মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আইনে কি বলা আছে?

0

তারিক চয়ন
সম্প্রতি বিশ্বের কয়েকটি দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যেগুলোর বা যাদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ ছাড়াও রয়েছেন র‌্যাবের সাবেক ডিজি ও বর্তমান পুলিশ প্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদসহ সাত কর্মকর্তাও। ১০ই ডিসেম্বর, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র তার ‘গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট’ (যেটি গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্ট নামেই বেশি পরিচিত) এর মাধ্যমে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাই এই আইনটি নিয়ে স্বভাবতই জনমনে রয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস (সিআরএস) এই আইনটির খুঁটিনাটি নিয়ে ২০২০ সালের ২৮শে অক্টোবর নিজেদের প্রস্তুতকৃত একটি নথি প্রকাশ করে। উল্লেখ্য, সিআরএস কংগ্রেসনাল কমিটি এবং কংগ্রেসের সদস্যদের জন্য কাজ করে থাকে। নথিটির শুরুতেই বলা হয়েছে- গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট (যুক্তরাষ্ট্রের) প্রেসিডেন্টকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা দুর্নীতিতে জড়িত হিসেবে চিহ্নিত যেকোনো বিদেশি ব্যক্তির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অস্বীকৃতি জানানোর অনুমতি দেয়। রাশিয়ান আইনজীবীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যার শুরু: ২০১২ সালে রাশিয়া কেন্দ্রিক একটি আইন করা হয়েছিল।
যার নাম- সের্গেই ম্যাগনিটস্কি রুল অফ ল অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট। ওই আইনকেই বৈশ্বিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি আইন। সের্গেই ম্যাগনিটস্কি নামে রাশিয়ার একজন কর (এবং মানবাধিকার) আইনজীবী দেশটির সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা ব্যাপক কর জালিয়াতি এবং অন্যান্য দুর্নীতি নথিভুক্ত করেছিলেন। ২০০৮ সালের নভেম্বরে ম্যাগনিটস্কিকে কর ফাঁকির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে কোনো চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়নি। তাকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হতো না। তার ক্ষেত্রে কোনো যথাযথ আইনি প্রক্রিয়াও অনুসরণ করা হয়নি।
জানা যায় যে, কারা হেফাজতে থাকাকালীন, ম্যাগনিটস্কিকে মারধর করা হয়েছিল এবং সম্ভবত নির্যাতনও করা হয়েছিল। তিনি ২০০৯ সালের নভেম্বরে কারাগারে মারা যান। ম্যাগনিটস্কির আটক, নির্যাতন বা মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি (সমূহ) এবং ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার সঙ্গে জড়িত অথবা রাশিয়ায় মানুষের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের যেন (যুক্তরাষ্ট্রের) প্রেসিডেন্ট চিহ্নিত করতে পারেন সেজন্যই মার্কিন কংগ্রেস সের্গেই ম্যাগনিটস্কি আইন পাস করে। চিহ্নিত ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের এখতিয়ার অধীন সম্পদ ব্লক করা হয়, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়, তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের দরজাও নিষিদ্ধ করা হয়। আইনটি যেভাবে বৈশ্বিক রূপ নিলো: গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্ট ২০১২ সালের আইনটিকেই বৈশ্বিকভাবে কার্যকর করতে কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা দেয়। যে ক্ষমতাবলে প্রেসিডেন্ট কাউকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে অস্বীকার করার, ইতিমধ্যে ইস্যু করা ভিসা প্রত্যাহার করার এবং যুক্তরাষ্ট্রের এখতিয়ার অধীন সম্পত্তি ব্লক করার এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিদের বিদেশি (ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান) কারও সঙ্গে লেনদেন থেকে বিরত রাখার বিষয়টি নির্ধারণ করতে পারেন যদি তিনি মনে করেন:
* তারা 22 22 U.S.C. §2304(d)(1)-তে সংজ্ঞায়িত হিসেবে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, বা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের অন্যান্য গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য দায়ী’, তবে (১) সরকারি কর্মকর্তাদের অবৈধ কার্যকলাপ প্রকাশ করতে বা (২) ন্যায়বিচার এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনসহ মানবাধিকার ও স্বাধীনতা অর্জন, অনুশীলন, রক্ষা বা প্রচারের জন্য; অথবা
* উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্নীতির জন্য দায়ী বিদেশি সরকারি কর্মকর্তা, ওই ধরনের কর্মকর্তার সিনিয়র এসোসিয়েট, বা ওই ধরনের কাজের সাহায্যকারী, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত লাভের জন্য ব্যক্তিগত বা সরকারি সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা, সরকারি চুক্তিতে দুর্নীতি বা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, ঘুষ নেয়া, অথবা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বিদেশে ‘ট্যাক্স ফ্রি বা কম ট্যাক্সে রাখা’।
এই আইনটি প্রেসিডেন্টকে নিষেধাজ্ঞার আবেদন বাতিল করার অনুমতি দেয় যদি প্রেসিডেন্ট মনে করেন যে, মনোনীত ব্যক্তি ওইসব কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন না যেজন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল; অপরাধের জন্য তার বিচার করা হয়েছে; অথবা অভিযুক্ত তার আচরণ পরিবর্তন করেছে, ‘উপযুক্ত পরিণতি ভোগ করেছে’ এবং ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার যোগ্য কোনো কার্যকলাপে জড়িত না হওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রেসিডেন্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ বাতিলও করতে পারেন।
আইনটি যেভাবে বাস্তবে রূপ নিলো: ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক্সিকিউটিভ অর্ডার (ই,ও,) বা নির্বাহী আদেশ ১৩৮১৮ দেন, এই মর্মে যে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির ব্যাপকতা এবং তীব্রতা … এমন পরিধিতে এবং মাত্রায় পৌঁছেছে যে সেগুলো আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ’ সেইসঙ্গে ‘যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা, পররাষ্ট্র নীতি এবং অর্থনীতির জন্য অস্বাভাবিক এবং ভয়াবহ হুমকি’। গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্ট এবং ন্যাশনাল এমারজেন্সিস অ্যাক্ট এ বর্ণিত জরুরি কর্তৃপক্ষ এবং ন্যাশনাল এমারজেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার অ্যাক্ট এর ওপর ভিত্তি করে ওই আদেশ জারি করা হয়েছিল।
ই,ও, ১৩৮১৮ কে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্টের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এবং ওই আইনের বাস্তবায়নকারী হিসেবে বর্ণনা করছে। আদেশটিতে ভাষাগত পার্থক্য রয়েছে যার ফলে আইনে বর্ণিত সীমার বাইরেও এর পরিধি প্রসারিত। যেমন: নিষেধাজ্ঞার জন্য সম্ভাব্য টার্গেটের আচরণের মান বিধিবদ্ধভাবে সংজ্ঞায়িত করতে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে (উপরে বর্ণিত) ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন’ এর স্থলে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী কিংবা জড়িত হতে বা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার জন্য’ সংকল্পবদ্ধ বুঝানো হয়েছে। ই,ও, ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’ এর সংজ্ঞা নির্ধারণ করেনি। একইভাবে, ই,ও, আইনের ‘গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতির ক্রিয়াকলাপ’ এর পরিবর্তে শুধুই ‘দুর্নীতি’কে বোঝায়। অতিরিক্তভাবে ই,ও, সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার টার্গেট হিসেবে অতিরিক্ত আরও অন্য শ্রেণির ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট করে, উদাহরণস্বরূপ- কোনো ব্যক্তি যিনি এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের ‘নেতা বা কর্মকর্তা থাকার বা হবার ‘জন্য সংকল্পবদ্ধ ‘যেই প্রতিষ্ঠান বা তার সদস্যরা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন বা দুর্নীতিতে জড়িত’। ই,ও, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে পরামর্শ করে ট্রেজারি সেক্রেটারিকে নিষেধাজ্ঞা নির্ধারণের জন্য প্রতিনিধিত্ব করায়। কোনো রেজিমকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ক্ষেত্রে যেমন সাধারণত ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের ‘অফিস অফ ফরেন অ্যাসেট কন্ট্রোল’ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো পরিচালনা করে, যেখানে স্টেট ডিপার্টমেন্ট (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করে।
আগামী বছরই আইনটি আর থাকবে না!: গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি আইনের মেয়াদ (আর না বাড়ালে) ২০২২ সালের ২৩শে ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু, যেহেতু প্রেসিডেন্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের টার্গেট করার জন্য জাতীয় জরুরি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান করেছিলেন, তাই গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি আইনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ওই নিষেধাজ্ঞাগুলো চলতে পারে। প্রেসিডেন্ট ই,ও, ১৩৮১৮-এর অধীনে প্রতি বছর জাতীয় জরুরি অবস্থা নবায়ন করেছেন। ২০২০ সালের ২৮শে অক্টোবরের আগে সর্বশেষ তা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নবায়ন করা হয়।
