কক্সবাজারে দলবদ্ধ ‘ধর্ষণ’ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দুঃখজনক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে ‘স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের’ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যকে অনভিপ্রেত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। বিষয়টি নিয়ে আদালত বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন স্টেটমেন্ট কাম্য নয়। ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য আসলে পরবর্তীতে সত্য ঘটনা উদঘাটন হলেও সাধারণ মানুষ নানা রকম ধারণা পোষণ করেন।’ এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, ঘটনাটির তদন্ত চলমান রয়েছে। পরে এই ঘটনায় করা রিটের শুনানি (স্ট্যান্ডওভার) মূলতবি করেন আদালত। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া রাসেল। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাশেদা চৌধুরী নিলু। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ ও দেলোয়ার হোসেন।
শুনানিতে আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া বলেন, কক্সবাজারের ঘটনায় মিডিয়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য আসছে। তাই বিষয়টিতে বিচারিক অনুসন্ধান দরকার। তখন মিডিয়া তথ্য খুঁজবেই তাই মিডিয়াকে দোষ দিয়ে লাভ নেই উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেন, ‘গ্রেফতার-মামলা কিংবা তদন্তের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি এজেন্সি আরেকটি এজেন্সিকে সহযোগিতা করতে পারে। তবে, তদন্ত চলাকালে তদন্ত কর্মকর্তাদের (আইও) কথা কম বলাই ভালো।’ পরে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন ভিন্ন ভিন্ন স্টেটমেন্ট না দেয়। এরপর রিটটি স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) করা হয়। এর আগে সোমবার (৩ জানুয়ারি) কক্সবাজারের ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট আবেদন করা হয়। জেলা ও দায়রা জজ অথবা মুখ্য বিচারিক হাকিমের নেতৃত্বে এ ধর্ষণকাণ্ডের বিচারিক অনুসন্ধান করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা চাওয়ার পাশাপাশি রুল চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে। এছাড়া ধর্ষণকাণ্ডে জড়িত দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে রুল চাওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া রাসেল এই রিট আবেদন করেন।
রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, র‌্যাবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি), জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ও ট্যুরিস্ট পুলিশসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয়েছে। রিটকারী আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল হারুন জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত ২৭ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে এ ঘটনার বিচারিক অনুসন্ধানের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছ থেকে এ বিষয়ে সাড়া না পাওয়ায় রিট আবেদনটি করা হয়েছে। এছাড়া এই ঘটনায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তার ভিন্ন বক্তব্য আসছে। সেটিও খুঁজে বের করা দরকার।
রিটের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া বলেছিলেন, ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করছে। তবে বিভিন্ন সংস্থা ঘটনা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছে, তাতে গরমিল আছে। তাই প্রকৃত কারণ উদঘাটনে বিচারিক অনুসন্ধান চেয়ে রিটটি করা হয়। চলতি সপ্তাহে রিটের ওপর শুনানি হতে পারে। রিট আবেদনে দেখা যায়, ওই ঘটনা কক্সবাজারের দায়রা জজ বা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে বিচারিক অনুসন্ধান করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। রিটে স্বরাষ্ট্রসচিব বরাবর গত ২৭ ডিসেম্বর রিট আবেদনকারীর করা আবেদন যুক্ত করা হয়েছে। আবেদনে ২২ ডিসেম্বর কক্সবাজারে সংঘটিত দলবদ্ধ ওই ধর্ষণের ঘটনার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া রুল হলে তা বিচারাধীন অবস্থায় ওই আবেদনের (২৭ ডিসেম্বর) ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে ও প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিটের বিষয়ে তিনি গতকাল বলেছিলেন, আজ রিটটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো দিন-ক্ষণ ঠিক করা হয়নি। তবে চলতি সপ্তাহে শুনানির জন্য আবেদনটি কার্যতালিকায় উঠতে পারে।
ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ, গত ২২ ডিসেম্বর রাতে প্রধান আসামি আশিকের নেতৃত্বে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে তাকে তুলে নিয়ে তিনজন প্রথমে ঝুপড়ি চায়ের দোকানে ধর্ষণ করেন। এরপর তার স্বামী ও আট মাসের সন্তানকে হত্যার ভয় দেখিয়ে কলাতলীর জিয়া গেস্ট ইনে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ধর্ষণ করা হয়। চায়ের দোকান থেকে তাকে মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে হোটেলে নিয়ে যান আশিক। এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী গত ২৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানায় স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় আশিকসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। তাতে চারজনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় আরও তিনজনকে। মামলার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম আশিক, এজাহারভুক্ত অন্য দুই আসামি ও সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৮ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হন মামলার ২ নম্বর আসামি ইসরাফিল হুদা জয়কে। তিনি বাহারছড়া এলাকার মো. শফিউদ্দিন শফির ছেলে।