এবার হট স্পট ঢাকা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥করোনা ফের লাল বার্তা নিয়ে ঊর্ধ্বগতিতে হাঁটছে। প্রতিদিনই দেশে শনাক্ত হার বাড়ছে। এবার করোনার হট স্পট রাজধানী ঢাকা। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া ৮৯২ জনের মধ্যে ৭২৩ জনই ঢাকা মহানগরের। অর্থাৎ মোট শনাক্ত রোগীর ৮১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশই রাজধানীর বাসিন্দা। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনও ঢাকায় গুচ্ছ ভিত্তিতে ছড়াচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২০ শতাংশে পৌঁছেছে। যা আগের দিন ছিল ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। এ সময়ে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৮ হাজার ৯০ জনে। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৮০৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১২ জন এবং এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫০ হাজার ১৬৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে ৮৫২টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ হাজার ৩০২টি নমুনা সংগ্রহ এবং ২১ হাজার ২৫১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৯০১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩ জনই নারী। দেশে মোট পুরুষ মারা গেছেন ১৭ হাজার ৯৬৪ জন এবং নারী ১০ হাজার ১২৬ জন। তাদের মধ্যে বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের ১ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের ১ জন রয়েছেন। মারা যাওয়া ৩ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন বাসিন্দা রয়েছেন। মারা যাওয়া ৩ জনই সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শনাক্ত হওয়া ৮৯২ জনের মধ্যে ৭২৩ জনই ঢাকা মহানগরের। অর্থাৎ মোট শনাক্ত রোগীর ৮১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশই রাজধানীর বাসিন্দা। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে ফরিদপুরে চারজন, গাজীপুরে চারজন, কিশোরগঞ্জে একজন, মানিকগঞ্জে একজন, মুন্সীগঞ্জে দুইজন, নারায়ণগঞ্জে তিনজন ও টাঙ্গাইলে একজন। বছরের প্রথম দিন ১লা জানুয়ারি শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং পরদিন ২রা জানুয়ারি তা বেড়ে হয় ২ দশমিক ৯১ শতাংশ। তবে ৩রা জানুয়ারি শনাক্তের হার ৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এদিন শনাক্তের হার ছিল ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ৪ঠা জানুয়ারি শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৯১ শতাংশে। ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহে পাঁচজন এবং জামালপুরে একজন আক্রান্ত হয়েছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম জেলায় ৫৩ জন, কক্সবাজারে ছয়জন, ফেনীতে একজন, নোয়াখালীতে তিনজন, চাঁদপুরে সাতজন, কুমিল্লায় একজন শনাক্ত হয়েছেন। রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলায় ১৮ জন, নাটোরে দুজন, পাবনায় একজন, সিরাজগঞ্জে একজন এবং বগুড়ায় পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছেন। রংপুর বিভাগের রংপুর জেলায় পাঁচজন এবং দিনাজপুরে সাতজন। খুলনা বিভাগে ১০ জন, বরিশাল বিভাগে ৮ জন এবং সিলেট বিভাগে ১৯ জন করোনা রোগী রয়েছেন।
এদিকে, গতকাল কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনা একটু একটু করে ঊর্ধ্বগামী হচ্ছে। বর্তমানে করোনার সংক্রমণ বাড়লেও নমুনা পরীক্ষা করতে যাওয়া আগ্রহী লোকের সংখ্যা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় কম দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো জেলায় নমুনা কম সংগ্রহ হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে সবাই মিলে কাজ করলে সাফল্য সুনিশ্চিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে করোনা রোগীর সংখ্যা বেশি কিন্তু সেটি অস্বাভাবিক বেশি নয়। সে সংখ্যক রোগীকে হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত আয়োজন রয়েছে। হাসপাতালে বেড, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ন্যাজেল ক্যানুলা ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের সরবরাহ দেয়া রয়েছে। নাজমুল ইসলাম বলেন, বিশ্বে মহামারি করোনাভাইরাসে ২৯ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ৫৪ লাখেরও বেশি মানুষ মূল্যবান প্রাণ হারিয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে ওমিক্রনের যে বিস্তার ঘটেছে সে প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে প্রস্তুতির জায়গা থেকে বাংলাদেশ নভেম্বর মাস থেকেই কাজ করছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সামগ্রিক করোনার যে নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল তা একটু একটু করে ঊর্ধ্বগামী হচ্ছে। করোনা শনাক্তে গত এক সপ্তাহে ১ লাখ ৩৬ হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়। যা পূর্ববর্তী সপ্তাহের তুলনায় ১৪ হাজারেরও বেশি। শতকরা হিসাবে তা ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। গত এক সপ্তাহে ৩ হাজার ৮৯২ জন রোগী শনাক্ত হয়। যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ১ হাজার ৫০৩ জন বেশি। শতকরা হিসাবে ৬৩ শতাংশের বেশি রোগী শনাক্ত হয়। গত সাতদিনে মারা যান ২৫ জন যা পূর্ববর্তী সাতদিনের তুলনায় ১৪ জন বেশি। তিনি বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশে ৮৫২টি আরটিপিসিআর, জিন এক্সপার্ট এবং র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট ল্যাবরেটরিতে করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। বর্তমানে করোনার সংক্রমণ বাড়লেও নমুনা পরীক্ষা করতে যাওয়া আগ্রহী লোকের সংখ্যা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় কম দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো জেলায় নমুনা কম সংগ্রহ হচ্ছে। ৬০ বছরের অধিক সংখ্যক বয়সীদের মধ্যেই করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশি হচ্ছে।