চৌগাছায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ তৈরীর মধ্য দিয়ে সরকারী জমি দখলের চেষ্টা!

0

স্টাফ রিপোর্টার চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছায় সরকারী জমি দখলে নিয়ে মসজিদ তৈরী করার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। শুধু তাইনা, ওই ব্যক্তি কপোতাক্ষ নদের জমি দখলে নিয়ে ধীরে ধীরে সেখানে তৈরী করছে বসতবাড়ি। সুদুর পিরোজপুর জেলা থেকে আসা এই ব্যক্তি নানা কৌশলে সরকারী সম্পত্তি নিজের করে নিতে এক প্রকার মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ। এলাকাবাসি সরকারী সম্পত্তি দখলকারী ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি জমি উদ্ধারে সংশ্লিষ্ঠদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
চৌগাছা কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত সেতুর পশ্চিমপাশে সরকারী সড়কের জমি কৌশলে নিজের করে নিতে সেখানে ২০১৮ সালে প্রথমে বাঁশ চাটাই দিয়ে একটি মসজিদ বানানো হয়। যার মালিক পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ছোটশৌলা গ্রামের মৃত মোজাহার গাজীর ছেলে ইয়াকুববর সরদার (৮১)। ২০১৮ সালে মসজিদ তৈরীর জন্য মেইন সড়কের গা ঘেষে জমি দখলে নিয়ে যেনতেন ভাবে নামাজ আদায় করতে শুরু করেন ওই ব্যক্তি নিজেই। এরপর পরিস্থিতি বুঝে সেখানে তৈরী করা হয় ইটের দেয়াল, নদ খননের নামফলককে ঘিরে নিয়ে এই দেয়ালটি নির্মান করা হয়। এরপর তিনি সেখানে আজান দেন এবং নামাজও পড়াতে থাকেন। কোন বাঁধা না আসায় তিনি সেখানে পাকাপোক্ত মসজিদ করার লক্ষে ইট জড়ো করেন এবং ওজুখানা তৈরীর জন্য কাজও শুরু করেন। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানার পর তার কাজ বন্ধ করে দেন। সরকারী জমি দখলের চেষ্টায় মরিয়া ওই ব্যক্তি কপোতাক্ষ নদের জমিও গিলে খেতে মেতে উঠেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেতুর পশ্চিম উত্তর কোনে নদের বুকে তিনি একটি টিন সেটের ঘর নির্মান করেছেন। এরপাশেই ইট বালু দিয়ে তৈরী খুটি পুতে সেখানেও ঘর তৈরীর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সব কিছুই ধীরে ধীরে করার পর কোন বাঁধা না এলে তা নিজের মত করে দখলে নিবেন এমনটিই জানালেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।
গতকাল সরেজমিন যেয়ে দেখা যায় বৃদ্ধ ইয়াকুববর সরদার মসজিদ পরিস্কার করছেন, কিছুক্ষন পরই তিনি জোহরের নামাজের আযান দিবেন। এ সময় কথা হয় ওই ব্যক্তির সাথে। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের পরপরই পিরোজপুর থেকে চৌগাছাতে চলে আসি। প্রথম দিকে কুলির কাজ (মুটে) করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন। এরপর বিয়ে করেন সন্তানাদি হয়। বর্তমানে তিনি ২ ছেলে আর ১ মেয়ের জনক। ছেলে বিল্লাল হোসেন ও দুলাল হোসেন চৌগাছা কাঁচা বাজারে আড়তদারি করেন। আর মেয়ে তাছলিমা খাতুন চৌগাছার একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তিনি বলেন, কপোতাক্ষের পাড়ে ১ খতিয়ানের অনেক জমি আছে। এরমধ্য থেকে ৬৬ শতক জমি ব্যক্তি মালিকানা হয়ে যায়। আমি ওই জমি মৃধাপাড়ার জৈনক এক ব্যক্তির নিকট থেকে ক্রয় করে বসবাড়ি তৈরী করেছি, সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছি। সরকারী বহু জমি পড়ে আছে, তাই ভাবলাম একটি মসজিদ তৈরী করি সকলে নামাজ আদায় করা যাবে। সেই ভাবনা থেকে মসজিদ তৈরী করতে থাকি কিন্তু পৌরসভা থেকে বাঁধা দেয়ায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। মুসল্লিরা জানান, মসজিদ নির্মানের বয়স প্রায় ৪ বছর হলেও নেই কোন কমিটি। দু’জন ইমাম আছেন বলে তিনি দাবি করেন আর মুয়াজ্জিন তিনি নিজেই। আয় ব্যয়ের নেই কোন সঠিক হিসেব, এক কথায় হযবরল অবস্থায় মসজিদ চলে।স্থানীয়রা আরও বলেন, ইয়াকুববর সরদার অত্যান্ত সুচতুর ব্যক্তি। সরকারী জমিতে প্রথমে ছোট্ট ছোট্ট কাজ করে তা দখলের চেষ্টা চলে। বাধা না এলে সেটি নিজের মত করে নিয়ে নেয়। নদের মাঝে মাটি ফেলা জায়গায় টিনসেটের ঘর করেছে আবার কিছু খালি জায়গায় খুটি পুতে রেখেছে, এক সময় ওই জায়গা তার বলে দাবি করে বসবে। মসজিদ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এখানে কেউ হাত দিবেনা, এই দূর্বলতার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তিনি মসজিদ তৈরী করতে শুরু করেন। এরপর পাশের জায়গাও সে দখল করতে শুরু করবেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে পৌর মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল বলেন, ওই ব্যক্তি যেখানে মসজিদ তৈরী করছেন তার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না, কারণ পারবাজারের চারিপাশেই মসজিদ আছে তাহলে কেন সেখানে মসজিদ তৈরী করতে হবে। এছাড়া পুরো জমিটা হচ্ছে সরকারী। আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যেয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি জমির সমুদয় কাগজপত্র নিয়ে পৌরসভায় আসার নির্দেশ দিয়ে এসেছি।