তরুণ প্রজন্ম বাপ্পি লাহিড়ীর গানে পেয়েছিল সমকালের স্পন্দন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পরপারে পাড়ি জমান সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বুধবার তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কথা। এ শোকের রেশ না কাটতেই খবর ছড়িয়ে পড়ে মারা গেছেন ভারতীয় গায়ক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ী। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ছিলেন বাঙালির সোনালি যুগের প্রতিনিধি। আর বাপ্পি লাহিড়ী এমন এক সময়ের প্রতিনিধি যখন চারপাশে খা খা শূন্যতা। ঠিক সেই সময়ে একেবারে ভিন্ন আমেজে রুপালি পর্দায় জাদু দেখান মিঠুন চক্রবর্তী। আর তার কণ্ঠে গেয়ে উঠেন বাপ্পি লাহিড়ী। ‘আই অ্যাম অ্যা ডিস্কো ড্যান্সার’ কিংবা ‘ইয়াদ আ রাহা হ্যায়’ তৈরি করে নয়া অধ্যায়। ততদিনে রেকর্ডের যুগ পেরিয়ে শুরু হয়েছে ক্যাসেটের জামানা। রাহুল দেববর্মণের মতো এক জিনিয়াসের হাত ধরে ছয়ের দশক থেকেই একটু একটু করে বদলাতে শুরু করেছিল হিন্দি প্লেব্যাক গানের ধারা। ঢুকে পড়ছিল পাশ্চাত্য পপ কালচার। সেই ধারাকে এক নতুন মোড় দেন বাপ্পি লাহিড়ী। মাত্র ১৯ বছরে পাড়ি দেন টিনসেল টাউনে। ১৯৭৫ সালে ‘জাখমি’ সিনেমায় প্রথমবার নিজেকে চেনান এই তরুণ। কিন্তু তার আসল দৌড়টা শুরু হয় আরেকটু পরে। অর্থাৎ ‘ডিস্কো ড্যান্সার’ থেকে অনন্য উচ্চতায় উঠে যান তিনি।
১৯৮৬ সালে ৩৩টি সিনেমার জন্য ১৮০টি গান রেকর্ড গড়া থেকে পরিষ্কার, সেই সময় তার গানের চাহিদা কোথায় পৌঁছেছিল। ১৯৮৯ সালে জোনাথন রসের সঙ্গে লাইভ অনুষ্ঠান কিংবা হলিউড সিনেমায় ‘জিমি জিমি আজা আজা’-এর ব্যবহার বুঝিয়ে দেয় কীভাবে জনপ্রিয়তা তার শরীরের অলঙ্কারের মতোই জৌলুসময় হয়ে উঠেছিল মাত্র কয়েক বছরে। সেই যুগে বলিউডের দুই বিখ্যাত ‘ড্যান্সিং হিরো’ জিতেন্দ্র ও মিঠুনের একের পর এক হিট গানের আবেদন আজও কমেনি, তা বুঝতে একবার ইউটিউবে গানগুলোর কমেন্ট সেকশনে উঁকি দিলেই যথেষ্ট। আবার ২০১১ সালে বিদ্যা বালানের ‘ডার্টি পিকচার’ সিনেমায় ‘উ লা লা’ গানটির তরতাজা গড়ন বুঝিয়ে দিয়েছিল বয়স বাড়লেও ভেতরে ভেতরে বাপ্পি লাহিড়ী সমসাময়িকই। শুধু ডিস্কো নয়, রোমান্টিক গানেও বাপ্পি লাহিড়ী বারবার বাজিমাত করেছেন। পাশাপাশি কাওয়ালি কিংবা রাগাশ্রয়ী গানেও চমকে দিয়েছেন। তবু বাপ্পি লাহিড়ী বলতে মানুষের মনে ডিস্কো গানের ঝকঝকে ‘বিট’ মনে পড়তে বাধ্য। ‘জিমি জিমি জিমি আজা আজা আজা’, ‘ইয়াদ আ রাহা হ্যায়’, ‘রাত বাকি বাত বাকি’, ‘জাওয়ানি জানেমান’, ‘টাকি টাকি’, ‘ইয়ার বিনা চ্যান কাহা মেরে’, ‘ডান্স ডান্স’-এর মতো গান আজও অনায়াসে বেজে ওঠে ঝলমলে পার্টিতে। সময় বদলেছে। বহিরাঙ্গ বদলালেও ভেতরে ভেতরে যে অপরিবর্তনীয়, সেই সত্যিটা বুঝে গিয়েছিলেন বাপ্পি। যার কারণে সমসাময়িক থাকতে পেরেছেন তিনি। কালো চশমা আর ভরি ভরি সোনার হারের জৌলুসময় আবেদনটুকুই নয়, বাপ্পির আসল অলঙ্কার বোধহয় তার গানের ভেতরে থাকা ‘বিট’, যা ঝলমলে রামধনুর মতো যৌবনকে চিরকাল সংজ্ঞায়িত করে চলবে।