চৌগাছায় স্নাতকোত্তর কুমার ব্রোজেশ ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার পেশা

0

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছার ব্রোজেশ পাল (৩৬)। পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রে কুমার তিনি। তবে অন্য আর ১০ জনের মতো নন। তিনি যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ থেকে দর্শন বিষয়ের ওপর স্নাতকোত্তর কুমার ব্রোজেশ ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার পেশা পাস করার পর পৈতৃক পেশায় এসেছেন। চৌগাছা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইছাপুর পাল পাড়ার বাসিন্দা গোবিন্দ পালের ছেলে ব্রোজেশ। কুমারদের জীবন চিত্র নিয়ে প্রতিবেদনের উদ্দেশে সরেজমিনে ইছাপুর পাল পাড়ায় গেলে দেখা হয় তৈরি মাটির পাটের (গ্রামের টয়লেট তৈরির মাটির রিং) কাজে ব্যস্ত ব্রোজেশ পাল। কিছুটা দূরে ব্রোজেশের স্ত্রীও খেজুর রস সংগ্রহের ভাঁড়সহ মাটির তৈরি বিভিন্ন পাত্র দেখাশোনার করছেন। বিনয়ী যুবক ব্রোজেশের সঙ্গে কথার শুরুতে তিনি যে শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী, এমন কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। কয়েক বছর ধরে তিনি কুমারের কাজ করছেন বলতেই খটকা লাগে। পৈতৃক পেশা অথচ বলছেন কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন! ব্রোজেশের উত্তরে এবারে চমকে ওঠার অবস্থা। কাজের ফাঁকেই ব্রোজেশ বলতে থাকেন, ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী ছিলাম। বাবা-দাদা কুমরের কাজ করেই আমার লেখা-পড়ার খরচ চালাতেন। এখন সেই বাপদাদার পেশাকেই জীবন জীবিকার মাধ্যম হিসেবেগ্রহণ করেছি।
ব্রোজেশ পাল বলেন, যশোর সরকারি এমএম কলেজ থেকে দর্শন বিষয় নিয়ে পাস করেছি। এর আগে সেখান থেকে চার বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর কুমার ব্রোজেশ ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার পেশা করেছি দর্শন বিষয় নিয়েই। এইচ এসসি চৌগাছার এবিসিডি কলেজ থেকে ৩.৭০ সিজিপিএ নিয়ে। ২০০৩ সালে এসএসসি চৌগাছার পাতিবিলা হাজী শাহজান আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে।তিনি বলেন, এমএ পাস করার পর চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার মতো গরীব পালের ছেলেকে কে চাকরি দেবে? বাবার অভাবের সংসারে লেখাপড়া শেষ করেছি এই তো বড়! টাকা দিতে পারিনি, যোগাযোগের মাধ্যম নেই। তাই কোনো স্কুল-কলেজে চাকরিও পাইনি। চাকরি প্রচেষ্টার সঙ্গে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন কাজ করি। এখন সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। ব্রোজেশ বলেন, সাত বছর আগে বিয়ে করি। আমার পাঁচ বছর বয়সী এক মেয়ে। কো¤পানির চাকরিতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। পরে সেই চাকরি ছেড়ে গত চার বছর ধরে বাবাদাদাদের পেশাতেই চলে এসেছি। কুমারের কাজ করে কো¤পানি চাকরির চেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে আছি। এখানে নিজের সঙ্গে স্ত্রীও কাজ করতে পারেন। দুজনের আয়ে সংসার চলে যায়। তার অন্য তিন ভাই গৌর চন্দ্র পাল, সুশান্ত পাল, প্রভাত পাল ও তাদের স্ত্রীরা এক সঙ্গেই আছেন। সবাই মিলে এক সঙ্গে কাজ করি। আমরা মাটির বিভিন্ন পাত্র তৈরি করি। এখান থেকেই পাইকারি ও খুচরাতে বিক্রি হয়ে যায়। আগের মতো গ্রামে গ্রামে নিয়ে যাওয়া লাগে না। মিথ্যা বলব না, এটা করেই তো সংসার চালাচ্ছি। আগের থেকে ভালোই চলছে। তবে গত দুই বছর করোনার কারণে কিছুটা হলেও কষ্ট হয়েছে। তবে এই সময়ে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাইনি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, আলাদাভাবে কুমার-কামারদের জন্য কোনো প্রণোদনার বরাদ্দ আসেনি।