যাদের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে: ২০২০ সালের ২৮শে অক্টোবর পর্যন্ত, অফিস অফ ফরেন অ্যাসেট কন্ট্রোল সর্বজনীনভাবে ই,ও, ১৩৮১৮-এর অধীনে ১০৭ জন ব্যক্তিকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। দুটি অপসারণ করায় উক্ত সময় পর্যন্ত ১০৫ টি নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। ২০১৭ সালে ১৫ জন ব্যক্তিকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল, তারপর ২০১৮ সালে ২৮, ২০১৯ সালে ৫২ এবং ২০২০ সাল থেকে ওই সময় পর্যন্ত ১২ জনকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। সক্রিয়গুলোর মধ্যে, ৬০ জনকে প্রাথমিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য মনোনীত করা হয়, ৪২ জনকে প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির জন্য মনোনীত করা হয় এবং ৩ জনকে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতি উভয় কারণে মনোনীত করা হয়। এ ছাড়াও বর্তমানে ১০৫টি প্রতিষ্ঠান মনোনীতদের তালিকায় রয়েছে – যাদের মধ্যে অনেকগুলোই মনোনীত ব্যক্তিদের মালিকানাধীন বা তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে। পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি নিষেধাজ্ঞার জন্য মনোনীত হয়েছেন এমন দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব (১৭ ব্যক্তি), উগান্ডা (১১), সার্বিয়া (১০), বার্মা (৯), ইরাক (৮), দক্ষিণ সুদান (৮), চীন (৭) এবং কম্বোডিয়া (৬) ) কিছু কিছু ক্ষেত্রে, নির্বাহী শাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন বা দুর্নীতির একটি ঘটনার জন্য অসংখ্য ব্যক্তিকে মনোনীত করেছে (উদাহরণস্বরূপ: সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ক্ষেত্রে)।
গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্টের জন্য প্রেসিডেন্টকে প্রতি বছর ১০ই ডিসেম্বরের মধ্যে কংগ্রেসকে পূর্ববর্তী বছরের নামগুলো সম্পর্কে রিপোর্ট করতে হয়। ডিসেম্বর ২০১৯ এর রিপোর্ট অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র এমন পদক্ষেপগুলোকে অগ্রাধিকার দেয় যেগুলো ‘নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত ব্যক্তি এবং তাদের সহযোগীদের আচরণে পরিবর্তন আনতে বা ক্ষতিকর ‘অ্যাক্টর’ সমূহের কার্যকলাপকে ব্যাহত করে তাদের ওপর বাস্তবসম্মত এবং উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে’।
ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের শুরু থেকে ২৮শে অক্টোবর পর্যন্ত যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়-
৮ই জানুয়ারি: মানবাধিকার বিষয়ক এক আইনজীবী ও বিরোধী ব্যক্তিত্বকে গুম করা, তার মৃত্যুর আয়োজন করা এবং নির্দেশনা দানের জন্য দক্ষিণ সুদানের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট তাবান দেং গাইকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
৯ই জুলাই এবং ৩০শে জুলাই: উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ওই অঞ্চলের কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারিসহ চীনের বর্তমান বা সাবেক ছয় সরকারি কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। ওই তালিকায় শিনজিয়াং পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরো এবং শিনজিয়াং প্রোডাকশন অ্যান্ড কন্সট্রাকশন কর্পস এর নামও ছিল।
১৭ই আগস্ট: উগান্ডার দুই বিচারক, এক আইনজীবী এবং ওই আইনজীবীর স্বামীকে বিদেশে শিক্ষার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দানের মাধ্যমে উগান্ডার শিশুদের তাদের পরিবার থেকে ছিনিয়ে নেয়ার সঙ্গে জড়িত একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দত্তক প্রকল্পে অংশ নেয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
১৫ই সেপ্টেম্বর: চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ কোং, লিমিটেডকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় কম্বোডিয়ায় একটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ‘স্থানীয় কম্বোডিয়ানদের জমি জব্দ এবং ধ্বংস’ করায়। ইতিপূর্বে নিষেধাজ্ঞা দেয়া কম্বোডিয়ান জেনারেল, কুন কিমের জন্য বা তার পক্ষে কাজ করছিল ওই কোম্পানি।
১৫ই সেপ্টেম্বর: গাম্বিয়ার সাবেক ফার্স্ট লেডি, জিনেব সৌমা ইয়াহিয়া জামেহকে তার স্বামী ইয়াহা জামেহকে সহায়তা, পৃষ্ঠপোষকতা বা সহায়তা করার জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তার স্বামীকে আগেই মানুষকে অপব্যবহার এবং দুর্নীতির জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল।
১৫ই সেপ্টেম্বর: সুদানী নাগরিক আশরাফ সিদ আহমেদ আল-কার্ডিনালের মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে নাবাহ লিমিটেডকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। দুর্নীতির জন্য আশরাফকে আগেই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল।
