গরুর সংকট নেই, সিন্ডকেটের দখলে বাজার॥ যশোরে একদিনে গরুর মাংসের দাম কেজিতে ৮০ টাকা বাড়লো

0

আকরামুজ্জামান ॥ সিন্ডিকেটের কবলে চলে গেছে যশোরের মাংসের বাজার। হঠাৎ করেই কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে গরুর মাংসের দাম। ব্যবসায়িরা বলছেন, বাজারে গরুর সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। তবে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার দাবি জেলায় চাহিদার চেয়েও খামারি পর্যায়ে বেশি গরু রয়েছে। আর ক্রেতাদের দাবি ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটের কারণেই গরুর মাংসের এ অযৌক্তিক দাম বেড়েছে। এ পরিস্থিতির জন্য সরকারিভাবে বাজার তদারকির অভাবকেই দায়ি করেছেন সাধারণ মানুষ।
বৃহস্পতিবার বিকেলেও যশোর কাটেরপুল মাংসের বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা যায় ৫২০ থেকে ৫৩০ টাকা কেজি দরে। অথচ সেই মাংস একদিনের ব্যবধানে শুক্রবার বেড়ে দাড়ায় প্রতিকেজি ৬০০ টাকা। সরকারি ছুটির দিনে বাজারে মাংস কিনতে এসে রীতিমত হতবাক ক্রেতারা। বাজারে মাংস কিনতে আসা শহরের খালদার রোড এলাকার বাসিন্দা শামীম আকতার বলেন, এমন অরাজক পরিস্থিতি মেনে নেয়া যায়না। কোনো ঘোষণা ছাড়াই কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দাম বৃদ্ধি। অথচ কেউ দেখার নেই। বাজার তদারকির অভাবেই কসাইরা সিন্ডিকেট করে গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধি করেছেন বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।
একই বাজারে কথা হয়, আলিমুল রানা নামে আরেক ক্রেতার সাথে। শহরের বারান্দীপাড়া থেকে এসেছেন ৪ কেজি গরুর মাংস কেনার জন্য। দাম বেড়ে যাওয়ায় তিনি ৪ কেজির স্থলে ৩ কেজি মাংস কিনেছেন বলে জানান। তিনি দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ী যৌক্তিক জবাব দিতে পারছেন না বলে তিনি অভিযোগ করেন। কথা হয়, কাটেরপুল বাজারের গরুর মাংস ব্যবসায়ী শাহীন হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, সকাল থেকেই ক্রেতাদের সাথে আমাদেও ঝগড়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো কিছু করার নেই। বেশি দামে গরু কিনে এনেছি। তাই মাংসের দাম বাড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। এখন থেকে এ দামেই গরুর মাংস কিনে খেতে হবে সবাইকে। একই বাজারে কথা মাংস ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন আনুর সাথে। তিনিও সাফ জানিয়ে দেন আমাদের কিছুই করার নেই। বাজারে গরুর তীব্র সঙ্কট রয়েছে। আগে কোনো হাঠে ১০০ গরু উঠলে এখন সেখানে ২০/৩০ টি গরুও পাওয়া যাচ্ছে না। যেকারণে বেশি দামে গরু কিনতে বাধ্য হতে হচ্ছে।
দ্দধু কাটেরপুল বাজার নয়, শহরের রেলবাজার, চাঁচড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায় একই অবস্থা। সেখানেও মাংস বিক্রেতারা একযোগে ৬০০ টাকা দরে কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। রেলবাজারের মাংস বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে গরু আসা একদম বন্ধ। গত কয়েক মাসে গরুর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক খামারি দেশী গরু পালন থেকে বিরত রয়েছে। এর বড় প্রভাব পড়েছে মাংসের বাজারে। তবে হঠাৎ কেনো একযোগে দাম বেড়ে গেলো ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে আমরা অনেক দিন থেকেই ভাবছিলাম। শহরের কাটেরপুল ও চাঁচড়া বাজারের মাংস বিক্রেতা সেলিম হোসেন ও আব্দুল কাদের বলেন, বর্তমান গরুর সঙ্কট দেখা দেয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। সামনে গরুর সরবরাহ বাড়লে দাম আবার আগের পর্যায়ে চলে যাবে।
তবে মাংস ব্যবাসায়িদের এ দাবি নাকচ করেছেন, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাসেদুল হক। তিনি বলেন, জেলায় সাড়ে ৫ হাজার খামারিতে প্রায় ৮ লাখ গবাদি পশু রয়েছে। ফলে ব্যবসায়িরা গরুর সঙ্কটের যে কথা বলছেন তা সঠিক নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত কুরবানী উপলক্ষে জেলার খামারিরা যে গরু পালন করেছিলেন তার বিরাট একটি অংশ অবিক্রিত ছিলো। সেসব গরু এখনো খামারি পর্যায়ে রয়েছে। ফলে জেলায় গরুর কোনো সঙ্কট নেই। বরং চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে। ক্রেতারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে মধ্যবিত্তের খাদ্যতালিকায় আমিষের অন্যতম উৎস হিসেবে গরুর মাংস একটি বড় স্থান দখল করে ছিল। মধ্যবিত্তরা তো বটেই নিম্ন মধ্যবিত্তরা মাসে অন্তত একবার গরুুুর মাংসকে খাদ্যতালিকায় রাখতে সক্ষম হতো। কিন্তু মাংসের ধারাবাহিক মুল্যবৃদ্ধিতে এখন গরুর মাংস খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পড়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় দ্রুত বাজার তদারকির দাবি জানান ক্রেতারা। এ বিষয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র বিপণন কর্মকতা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, একদিনের ব্যবধানে গরুর মাংস কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা বৃদ্ধি পাওয়া অবশ্যই হতাশাজনক। এ বিষয়ে আগামী রোববার খোঁজ নিয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা কেনো মাংসের দাম বাড়িয়েছেন তার সঠিক যুক্তি দেখাতে ব্যর্থ হলে অবশ্যই তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।