যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভেজাল বিরোধী অভিযানে অস্বচ্ছতার অভিযোগ

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ভেজালবিরোধী অভিযানে নামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জব্দকৃত মালামাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। মালামাল নিলামে বিক্রির ক্ষেত্রেও রয়েছে অস্বচ্ছতার অভিযোগ। অভিযোগটি করেছেন, সদর উপজেলার ঘুরুলিয়া সাদ্দাম মোড়ের সানওভার অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি’র স্বত্ত্বাধিকারী সোহানুর রহমান শিহাব। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৯৫ সালে সার কারখানাটি স্থাপিত। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত কারখানা থেকে সার উৎপাদন করে আসছেন। তার অভিযোগ কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাজ্জাদ হোসেন ভেজালবিরোধী অভিযানের নামে বিভিন্ন সময় টাকা দাবি করেন। টাকা না দেয়ার জের ধরে বিগত ৫ আগস্ট তিনি কারখানায় যান। পরে ভ্রাম্যমান আদালত নিয়ে ভেজাল সার উৎপাদনের অভিযোগ এনে অভিযান চালান। সেই অভিযানের মাধ্যমে বিক্রয় অযোগ্য এক টন ভেজাল টিএসপি, দেড় টন টাইলসের গুড়া, ৭০ বস্তা কাঠের গুঁড়া ও নকল প্যাকেট জব্দ করা হয়। বিক্রয়যোগ্য বালি, স্যালোমেশিন মটর, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট, মিকচার মেশিন, ফসল জব্দ করা হয়। ওই অভিযানে ৪০০ লিটার এসিড জব্দ তালিকায় দেখানো হয়। কারখানার মালিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। মালিকের অভিযোগ, অভিযান চালানোর পূর্বে কারখানটির দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ ছিল। সেখানে পূর্বে উৎপাদিত কোন সার ছিল না। টাইলসের গুঁড়া, বালি, টিএসপি জাতীয় কিছুই ছিলো না। সেখানে চায়না থেকে আমদানিকৃত ৮২ দশমিক ৫ টন ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ছিল। যার মূল্য ১৭ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪০ টাকা। ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা মূল্যের শূন্য দশমিক ৫ জন জিংক এ্যাশ, ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা মূল্যের ২ দশমিক ২ টন জিংক সালফেট, ৮টি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক মটর, ৪টি মিকচার মেশিন, ১টি জেনারেটর, ৬টি ওয়েট মেশিন, ¯েপ্র, সেলাই, ক্লোয়ার, ক্রাশার এই জাতীয় ৮টি মেশিন ছিল। বহু বৈদ্যুতিক পাখাসহ বিভিন্ন মেশিনারী যন্ত্রপাতি ছিল। যার মূল্য ৩০ লাখ টাকার ওপরে।
এদিকে, নিলামের মাধ্যমে বিক্রয়যোগ্য জব্দকৃত মালামালের মূল্য দেখানো হয় ২ লাখ ২০ হাজার ৭০ টাকা। আর ৪০০ লিটার সালফিউরিক এসিডের কোন ক্রেতা না পাওয়ায় সেটি উপজেলা পরিষদে সংরক্ষিত আছে বলে উল্লেখ করা হয়। এদিকে, নিলাম প্রক্রিয়া নিয়েও অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে। ৫ তারিখের অভিযানে জব্দকৃত মালামালের নিলামের দিন নির্ধারণ করা হয় একই মাসের ১৩ তারিখ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাজ্জাদ হোসেন নিজেকে সভাপতি করে তিন সদস্যবিশিষ্ট নিলাম কমিটি গঠন করেন। তিনিই আবার কমিটির সদস্য সচিব। আগস্ট মাসের ১০ তারিখ নিলাম কমিটি ১৫ তারিখ নিলামে দিনক্ষণ ঠিক করলেও ১৩ তারিখ নিলাম কার্য সম্পন্ন করা হয়। একই দিন নিলামের সর্বোচ্চ দরদাতা মেসার্স আবীর এন্টারপ্রাইজকে মালামাল হস্তান্তর করা হয়। এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাজ্জাদ হোসেনের দপ্তরে একাধিকবার গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত ০১৭৬১৫৫০০৫০ নাম্বারে মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি একবার রিসিভ করে ব্যস্ত আছি বলে কেটে দেন। পরে আরেকবার তিনি ফোন রিসিভ করেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন বলেন, আমি নিজে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছিলাম। জব্দকৃত মালগুলো কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনের হেফাজত দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে উনি নিলাম কমিটির মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বৈধ ক্রেতার কাছে বিক্রি করেন এবং টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেন। নিলাম কমিটি কোন ভুল করেছে কি না সেটি তিনি না দেখে বলতে পারবেন না বলে জানান।