নিষেধাজ্ঞায় কংগ্রেসনাল ইনপুট নিষেধাজ্ঞা নির্ধারণের ক্ষেত্রে, আইনটি প্রেসিডেন্টকে
সিনেট ব্যাংকিং, ফরেন রিলেশন্স, হাউস ফিনানশিয়াল সার্ভিসেস, ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারপারসন এবং র‌্যাঙ্কিং সদস্যদের দ্বারা যৌথভাবে প্রদত্ত তথ্য, সেইসঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্র এবং বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাগুলো দ্বারা প্রাপ্ত বিশ্বাসযোগ্য তথ্য বিবেচনা করতে বাধ্য করে। একটি পৃথক বিধান, সেকশন ১২৬৩ (ডি) অনুযায়ী উপরে উল্লিখিত কমিটির নেতৃত্বের অনুরোধে কোনো বিদেশি ব্যক্তি ওই আইনের অধীনে নিষেধাজ্ঞাযোগ্য কার্যকলাপে জড়িত কিনা এবং প্রেসিডেন্ট তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে ‘চান’ কিংবা ‘চান না’ কিনা সে জবাব প্রেসিডেন্টকে ১২০ দিনের মধ্যে দিতে হবে। বিলটিতে স্বাক্ষর করে আইনে রূপান্তর করার সময়, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্ষমতার সাংবিধানিক পৃথকীকরণের চ্যালেঞ্জ হিসেবে এই পরবর্তী প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছিলেন এবং ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তিনি ‘উপযুক্ত ক্ষেত্রে এই ধরনের অনুরোধে কাজ করতে অস্বীকার জানাবার জন্য [তার] বিচক্ষণতা বজায় রাখবেন।’
অন্য আইনেও নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সুযোগ রয়েছে: কংগ্রেস মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বা অন্যান্য জঘন্য কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের টার্গেট করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অন্যান্য বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা প্রদানের ক্ষমতা দিয়েছে, সেইসঙ্গে এসব কারণে নির্দিষ্ট দেশকে টার্গেট করে নিষেধাজ্ঞার আইনও রয়েছে। উপরন্তু, প্রেসিডেন্ট কিছু নির্দিষ্ট দেশের ব্যক্তিদের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ন্যাশনাল এমারজেন্সিস অ্যাক্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল এমারজেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার অ্যাক্ট জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহার করেছেন। ইমিগ্রেশন এন্ড ন্যাশনালাটি অ্যাক্ট এর সেকশন ২১২ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘প্রবেশে বাধা’ দেয়ার বিস্তৃত কর্তৃত্ব প্রদান করে। একটি পুনরাবৃত্ত বিধান, সেকশন ৭০৩১(সি), বার্ষিক বিদেশি অপারেশন বরাদ্দের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সেসব বিদেশি কর্মকর্তাদের এবং তাদের পরিবারের নিকটতম সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ভিসা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা প্রদান করে যাদের সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে যে ওই ব্যক্তিরা ‘উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত।’ কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকাশ্যেই এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চ (নির্বাহী শাখা) এই বরাদ্দের বিধানের পাশাপাশি ই,ও, ১৩৮১৮-এর অধীনে বা অন্যান্য অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রোগ্রামে অনেক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মিলারের বক্তব্য: গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও অর্থ দপ্তর ২০১৯ সালের ১০ই ডিসেম্বর (আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে) গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি প্রোগ্রামের অধীনে বার্মার চার শীর্ষ বর্তমান এবং সাবেক সামরিক কর্মকর্তার ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ঘোষণা করেছিল। এর ঠিক পরের দিন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার এক বিবৃতিতে বলেছিলেন- বিশ্ব সমপ্রদায় সদ্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালন করেছে। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি কর্মসূচির অন্তর্নিহিত আমেরিকান আদর্শের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকে জবাবদিহি এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্বপালন করা অব্যাহত রাখবে। আমরা নাগরিক সমাজ এবং আপনাদের পুরো সাংবাদিক মহলের সাহসী কাজের প্রশংসা করি। আপনারা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির ঘটনা উন্মোচন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এই ধরনের কার্যকলাপে জড়িত ব্যক্তিরা যেন আমাদের আর্থিক ব্যবস্থায় এবং আমাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে।