমিটার লম্বা এই রাজগঞ্জ বাজার। তবে বৃহত্তর রাজগঞ্জ বাজার হিসেবে প্রসিদ্ধ হলেও ভৌগলিকভাবে রাজগঞ্জ কোনো মৌজা বা ইউনিয়ন নয়।
চালুয়াহাটি ইউনিয়নের মোবারকপুর মৌজার শেষ প্রান্তে এবং ঝাঁপা ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে অতি পুরনো রাজগঞ্জ বাজার অবস্থিত। এলাকার প্রবীণদের মতে, ২শ বছরের পুরনো রাজগঞ্জ বাজার আজ বৃদ্ধি পেয়ে দোদাড়িয়া বটতলা থেকে মোবারকপুর মহাশ্মশান পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটারে প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে ঝাঁপা ইউনিয়ন ও চালুয়াহাটি ইউনিয়ন দুটির পরিধি বিশাল এলাকা। রাজগঞ্জ বাজারের কিছু অংশ ঝাঁপা ইউনিয়নে আর কিছু অংশ চালুয়াহাটি ইউনিয়নের ভেতরে। এ দুটি ইউনিয়নের প্রত্যেকটির ব্যস প্রায় ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার।
মোবারকপুর গ্রামবাসীকে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যলয়ে যেতে হলে সুদূর নেংগুড়াহাট পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে হয়। পাশাপাশি ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় রাজগঞ্জ বাজারেই। ষোলখাদা এবং মল্লিকপুর গ্রামবাসীকে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে আসতে হলে প্রায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে হয়। এ দুটি ইউয়িনের শেষ প্রান্তে রাজগঞ্জ বাজারের অবস্থান হওয়ায় ইউনিয়নভিত্তিক কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ছোঁয়া লাগে না। যে কারণে পুরনো এ বাজারটিতে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। উপরন্তুু এ দুটি ইউনিয়নবাসীর মাঝে রয়েছে পক্ষপাতমূলক কর্মকান্ড, হিংসা ও বিদ্বেষ ইত্যাদি।
মণিরামপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদ ও ঝাঁপা বাঁওড়ের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অতিপ্রাচীন একটি বাজার ঐতিহ্যবাহী রাজস্বী রাজগঞ্জ বাজার । যতদুর জানা যায়, যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার মধ্যে রাজগঞ্জ বাজারই সব থেকে পুরনো একটি বাজার। এই বাজারের নামকরণ থেকেই বোঝা যায় রাজগঞ্জের জন্ম রাজস্বিক মর্যাদায় হয়েছে। তৎকালীন রাজা ও তাদের প্রজারাসহ ইংরেজ নীল কুঠিয়াল সাহেবরা এখানে কুঠিবাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীতে ইংরেজদের প্রয়োজনে বৃহত্তর ঝাঁপা বাঁওড়ের তীরে পল্লীর সুন্দর পরিবেশে গড়ে ওঠে অতি ছোট একটি বাজার। ওই সময় যার নামকরণ করা হয় রাজস্বী রাজগঞ্জ বাজার। জনসংখ্যার দিক বিবেচনাসহ রাজগঞ্জ বাজার ব্যবহারকারী এ অঞ্চলের মানুষ প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধা ও জনগণের কষ্ট লাঘবের কথা চিন্তা করেই চালুয়াহাটি ইউনিয়নের মোবারকপুর, ইচানি, রামনাথপুর গ্রাম ও ঝাঁপা ইউনিয়নের কোমলপুর, দোদাড়িয়া, হানুয়ার, খালিয়া, চন্ডিপুর, মনোহরপুর ও রাজগঞ্জ কলেজপাড়া গ্রাম নিয়ে নতুন রাজগঞ্জ ইউনিয়ন গঠনের দাবি তুলেছেন। এতে বৃহত্তর চালুয়াহাটি ইউনিয়ন ও বন্যাকবলিত ঝাঁপা ইউনিয়নের পরিধির দিকে থেকে কোনো ক্ষতি হবে না বরং উভয় ইউনিয়নের হাজার হাজার ভুক্তভোগী জনগণের অনেকটা সুবিধা হবে বলে মনে করেন এলাকার সচতেন মহল।
সমাজকর্মী নাদিরা বেগম জানান, ঝাঁপা ও চালুয়াহাটি ইউয়িনের শেষ প্রান্তে রাজগঞ্জ বাজারের অবস্থান হওয়ায় ইউনিয়নভিত্তিক কে নো উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ছোঁয়া লাগে না। বর্তমান সময়ে এ বাজারকে আরও উন্নত করতে হলে অবশ্যই রাজগঞ্জকে আলাদা ইউনিয়ন করা প্রয়োজন। সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুল চন্টা বলেন, চালুয়াহাটি ও ঝাঁপা ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে প্রায় চার কিলোমিটার লম্বা এই রাজগঞ্জ বাজার। তবে বৃহত্তর রাজগঞ্জ বাজার হিসেবে প্রসিদ্ধ হলেও ভৌগলিকভাবে রাজগঞ্জ কোনো মৌজা বা ইউনিয়ন নয়। যে কারণে দ্রুতই রাজগঞ্জকে আলাদা একটা ইউনিয়ন খুবই প্রয়োজন বলে মনে করেন সাবেক এ জনপ্রতিনিধি। ঝাঁপা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহা¡ আব্দুস সাত্তার বলেন, উপজেলার কপোতাক্ষ নদ ও ঝাঁপা বাওড়ের তীর ঘেষে গড়ে উঠেছে অতিপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজস্বী রাজগঞ্জ বাজার। এ বাজারে ছোট বড় মিলিয়ে সর্বমোট সাড়ে ১২শ দোকান বরয়েছে। তবে চালুয়াহাটি ও ঝাঁপা ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে বাজাটির অবস্থান হওয়ায় সার্বিক উন্নয়ননের স্বার্থে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজগঞ্জকে আলাদা একটি ইউনিয়ন করা প্রয়োজন। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সাবেক এ জনপ্রতিনিধি। রাজগঞ্জ পূজা উন্নয়ন কমিটির নেতা সুকেশ চন্দ্র দাস বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ রাজগঞ্জমুখি হওয়ায় এই মুহূর্তে রাজগঞ্জকে আলাদা একটা ইউনিয়ন করা খুবই প্রয়োজন।
মোবারকপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন ও ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার বলেন, যেহেতু আমাদের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি রাজগঞ্জ বাজারে হওয়ায় রাজগঞ্জ আলাদা ইউনিয়ন করা খুবই প্রয়োজন। কারণ হিসেবে তারা বলেন প্রায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পায়ে হেটে চালুয়াহাটি ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হয়। তারপরে যেন ভোগান্তির শেষ নেই। কৃষক গোলাম খাঁ, মোটরসাইকেল চালক শাহজাহান ও ভ্যান চালক ফজলুর রহমান বলেন, ভোগান্তির আরেক নাম চালুয়াহাটি ইউনিয়ন পরিষদ। এজন্য আমারা রাজগঞ্জকে আলাদা একটা ইউনিয়ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি। পত্রিকা বিক্রেতা জালাল উদ্দিন ও ইউসুফ আলী বলেন, সরকারের কাছে আমাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন রাজগঞ্জকে আলাদা একটা ইউনিয়ন করে রাজগঞ্জবাসীকে ভোগান্তির হাত থেকে যেন রক্ষা করেন। রাজগঞ্জ বাজার উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ বরেন, জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে দ্রুত রাজগঞ্জকে আলাদা একটি ইউনিয়ন করা খুবই প্রয়োজন।