যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনার মধ্যে পার হল ২০২১ সাল

0

বিএম আসাদ ॥ যশোরের মানুষের চিকিৎসা সেবার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। ২০২১ সাল এ হাসপাতালের জন্য শুভকর ছিল না। নানা অনিয়ম, অব্যবস্থা চিকিৎসক ও কর্মচারীদের মধ্যে মারামারিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বছরের শেষ দিনগুলো পার করেছে হাসপাতাল। এ ঘটনা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছেন, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার সংকট রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। ২০১০ সাল থেকে যশোর মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর সিনিয়র চিকিৎসক অধ্যাপক সহযোগী অধ্যাপকসহ বিভিন্ন পদ নিয়ে মেডিকেল কলেজে চলে গেছেন। ফলে ২৫০ শয্যা হাসপাতালে দায়বদ্ধতা কমে গেছে। মেডিকেলে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেয়া আর প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখা তাদের মুখ্য কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্লিনিক্যাল দিক দিয়ে মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে থাকলেও দিনে একবার (প্রথম পর্বে) তারা হাসপাতালে যান এবং কোনো রকমে রোগী দেখে অফিস শেষ করে চলে যান গন্তব্যে। পরবর্তী সময় অনকল থাকলেও হাসপাতালে তাদের দেখা মেলে না। অভিযোগ রয়েছে, এইসব চিকিৎসক সরকারি হাসপাতালে যতনা রোগী দেখেন তার চেয়ে বেশি সংখ্যক ােগী দেখে অর্থ উপার্জনের কাজে বাদ থাকেন প্রাইভেট চেম্বারে। আর হাসপাতালে কর্মরত প্রশিক্ষার্র্থী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দিয়ে রোগী সেবা দেন তারা।
এদিকে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চিকিৎসা না পেয়ে সাধারণ রোগীরা তাদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অন্যত্র রোগী রেফার্ড করার ক্ষমতা না থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরাই ক্ষেত্রবিশেষ রোগীদের রেফার করেছেন। এসব প্রেক্ষিতে বিদায়ী বছরটি ইন্টার্ন চিকিৎসক নির্ভর ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে হাসপাতালে আগত রোগীদের কৌশলে অজ্ঞান করে তাদের স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ, মোবাইল ফোন লুট করে নেয়া, ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের ওষুধ চুরিসহ আর্থিক খাতে নানা অনিয়ম বছর ধরে চলেছে এ হাসপাতালে। বহিরাগত অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, থ্রি-হুইলার, মোটরসাইকেলের গ্যারেজ বানানো হয়েছে হাসপাতাল চত্বরে। বারবার এসব বিষয় যে কারণে খবরের শিরোনাম হলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। তাছাড়া ময়লা-আবর্জনায় নষ্ট ছিলো নানা কারণে হাসপাতাল চত্বরে একটা বিশৃঙ্খলা পরিবেশ বিরাজ করেছে। অপরাধীদের অবাধ বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে হাসপাতাল এলাকায়। এসব পরিস্থতির উন্নতি হয়নি। কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, জনস্বার্থে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে না পারলেও সেবার নামে জনগণের নিকট থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। হাসপাতালের বর্হিবিভাগে টিকিকেট দাম ৫ টাকা করে। সেখানে রোগীর চিকিৎসার মানোন্নয়নের নামে ৫ টাকার টিকিটের মূল্য ১০ টাকা করা হলেও দৃশ্যত কোনো কাজ হয়নি বলে রোগীরা জানান। গত ২ অক্টোবর হতে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। এতে জনগণের কাছ থেকে প্রতিমাসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাড়তি কয়েক লাখ টাকা আদায় করছেন। চিকিৎসাসেবার মান পূর্বের জায়গায় রয়ে গেছে। যা নিয়ে সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি খোদ হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের মাঝেও অসন্তোষ রয়েছে।
রোগী ও রোগীর স্বজনদের মতে, এ অবস্থাড সারা বছরের সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চললেও গত ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা। এদিন হাসপাতালের এক্স-রে বিভাগে ঘটে মারামারির ঘটনা। এক্স-রে কেনার অজুহাতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হাসপাতাল কর্মচারীদের মারধর করে। পরে কর্মচারীরা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারপিট করলে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা পরিবেশ। এ ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মচারীদের শাস্তির দাবিতে কর্মবিরতি, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করছেন। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। কর্মচারীরাও পাল্টা কর্মসূচি পালনের হুকি দেওয়ার পর হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আক্তারুজ্জামান কর্মচারীদের কর্মসূচি স্থগিত রাখতে বাধ্য করেন। কিন্তু ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আন্দোলন থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এতে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও কর্মচারীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। দু’পক্ষই রয়েছেন মুখোমুখি অবস্থানে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে ৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত বোর্ড গঠন কনে। তদন্ত বোর্ড রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক কোন মীমাংসার দিকে না গিয়ে তদন্ত রিপোর্ট স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের কাছে পাঠিয়ে দেন। এরপর গত ২৮ ডিসেম্বর হাসপাতালের কর্মচারী মেহেদী হাসান, ইকবাল হোসেন, দীপ, আব্দুল হালিম, আরিফুলসহ ৫ জনকে কর্মস্থল থেকে দায়িত্ব প্রত্যাহার করা হয়। এ চিঠি এখনো তাদের কাছে না দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক নিজের অফিস ফাইলে আটকে রেখেছেন।
বিষয়টি জানতে পেরে কর্মচারীরা পাল্টা কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। য া নিয়ে হাসপাতালে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।