চলমান সংলাপকে ‘তামাশা’ বললো গণফোরামের একাংশ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির চলমান সংলাপকে ‘তামাশা’ বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের একাংশের নেতারা। শনিবার (১ জানুয়ারি) বেলা সোয়া ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা বলা হয়। রাষ্ট্রপতির চলমান সংলাপ সম্পর্কে অভিমত প্রকাশ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাম নেতারা বলেন, ‘সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশন দশম ও একাদশ তামাশার নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছিল। এমনকি নিশি দুর্বৃত্তরা দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করেছে যা বিশ্ব গণতন্ত্রের ইতিহাসে ঘৃণ্য রেকর্ড হয়ে থাকবে। জাতীয় স্বার্থে সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান গণফোরামের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, ‘স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা সংবিধানকে লণ্ডভণ্ড করেছে। জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী ভোটাধিকার পর্যন্ত হরণ করেছে।’ ‘সার্চ কমিটি’ গঠনে সাংবিধানিক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির আছে কি এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আইনের বিধানাবলী’ সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন। কিন্তু ‘প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন’ এই সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন লক্ষ্যে কীভাবে সংবিধান বহির্ভূত ‘সার্চ কমিটি’গঠন করেন? এটি সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের (২) এর সঙ্গে অসামাঞ্জস্যপূর্ণ শুধু নয়, এতে সংবিধানকে উপেক্ষা এবং পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে রাষ্ট্রপতির কথিত ‘সংলাপের নাটক’ বাংলাদেশে ইতোপূর্বে দুবার অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে গণফোরামের এই নেতা বলেন, ‘প্রথমবার ২০১৪ সনে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সঙ্গে ও দ্বিতীয়বার ২০১৮ সনে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সাহেবের সঙ্গে। দুবারই জাতিকে প্রতারিত করা হয়েছিল যা জাতির ইতিহাসে কলঙ্কিত হয়ে থাকবে।’ সার্চ কমিটির মাধ্যমে কোনো কাঙিক্ষত নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘আগের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে গণফোরাম দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে বর্তমান রাষ্ট্রপতির সঙ্গে চলমান সংলাপ একটি তামাশা মাত্র। কোনো কাঙিক্ষত নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব নয়।’ জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বস্তরে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষে একটি দক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন অপরিহার্য মনে করে দলটি জানায়, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য শুধুমাত্র শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই চলবে না, এর জন্য অপরিহার্য হলো জাতীয় ঐক্যমতের সরকার। সেই সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটাধিকারসহ জনগণের মালিকানা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী আরও বলেন, ‘গণফোরাম সংবিধান মোতাবেক সঠিক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে জনমতের প্রতিফলন হিসেবে নির্বাচন কমিশন গঠনের গণদাবির প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন ব্যক্ত করছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে গণফোরামের (একাংশ) সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সব গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, সেটি জাতীয় স্বার্থে জনগণ যাতে তাদের অধিকারটা প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এরজন্য গ্রান্ড ন্যাশনাল কনভেনশন করবো। সেখানে সরকারি দলসহ সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাবো। সরকারকে বলবো, আপনারা সেখানে আসেন। জাতিকে একটা গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবেন না। এরইমধ্যে আমরা একটি আন্তার্জাতিক পক্ষ থেকে চাপের মুখে পড়ে যাচ্ছি। এখান থেকে বেরিয়ে না আসতে পারলে আমাদের বিপর্যয় অনিবার্য। জাতীয় স্বার্থে আলোচনায় বসে যে সিদ্ধান্ত আসে সেটিই সংসদে যাক। যদিও এই রাতের অন্ধকারের সংসদ এটাকে আমরা স্বীকার করি না। জাতীয় স্বার্থে অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়।’ গণফোরামের অপর অংশের আগামীকাল (রোববার) সংলাপে যাওয়া ও দলের ভাঙনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণফোরাম চলে আমাদের গঠনতন্ত্র মোতাবেক। আমাদের গঠনতন্ত্রে বলা আছে দুই বছর পর পর সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হবে। আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে সেটা করেছি। আমরা নির্বাহী সভাপতির (ড. কামাল) সঙ্গে তিনবার মিটিংও করেছি। তিনি আমাদের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন। আর তিনি বলেছেন, সংলাপে যাবেন না। এখন যাবেন কি না সে বিষয়ে আমরা জানি না।’ সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের (একাংশ) বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।