ঝিনাইদহে বিএনপির বিশাল সমাবেশে নিতাই রায় চেšধুরী: হাসিনার বিরুদ্ধে জনতার সাগরে ঢেউ জেগেছে,এই ঢেউয়ে তারা ভেসে যাবে

0

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ ॥ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী বলেছেন, হাসিনার বিরুদ্ধে জনতার সাগরে ঢেউ জেগেছে। এই উত্তাল ঢেউয়ে হাসিনা ও তার দুর্নীতিবাজ সরকার বঙ্গোপসাগরে ভেসে যাবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা জোয়ার দেখেছে, কিন্তু ভাটা দেখেনি। ভাটার টান শুরু হয়েছে। এই টানে হাসিনা সাগরে নিক্ষিপ্ত হবে। গতকাল বুধবার ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে সুচিকৎসার দাবিতে ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী মাঠে জেলা বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাড. এস এম মশিয়ূর রহমান। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য মসিউর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দীন, কেন্দ্রীয় বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আসাদুজ্জামান, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুজ্জামান বেল্টু, আব্দুল ওহাব, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, অ্যাড. এম এ মজিদ, মুন্সি কামাল আজাদ পান্নু, আব্দুল আলীম, আব্দুল মজিদ বিশ্বাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া আশপাশ জেলা থেকে বিএনপির অর্ধশত নেতা বক্তব্য রাখেন সমাবেশে।
প্রধান অতিথি নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, দেশে আজ কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই। গণতন্ত্র, শিক্ষা, মানবাধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বিচার ব্যবস্থা, পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী সবকিছুই হাসিনা ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রশাসন দিয়ে গুম খুন করিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। বাংলার মাটিতে হাসিনার বিচার হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দল নয়। তারা ভারতের ট্রেনিং ক্যাম্পে বসে বসে রেশন খেয়েছে আর নারী নিয়ে ফুর্তি মেরেছে। শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা ঘোষণা তো দূরের কথা, স্বেচ্ছায় পাকিস্তানিদের হাতে ধরা দিয়ে আরাম আয়েশে দিন কাটিয়েছেন। অথচ শেখ মুজিবকে আজ মুক্তিযুদ্ধের বড় ফেরিওয়ালা বানিয়েছে হাসিনা। নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পিতা কোনদিন গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। তাদের শাসন আমল তার প্রমাণ বহন করে। সিরাজ শিকদার বিভিন্ন মতের হলেও তার দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। অথচ শেখ মুজিব তাকে হত্যা করে সংসদে দম্ভোক্তি প্রকাশ করে বলেছিলেন ‘কোথায় আজ সিরাজ শিকদার?’ অথচ এই দলটির নেতারা আজ মানুষকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার ছবক দেয়। যারা অসুস্থ খালেদা জিয়ার ভয়ে ভীত, তারা বিএনপির সুস্থ লাখো নেতাকর্মীকে কীভাবে সামলাবেন?
সমাবেশে মসিউর রহমান বলেন, রক্তের অপর নাম মুক্তি। ১৯৭১ সালে রক্ত দিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম। শেখ হাসিনার এ কথা মনে রাখা দরকার। তিনি বলেন, ভারতের মোদি সরকারের সঙ্গে হাসিনা অনেক পিরিত করেছিলেন, এখন কিন্তু সেই মোদি সরকার বাইডেনের সঙ্গে। হাসিনাকে ছুড়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, হাসিনার জন্য পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। মসিউর রহমান বলেন, ওবায়দুল কাদের ও হাসান মাহমুদকে দিয়ে অনর্গল মিথ্যা বলিয়েও হাসিনার শেষ রক্ষা হবে না। মানুষ জেগেছে। পালানোর সব পথ বন্ধ করে দেবে দেশের জনগণ।
অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দীন বলেন, পতনের ডাক কি পুলিশ ও হাসিনা সরকার শুনতে পাচ্ছে না? সময় ঘনিয়ে এসেছে। আকাশে কালোমেঘ। হাসিনা ও তার দোসররা পালানোর জন্য পথ খুঁজছে। অ্যাড. আসাদুজ্জামান পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনারা তো ডাম্পিং পোস্টিং নিয়ে ঝিনাইদহে এসেছেন। এখানে কেন আপনারা দলীয় ক্যাডারদের মতো আচরণ করেন? আপনাদের দিয়ে ৬০১ জনকে গুম করেছে। ৩ হাজার মানুষ বিনা বিচারে হত্যা করেছে। বিএনপির ৩৬ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা করিয়েছে। এখানেই থামুন, নইলে পস্তাবেন।’
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত আইনমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, বিনা ভোটের সরকারের আইনি যুক্তি দেখতে দেখতে মানুষ আজ বিরক্ত। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, কুইক রেন্টালে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়, কাঁটাতারে ফেলানীর লাশে ঝুলে থাকে, ব্যাংক ঋণের নামে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয় সেদিন কোথায় থাকে আপনাদের আইন? তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, এটা ঊনবিংশ বা বিংশ শতাব্দী নয়, এটা একাবিংশ শতাব্দি। তরুণদের সাথে প্রবীণরা যুক্ত হয়ে যদি প্রতিবাদের বিস্ফোরণ ঘটায় তখন আপনারা পালানোর পথ পাবেন না। তিনি বলেন, সরকার যদি আইন দিয়ে দেশ চালাতো, তবে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেতেন। যেমন জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার সময় কোন আইন লাগেনি। তিনি বলেন, সরকারের লোকজন ও দলীয় নেতাকর্মী পালানোর পথ খুঁজছে। আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এখন মালদ্বীপের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে। আসলে এই চুক্তি হচ্ছে আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়লে তারা মালদ্বীপে পালিয়ে যেতে চায়। অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, বিএনপিকে এখন কোন বাধায় আর ঠেকাতে পারবে না। জেলা উপজেলা থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, অচিরেই তার ঢেউ আছড়ে পড়বে রাজধানী ঢাকায়।