চৌগাছায় ভৈরব পাড়ের মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়!

0

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছায় ভৈরব নদের তীরের মাটি স্কেবেটর দিয়ে কেটে চুরি করে অবৈধ ভাবে ইটভাটায় বিক্রি করছেন প্রভাবশালী একটি মহল। আর এই মাটি কৃষকের ফসলী জমির ওপর দিয়ে ট্রাক্টরের ট্রলি ও ড্রামট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক অন্যদিকে ভৈরব খননকরে জলাধার সৃষ্টির সরকারি উদ্যোগ নষ্ট হচ্ছে। বুধবার দুপুরে এমন একটি অভিযোগ পেয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা এ মাটি কাটা বন্ধ করে দেন। ভবিষ্যতে যেন আর মাটি কেটে না নেয়া হয় সে বিষয়েও সতর্ক করেন।


অভিযোগ পেয়ে উপজেলর চৌগাছা-আড়পাড়া সড়কের রোস্তমপুর মাঠে গিয়ে দেখা যায়, একটি স্কেভেটর মাটি কেটে ট্রাক্টর দিয়ে তৈরি ট্রলিতে ভরে দিচ্ছেন। আর ৭/৮টি ট্রলিতে করে সেই মাটি ফসলি জমির ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ট্রাক্টর উঠতে গিয়ে চৌগাছা-আড়পাড়া সড়কের একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন কৃষক মাটি কাটতে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করায় গ্রামের জনৈক মোমিনুর রহমান তাদের বোঝাচ্ছেন। এ সময় মোমিনুরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাতিবিলা গ্রামের সিদ্দিক এই মাটি কাটছেন। মাটি তো সিদ্দিকের না সরকারি নদের মাটি এভাবে কাটা হচ্ছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিদ্দিক মাটি কাটাচ্ছেন। তিনি ভালো বলতে পারবেন। এর পরে তিনি ঘটনাস্থল থেকে কিছুদূর সরে গিয়ে মোবাইলে কথা বলতে থাকেন।


অন্যদিকে স্কেভেটরের চালক মাটি কাটছেন। চালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ঢাকা জেলার বাসিন্দা। এ গ্রামের মোমিনুর তাকে ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন। সরকারি নদ থেকে মাটি কাটছেন কেন। জনাতে চাইলেতিনি আর কোনো জবাব না দিয়ে চুপ থাকেন। এ সময় নাম প্রকাশ না করে মাঠে থাকা কয়েকজন কৃষক বলেন, তারা আমাদের নানাভাবে বোঝাচ্ছেন এই মাটি নিয়ে গেলে কোনো অসুবিধা হবেনা। তবে এতে আমাদের জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তারাপ্রভাবশালী হওয়ায় বাঁধা দিতে পারছিনা। তারা আমাদের বলছেন, আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটছি। তারা জানান, জলাধার তৈরির লক্ষে বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দুই বছর আগে ভৈরব খনন নদ খনন করে সরকার। সেসময় খননকৃত মাটি দিয়ে নদের দুই তীরে বাঁধ দেয়া হয় যেন নদের পানি উপচে মাঠের ফসলের ক্ষয়ক্ষতি না হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়ে দুপুরে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা মোবাইলে পাতিবিলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের বহিস্কৃত সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে নদের মাটি কাটতে নিষেধ করেন। ইউএনওর আদেশে তারা সেখান থেকে সরে গেলেও স্কেভেটর সরিয়ে নেননি। এলাকাবাসী বলছেন, রাতের আঁধারে আবারো মাটি কাটার জন্য তারা স্কেভেটর রেখেছেন। স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরো জানান, প্রথমে পাতিবিলা ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রাম এলাকা থেকে নদের মাটি কেটে বিক্রি করে দেয় চক্রটি। সেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাফী বিন কবিরের নেতৃত্বে কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হয়েছে। তবুও থামেনি তাদের এই সরকারি মাটি চুরি করা। সেখানে কাটা শেষ করে তারা শহরের ইছাপুর মাঠের মুক্তদাহ মোড় থেকে আবার মাটি কাটা শুরু করে। এভাবে কাটতে কাটতে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের রোস্তমপুর গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছেছে।
গত ৪ ডিসেম্বর স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়ার নেতৃত্ব পুলিশ মুক্তদহ মোড় থেকে দুটি মাটি বোঝাই ড্রামট্রাক চৌগাছা থানা হেফাজতে নেয়। তারা থানায় মুচলেকা দেন আর মাটি কাটবেন না। স্থানীয়রা বলছেন, বারবার প্রশাসন বাঁধা দিচ্ছে আর তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, স্থানীয়দের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুটি ড্রামট্রাক আটক করা হয়। সে সময় তারা মুচলেকা দিয়েছিলেন নদ থেকেআর মাটি কাটবেন না। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, স্থানীয়দের মৌখিক অভিযোগে মাটি কাটা থেকে বিরত থাকতেনির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা আর এভাবে মাটি কাটবেন না বলে কথা দিয়েছেন। এরপরও যদি নদের মাটি কাটে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।