বাগেরহাটে সিএনজি-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেল ৪ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর

0

আলী আকবর টুটুল, স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাগেরহাটের ফকিরহাটে সিএনজি ও ট্রাকের মুখোমখি সংঘর্ষে একই মাদ্রাসার ৪ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এসময় আরও দু’জন আহত হয়েছে। গত শনিবার গভীর রাতে খুলনা-মোংলা মহাসডকের ফকিরহাট উপজেলার শ্যামবাগাত এলাকায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষার্থীদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শিক্ষার্থীরা খুলনা আলিয়া কামিল মাদরাসায় আন্তর্জাতিক কিরাত সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে বাগেরহাটে নিজ মাদরাসার উদ্দেশে ফিরছিল। হাইওয়ে পুলিশ রাতেই নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে। গতকাল রোববার সকালে নিহতদের মরদেহ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। এছাড়া আহতদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতরা হচ্ছে-বাগেরহাট সদর উপজেলার রনজিতপুর গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে হাফেজ আব্দুল্লাহ (২৬), সাতক্ষীরা জেলার আশাশনি উপজেলার মলেঙ্গা গ্রামের আরশাব আলীর ছেলে সালাহউদ্দীন (১৭), ফকিরহাট উপজেলার পিলজংগ গ্রামের আবুবক্কর হাওলাদারের ছেলে সাকিব (১৭) ও রামপাল উপজেলার মালডাঙ্গা গ্রামের ফেরদাউসের ছেলে আব্দুল গফুর (১৮)। সবাই মাদ্রাসার হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করতো।
বাগেরহাট কাটাখালী হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি মোহাম্মদ আলী বলেন, শনিবার রাত বারোটার দিকে খুলনা থেকে বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা একটি সিএনজি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার শ্যামবাগাত এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজিতে থাকা তিন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এসময় সিএনজিতে থাকা চালকসহ আরও তিনজন আহত হন। শীতের মধ্য মহাসড়কে ঘন কুয়াশা থাকায় পথ পরিষ্কার দেখতে না পাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নিহতরা শনিবার বিকেলে বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর মাদ্রাসার একদল শিক্ষার্থী খুলনায় ইসলামী অনুষ্ঠানে (ওয়াজ মাহফিল) গিয়েছিলেন। তারা সেখান থেকে মাদ্রাসায় ফেরার পথে এ দুর্ঘটনায় পড়ে। নিহতরা বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া হাকিমপুর মুহা. আলীশাহ দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। তাদের মরদেহ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর মধ্যে সাকিবের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় রেফার করা হলে পথিমধ্যে সে মারা যায়।
এদিকে হাকিমপুর কওমী মাদ্রাসার ৪ শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যুতে শিক্ষক ও সহপাঠীদের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে উঠে। সকাল ৯ টায় বাগেরহাট সদর উপজেলার রনজিতপুর গ্রামের নিহত তরুণ বক্তা হাফেজ আব্দুল্লাহ’র বাড়িতে গেলে দেখা যায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। ছেলের শোকে তার বাবা হোসেন আলীর বার বার মুর্ছা যান। এসময় এলাকার শত শত নারী-পুরুষেরও অশ্রু বাঁধ মানেনি। গ্রামের একজন তরুণ বক্তা না ফেরার দেশে চলে যাবে কেউ কখনও ভাবতেও পারছেন না। আর মাত্র দু’মাস পর মাওলানা হিসাবে পাগড়ী পরানোর কথা ছিল আব্দুল্লাহ’র।
নিহত আব্দুল্লাহ’র বাবা হোসেন আলী বলেন, একমাত্র ছেলেকে মানুষের মত মানুষ বানানোর জন্যই মাদ্রাসায় দিয়ে ছিলাম। নিজের পড়ালেখার আগ্রহের কমতি ছিল না আব্দুল্লাহ’র। অল্প বয়সে ভাল বক্তা হয়ে উঠেছিল। এলাকার মানুষও ওকে ভাল বাসতো। আজ আমি সব কিছুই হারালাম। প্রতিবেশী আব্দুস সালাম বলেন, আব্দুল্লাহ ছিল আমাদের গ্রামের গর্ব। মাদ্রাসার বড় হুজুরের সাথে থাকতো সে। অবিকল হুজুরের মত বক্তা হয়ে উঠছিল। আমরা একজন ইসলাম ধর্মীয় বক্তাকে হারালাম।
হাকিমপুর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল মাবুদ বলেন, মাদ্রাসার ছাত্ররা শনিবার সন্ধ্যায় খুলনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় আন্তর্জাতিক কিরাত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিল। রাতে খুলনা থেকে সিএনজিযোগে মাদ্রাসার উদ্দেশ্য রওনা দেন। এ সময় শ্যামবাগাত এলাকার মুনস্টার জুট মিলের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ডাম্পার ট্রাকের সঙ্গে সিএনজির (মাহিন্দ্র) মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন মারা যান। আমরা চার মেধাবী শিক্ষার্থীকে হারালাম। যা কখনও পূরণ হবার নয়।
এদিকে গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া হাকিমপুর মুহা. আলীশাহ দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে নিহত তিন শিক্ষার্থীর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজা শেষে নিহতদের লাশ তাদের নিজ বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় চার শিক্ষার্থী নিহত হওয়ায় এলাকা জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নামাজে জানাজায় অংশ নেওয়া বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় আমরা সকালেই মাদরাসায় গিয়েছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দাফন-কাফনে প্রাথমিক সহায়তার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত এবং পরিবারের যে কোনো প্রয়োজনে সহযোগিতারও আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।