বুস্টার ডোজ: টিকা বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই

0

জাকিয়া আহমেদ॥ দেশে গত মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) থেকে করোনা টিকার বুস্টার ডোজ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সীমিত পরিসরে রাজধানী ঢাকাসহ পাঁচটি বিভাগে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই টিকা দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে— আগের দুই ডোজ টিকা যে ব্র্যান্ডের নিয়েছেন, বুস্টার ডোজও সেই ব্র্যান্ডের নিতে হবে কিনা, বা এ ক্ষেত্রে নিজের পছন্দানুযায়ী টিকা নেওয়া যাবে কিনা? এ ধরনের প্রশ্ন বা ধোঁয়াশা দূর করতে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে যে, বুস্টার ডোজের টিকা বেছে নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। কেন্দ্রে যে টিকা থাকবে সেটাই নিতে হবে। প্রথম দিন (মঙ্গলবার) রাজধানীর ১২টি হাসপাতালসহ ঢাকা জেলা, চট্টগ্রাম বিভাগ, রাজশাহী, রংপুর এবং খুলনা বিভাগে বুস্টার ডোজ নেন এক হাজার ৩৫৫ জন। পরের দিন বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ৩৮টি হাসপাতালসহ সারাদেশে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে ১৪ হাজার ৬ জনকে।
বুস্টার ডোজ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতর ফাইজার, মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাকে বেছে নিয়েছে। অধিদফতর এ পরামর্শ গ্রহণ করেছে টিকা বিষয়ক ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ (নাইট্যাগ) এর কাছ থেকে। সাধারণ মানুষের জন্য অধিদফতরের বার্তা হচ্ছে— বুস্টার ডোজ হিসেবে নির্দিষ্ট করে কোনও টিকাকে বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, যিনি যে কেন্দ্রে এর আগে টিকা নিয়েছেন, সেই কেন্দ্রে উল্লিখিত তিন টিকার যেটি মজুত থাকবে, তাকে সেই টিকাই দেওয়া হবে। এখানে ‘চুজ অ্যান্ড পিক’-এর কোনও সুযোগ নেই। একই সঙ্গে বুস্টার ডোজ নিতে হলে টিকা গ্রহীতাকে অবশ্যই এর আগে দেওয়া টিকার কার্ড সঙ্গে করে কেন্দ্রে আসতে হবে।
বুস্টার ডোজ শুরুর প্রথম দিন গত ২৮ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে টিকা নিতে আসেন মো. আশরাফ আলী এই কেন্দ্রে বুস্টার ডোজ হিসেবে দেওয়া হচ্ছিল ফাইজারের টিকা। টিকার বুথে দায়িত্বরত কর্মীর কাছে আশরাফ আলী জানতে চান, ‘আমি এর আগে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছিলাম। সেক্ষেত্রে ফাইজারের টিকা নিলে কোনও সমস্যা হবে কিনা?’ দায়িত্বরত স্বাস্থ্যকর্মী তাকে নির্ভয় দিলেও তিনি এতে সংশয়মুক্ত হতে পারছিলেন না। আবার নিজের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে টিকা না নেওয়ার কথাও ভাবতে পারছিলেন না।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিদেশে বুস্টার দেওয়া হচ্ছে, দেশেও শুরু হলো। নিজের বয়স হচ্ছে, নানা রোগে আক্রান্ত। তাই সুরক্ষার কথা ভেবে বুস্টার নিতে এলাম। কিন্তু প্রথম দুই ডোজ নিয়েছিলাম অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, এখন ফাইজারের টিকা নিতে একটু ভয় লাগছে।’ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা রহমতউল্লাহ টিকা নিতে এলেও তিনি সঙ্গে করে আগের টিকা কার্ডটি আনেননি। এতে করে তাকে টিকা নিতে ফের আসার জন্য বলা হয়। বুস্টার ডোজ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হলেও কোন ব্র্যান্ড নেওয়া যাবে, বা কোনটি নেওয়া যাবে না, এরকম বিভিন্ন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। তাদের উদ্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, ‘বুস্টার ডোজ নিয়ে সংশয়ের কোনও কারণ নেই। সেই সঙ্গে কোনও নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের টিকা বেছে নেওয়ারও সুযোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘যিনি এর আগে যে কেন্দ্রে টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন, সেই কেন্দ্রে যাবেন। সেখানে ব্র্যান্ডের টিকা নির্ধারিত রয়েছে, বুস্টার ডোজ হিসেবে সেই টিকাই তাকে নিতে হবে।’
প্রসঙ্গত, প্রাথমিকভাবে দেশে ষাটোর্ধ্ব ও ফ্রন্টলাইনাদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। তবে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পার হতে হবে তাদের। এই তালিকায় যারা রয়েছেন, টিকাকেন্দ্র থেকে তাদের মোবাইল ফোনে তৃতীয় ডোজের জন্য এসএমএস যাবে। টিকার এই তৃতীয় ডোজকেই বুস্টার ডোজ বলা হচ্ছে। ডা. শামসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘বুস্টার ডোজের জন্য দেশে ফাইজার, মডার্না আর অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হচ্ছে। যিনি আগে যে কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন, সেই কেন্দ্রে বুস্টার হিসেবে এখন যে টিকা দেওয়া হচ্ছে, সে টিকাই তার জন্য প্রযোজ্য হবে। এখানে ‘পিক অ্যান্ড চুজ’-এর কোনও সুযোগ নেই।’’ ‘চুজ করা বা বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকছে না এই কারণে যে, সব জায়গায় সব টিকা নিতে পারছি না। কারণ দেখা গেলো, সবাই ফাইজার চাইবে, কিন্তু ফাইজারের মতো সেনসিটিভ টিকা সব জায়গায় নেওয়া যাবে না। তাহলে কি সেখানকার মানুষ বুস্টার পাবে না?’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এখন বুস্টার হিসেবে ফাইজার দেওয়া হচ্ছে। এর আগে যিনি এই কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন, তাকে এখন সেখানেই যেতে হবে। আর সেখানে যে টিকা দেওয়া হচ্ছে, তাকে সে টিকাই নিতে হবে। আবার যেখানে মডার্না রয়েছে সেখানে মডার্না দেবে, যেখানে মডার্না বা ফাইজার কিছুই নেই, যেমন- উপজেলা পর্যায়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকা রয়েছে, সেখানে অ্যাস্ট্রাজেনেকাই বুস্টার ডোজ হিসেবে দেওয়া হবে।’
এতে কারও সংশয় বা উদ্বেগের কিছু নেই জানিয়ে ডা. শামসুল হক বলেন, ‘এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এখানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশিত কিছু নেই। আমরা (অধিদফতর) নাইট্যাগের পরার্মশ মেনে তাদের সুপারিশে কাজ করছি।’ ‘সেই সঙ্গে পৃথিবীর কোথাও বুস্টার ডোজ হিসেবে কোনও টিকাই চুজ (বাছাই) করার কোনও সুযোগ নেই। আমেরিকার মতো দেশেও বলা হচ্ছে— সেন্টারে যে টিকা রয়েছে সে টিকাই দিতে হবে’, বলেন ডা. শামসুল হক। তবে সঙ্গে করে আগের টিকা কার্ড নিয়ে যেতে হবে জানিয়ে তিনি বলে, ‘টিকা কার্ড প্রিন্ট করে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, বুস্টার যে দেওয়া হচ্ছে, তারতো একটা ডকুমেন্ট লাগবে। পরবর্তীতে তাকে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।’ উল্লেখ্য, গত ১৯ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে দেশে বুস্টার ডোজের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ২৮ ডিসেম্বর জাতীয়ভাবে শুরু হয় এর কার্যক্রম ।