চৌগাছায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠা ভাটা এখন মানুষের গলার কাটায় পরিনত হয়েছে

0

স্টাফ রিপোর্টার চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছায় অবস্থিত ইটভাটা গুলো এ জনপদের মানুষের কাছে যেন গলার কাটায় পরিনত হয়েছে। ভাটার কালো ধোয়ায় নষ্ট করছে পরিবেশ, ইট ও মাটি বহনের ট্রাকে সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার আগেই ভেঙ্গে যাচ্ছে, ফসলি জমির মাটি দেদারছে চলে যাচ্ছে ভাটায়, ভাটা সংলগ্ন জমিতে ফসল নিমিশে নষ্ট হচ্ছে। ভয়াবহ পরিস্থিতে ভুক্তভোগী এলাকাবাসি ভাটা মালিকদের এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চৌগাছাতে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে ইটভাটা। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও গ্রামাঞ্চলের জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠা ভাটার সংখ্যা প্রায় ১৭টির মত। সাড়ে ৩ লাখ মানুষের বসবাসকারী উপজেলাতে এতগুলো ভাটা সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। একাধিক ভাটা স্থাপন হলেও ইটের দাম আকাশচুম্বি। বর্তমানে চৌগাছার ভাটামালিকরা ইট পুড়ানো জ্বালানির দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ১ ট্রাক ইট (২হাজার) প্রাকর ভেদে ২০ থেকে সাড়ে ২২ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। ইটের মূল্য বৃদ্ধির কারনে মানুষ যতনা ক্ষতিগ্রস্থ্য তার চেয়ে কয়েকগুন ক্ষতিগ্রস্থ্য যত্রতত্র ভাটা তৈরীর কারনে।
চৌগাছা-যশোর সড়কে চৌগাছা ফিলিং ষ্টেশনের উত্তরে প্রায় ৪/৫ বছর আগে তানজিলা অটো ব্রিকস নামে একটি ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এই ভাটা যেন চৌগাছার খাল বিল, নদী নালা এমনকি ফসলি জমির মাটি গিলে খাচ্ছে। একাধিক ট্রাক ও টলি দিয়ে দিনরাত মাটি বাহন করা হচ্ছে। বেপরোয়া গতির ট্রাক সড়কে চলাচলরত মানুষের কাছে মুর্তিমান এক আতংক। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ্য সড়কের পাশে বসবাসকারীরা। পৌর এলাকার মাঠপাড়া মহল্লায় শতাধিক পরিবারের বসবাস। ইছাপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বুড়ি ভৈরব নদ। এই নদের পাড়ের মাটি ভাটায় কেটে আনা হচ্ছে। মাটি বহনকারী ট্রাকগুলো বিরামহীন ভাবে চলছে সড়কে, নষ্ট হচ্ছে সড়ক ও এলাকার পরিবেশ। অনেক বাধা সৃষ্টি করেও কোন প্রতিকার মেলেনি অভিযোগ এলাকাবাসির। শুধু তাইনা যে স্থানে ভাটা নির্মিত হয়েছে তার একপাশে সরকারী পাকা সড়ক আর তিন পাশে ফসলি জমি। ভাটার ধোঁয়ায় বয়ে আনা কয়লার ছোটছোট ছাই নিমিশে নষ্ক করছে সব ধরনের ফসল। প্রায় অর্ধশত বিঘা ফসলি জমির ফসল এখন আর সেভাবে হয়না। তানজিলা ব্রিকসের মত উপজেলার প্রতিটি ইটভাটা মানুষের শুধুই ক্ষতি করে চলেছে। সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ বছরে দু’একবার অভিযান পরিচালনা করে ভাটা ভেঙ্গে দেয়াসহ জরিমানা করলেও কয়েক দিন পরে পুনরায় চালু করা হয় ভাটা জানান এলাকাবাসি।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর ইট প্রস্তুত ও ভাটা নির্মান আইন করেন। আইনে বলা আছে, যেখানে ভাটা নির্মান করা হবে তার ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি জমি থাকবে না। শুধু তাই না ৫শ জন মানুষ বসবাসকারী এলাকায় ভাটা নির্মান করা যাবেনা। কিন্তু চৌগাছায় যেন এই আইনের কোনটাই মানা হয়নি। প্রতিটি ভাটায় ২০ থেকে ৪০ বিঘা ফসলি চলে গেছে। এ সব জমিতে এক সময় ফসল উৎপাদন হত এখন সেখানে হচ্ছে ইট প্রস্তুত। ভাটা সংলগ্ন ফসলি জমি অনেকটাই অকেজো হয়ে পড়েছে। মাঠপাড়ার বাসিন্দা মতলেব আলী, রবিউল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, বিল্লাল হোসেন, লিটন আলী, জাহাঙ্গীর আলম, মুনছুর আলী, কামারুল ইসলাম, খাইরুল ইসলাম বলেন, বাড়িতে বসবাসকরা এখন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। অটোভাটার ট্রাকগুলো দিন নেই রাত নেই এই সড়ক দিয়ে মাটি বহন করে যাচ্ছে। একদিক ধুলাবালু অন্যদিকে বাহনের বেপরোয়া গতি সকলকেই ভাবিয়ে তুলেছে। বাড়ির ছোট শিশুদের নিয়ে আমরা মহাদুঃশ্চিন্তায় আছি। বেশ কয়েকবার বাধা সৃষ্টি করেছি কিন্তু কোন ফল পাইনি। একই মহল্লার আবু হোসেন, আব্দুল মিয়া, আমির হোসেন, হাসান আলী বলেন, ভাটার উত্তর পাশে তাদের প্রায় ১৫ বিঘা জমি আছে। শুধুমাত্র ভাটার কারনে ফসল হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এবছরের আমনের চাষে ধানে কোন শীষ বের হতে পারেনি ওই ভাটার ধোয়ায় মিশে আসা ছাইয়ের কারনে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইরুফা সুলতানা বলেন, যে সকল ভাটা এ অঞ্চলের মানুষের ক্ষতির কারন হয়ে দাড়িয়েছে একটি তালিকা প্রস্তুত করে দ্রুতই ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।