উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিতে বাড়ছে বেকারত্ব

0

ব্যাপক উন্নয়নের দাবিতে সরকারের মন্ত্রী ও প্রশাসনিক কর্তারা যখন খই ফুটাচ্ছেন তখন পত্র-পত্রিকায় খবর হচ্ছে উন্নয়নে গতি নেই। বলা হচ্ছে, অসংখ্য প্রকল্প উদ্বোধন আর প্রচারে আটকে আছে বাজেট বাস্তবায়নে ধীরগতির অভিযোগ। ৩ মাস পর পরই হচ্ছে। কিন্তু বাজেট ঘোষিত বরাদ্দ বছর শেষে অর্ধেকও গৃহীত প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে না।
বাজেট হচ্ছে সরকারের এক বছরের আয়-ব্যয়ের আগাম হিসাব। সেবা থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে রাষ্ট্রের নাগরিকরা যে সেবা ও উন্নয়ন পেতে চায় বা রাষ্ট্র যে সেবা নিশ্চিত করতে চায়, তা এই বাজেটের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়। বাজেটে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার ওপর নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। শুধু অবকাঠামোগত নয়, সব ধরনের উন্নয়নই বাজেটের ওপর নির্ভরশীল। দেশের শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব খাতেই বরাদ্দ থাকে বাজেটে। বাজেট বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে দেশের অর্থনীতির ভালো-মন্দ। আর বাস্তবায়ন নির্ভর করে সুশাসন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার ওপর। যা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে খোদ সরকার সমর্থক সুধিমহলে। অবশ্য গত দুই বছর করোনার অভিঘাতে অনেক প্রকল্পই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। ফলে, উন্নয়ন কাজ অনেকটাই স্থবির ছিল। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে করোনা নিয়ন্ত্রণে ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যও ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তার পরও আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে ২ শতাংশ পিছিয়ে আছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর এডিপিতে গত অর্থবছরের চেয়ে কম ব্যয় হয়েছে। চলতি অর্থবছর এডিপি ধরা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। ছয় মাসে এডিপি ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩৪ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপিতে ব্যয় হয়েছিল ৩৬ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে অগ্রগতির হার নিয়ে অর্থ বিভাগ যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকার ব্যয় করতে পেরেছে মাত্র এক লাখ ৪৯ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ, যা গত অর্থবছর ছিল ২৭ শতাংশ। বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারকে অর্থবছরের বাকি ছয় মাসে ৭৫ শতাংশ বা চার লাখ ৫২ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। যা রীতিমতো অসম্ভব বলে গণ্য করছেন বাজেট বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ এখন সত্যিকার অর্থেই এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অর্থনীতিতে করোনার বিরূপ প্রভাব পড়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বাজার ঊর্ধ্বমুখী। কারণে-অকারণে বাড়ছে চাল, ডাল, তেলসহ সকল জিনিসপত্রের দাম। নতুন কর্মসংস্থান নেই কোনো খাতে। করোনাকালে বেড়েছে বেকারত্ব। এ দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত উভয় শ্রেণির মানুষের আয় কমেছে। এ অবস্থায় দেশের বেশির ভাগ মানুষের জীবনে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়াই এখন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাজেট বাস্তবায়নে সরকারকে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। গতি আনতে হবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে। ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধনের পর আটকে থাকা প্রকল্প সচল হলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি বেকারত্বের সংখ্যাও কমবে। বিষয়টি সরকারকে ভাবতে হবে।