কেশবপুরে সারা বছরই পানিবন্দি ১০টি গ্রামের হাজারো পরিবার

0

জয়দেব চক্রবর্ত্তী, কেশবপুর (যশোর) ॥ যশোরের কেশবপুরে ১০টি গ্রামের হাজারো পরিবার সারা বছরই পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। এখানকার মানুষেরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। বসতবাড়িতে পানি ওঠার কারণে অনেক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। এসব এলাকার মানুষের বর্তমানে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ডিঙি নৌকা ও বাঁশের সাঁকো। ব্রিজ, কালভার্টের মুখ বন্ধসহ ঘেরের অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধের কারণে জলাবদ্ধতায় ভেঙে পড়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো। ভবদহ প্রকল্পের আওতায় পাঁজিয়া ও সুফলাকাটি ইউনিয়নের কালিচরণপুর, বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর, বেতিখোলা, মাদারডাঙ্গা, নারায়নপুর, পাথরঘাটা, আড়–য়া, ময়নাপুর, সানতলা ও গৃধরনগরসহ আশপাশের গ্রামের হাজারো মানুষ ৭/৮ বছর ধরে পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। এর মধ্যে বাগডাঙ্গা ও মনোহরনগর গ্রামের মানুষ সম্পূর্ণ পানিবন্দি। অতীতে এসব এলাকার মানুষ জমিতে চাষাবাদ ও খাল-বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। ২০০০ সালের দিকে এলাকার প্রভাবশালীরা বিলগুলো দখলে নিয়ে মাছের ঘের করেন। এসময় ঘের মালিকরা ব্রিজ, কালভার্টের মুখ ভরাটসহ অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে ফেলে। এরপরও ঘের মালিকরা মাছ চাষের জন্য শুষ্ক মওসুমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে বিল ভরাট করে। ফলে বর্ষাকালে যেনতেন বৃষ্টিতেই পানি মানুষের বসতবাড়িতে উঠে যায়, এলাকায় দেখা দেয় কৃত্রিম জলাবদ্ধতা। প্রায় সারা বছরই মানুষের বসতভিটায় পানি থাকায় এলাকার গ্রামীণ অবকাঠামো একেবারেই ভেঙে পড়েছে। পানিবন্দি মানুষেরা বাড়িতে ডিঙি নৌকা ও বাঁশের সাঁকো বানিয়ে যাতায়াত করছে।
বাগডাঙ্গা গ্রামের অনাথ বন্ধু সরকার, মিহির সরকার জানান, ‘গত আশ্বিন মাস থেকে আমাদের গ্রামের প্রতিটি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে জল। আজও জল নামেনি। এরপর মনিরামপুর এলাকার ঘের মালিকদের পাশাপাশি পাঁজিয়া ও সুফলাকাটি ইউনিয়নের ঘের মালিকরা দিন রাত স্যালোমেশিন দিয়ে বিলের পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম চালানোর ফলে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় তা উঠে যাচ্ছে মানুষের বসতভিটায়। বসতভিটায় পানি ওঠার কারণে নারায়নপুর গ্রামের ইজ্জেত আলী মোড়লসহ অনেকের পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। এলাকার নারী-পুরুষরা সারাদিন পানিতে চলাচলের কারণে জ্বর, সর্দি-কাশি, চুলকানিসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ৫/৬ বছর ধরে কোন ফসলের আবাদ হচ্ছে না। বিল সংলগ্ন এলাকার কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে পানি নিষ্কাশনে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেলেও কার্যত কোন সুফল আসেনি।’ ২৭ বিল পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক বাবর আলী গোলদার বলেন, মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে রাজনীতি চলছে। শ্রী নদী পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশন করতে গিয়ে ঘের মালিক আকবার আলীর নারায়নপুর বিলের ঘেরের বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন করে পানি মানুষের বসতভিটায় উঠে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে চলতি বোরো মওসুমে ভবদহ সংলগ্ন ১৬ বিলের সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি পতিত থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, ভবদহ সংলগ্ন ২৭ বিলের পানি কাটাখালির স্লইস গেট হয়ে ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেট দিয়ে শ্রী নদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু শ্রী নদী পলিতে ভরাট হওয়ার কারণে পানি সরছে না। ভবদহ প্রকল্পে শ্রী নদী অন্তর্ভূক্ত আছে। ভবদহ প্রকল্প অনুমোদন না হলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।