চৌগাছার গ্রাম পাড়া মহল্লায় চলছে কুমড়া বড়ি তৈরী ধুম

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছার গ্রাম পাড়া মহল্লায় এখন কুমড়া বড়ি তৈরীর ধুম পড়ে গেছে। প্রতিবছর শীত এলেই পাড়া মহল্লার গৃহবধুরা যেন বড়ি তৈরীর প্রতিযোগীতায় নেমে পড়েন। অন্য বছর গুলোর মত এবছরও তার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনে। রাতের আধাঁরে ঢেঁকির ঢুকঢুক শব্দ জানান দেই কোন না কোন বাড়িতে চলছে বড়ি বানানোর কাজ। আর সকাল হলেই মহল্লার নারীরা দলবেধে জাল কিংবা কাপড়ের পরে বড়ি বসাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অত্যান্ত সুস্বাদু খাদ্য উপকরণ হলো কুমড়ার বড়ি। ঠিক কবে থেকে বাঙালির রান্নাঘরে বড়ির আগমন তা জানা যায়নি। তবে প্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন তরকারির সঙ্গে বড়ির ব্যবহার হচ্ছে। গ্রাম বাংলায় প্রবাদ আছে ’শাক থেকে চিংড়ি মাছ বড়ির গুনে বদলে যায় রান্নার স্বাদ’।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের পেটভরা গ্রামে যেয়ে দেখা যায়, গ্রামটির অধিকাংশ বাড়িতেই চলছে বড়ি বসানোর কাজ। গৃহিনীরা সংসারের প্রতি দিনের সকালের কাজ বেশ আগে ভাগেই শেষ করে বসে গেছেন বাড়ি দিতে। পাকা বাড়ির ছাদে কিংবা উঠানের মাঝখানে দলবেধে বসে সকলেই বড়ি দিচ্ছেন। কেউ বড়ি বসানোর পাত্র প্রস্তুত কেউ বা বড়বড় গামলায় কুমড়া আর কলাই দিয়ে ঢেকিতে কুটে আনা মালামাল মিশিয়ে নিতে ব্যস্ত। এ সময় কথা হয় গ্রামটির বয়োবৃদ্ধা হায়াতন নেছার সাথে। তিনি বলেন, খুব ছোটবেলা থেকেই মা চাচিদের সাথে বড়ি দেয়া শিখেছি। সে সময়ে শুধু মাত্র ঢেঁকিতে বড়ি কুটা হত। কিন্তু এখনকার সময়ে ঢেঁকির পাশাপাশি যন্ত্রেরকলে কুটা হচ্ছে বড়ি। তবে ঢেঁকির বড়ির স্বাদ সব থেকে বেশি। তিনি বলেন, বড়ি গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে অত্যান্ত প্রিয় একটি তরকারী। এটি যে কোন তরকারীর সাথে রান্না করা যায় আবার শুধু বড়ি মাছ দিয়েও রান্না করা হয়। ঢেঁকিতে কুটা বড়ি এক বছর ধরে ঘরে রেখে খাওয়া যায়। আধুনিক সভ্যতার যুগে গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্য অনেকটাই যেন কোনঠাসা হয়ে পড়েছে মনে করেন ওই বৃদ্ধা। গ্রামটির গৃহবধু বিউটি খাতুন, রুপভান বেগম বলেন, কুমড়া বড়ি আমাদের সকলের কাছেই অত্যান্ত প্রিয়। এই বড়ি গ্রামের পাশাপাশি শহরের মানুষের কাছে প্রিয় খাধ্য হিসেবে পরিচিত। শীতকাল এলেই আমরা গ্রামের বধুরা একত্রিত হয়ে পর্যায়ক্রমে সকলের বড়ি কুটে দিয়ে থাকি। রাতে কনকনে শীত উপেক্ষা করে চলে বড়ি কুটার কাজ আর সকালে আবার সবাই মিলে সেই বড়ি জাল বা কাপড়ের উপর বসাতে ব্যস্ত থাকি। গ্রামের নারীরা জানান, ডাল সরারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন পরিস্কার পনিতে ধুয়ে নিতে হয়। এর আগে কুমড়া কেটে ভিতরের আশ বের করে সেই আশ ভাল ভাবে পানিতে ধুয়ে পরিস্কার করতে হয়। এরপর রাতে ঢেঁকি বা কলের মেশিনে তা কুটে প্রস্তুত করতে হয়। একটি বড়ি দুই দিন রোদে শুকানোর পর তা খাবারের জন্য উপযুক্ত হয়। তবে রোদের প্রভাব কম হলে বড়ি তার পরিপূর্ণতা পাইনা। পাড়া মহল্লার গৃহবধুদের হাতে তৈরী এই বড়ি বর্তমানে দেশের শহর থেকে শুরু করে বিদেশেও যাচ্ছে বলে জানান অনেকে।