সুদ ব্যবসায়ের অভিযোগে যশোরে নারীর বিরুদ্ধে এক দিনে আদালতে ৭জনের মামলা!

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে মনিরা বেগম নামে এক নারীর বিরুদ্ধে চড়া সুদে কারবার, মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগে বৃহস্পতিবার আদালতে সাতটি মামলা দায়ের হয়েছে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযুক্ত মনিরা বেগম যশোর সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা এলাকার রবিউল ইসলামের স্ত্রী। ৭ মামলার বাদী হলেন খোলাডাঙ্গা গ্রামের ভাদুরী রানী, প্রমিলা কর্মকার, ইলা সরদার, চঞ্চলা কর্মকার, ভুলামনি কর্মকার, রিতা রানী কর্মকার ও রুপালী কস্তা।
মামলাগুলিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মনিরা বেগম পেশাদার সুদে টাকার কারবারি। তার সুদে ব্যবসার জালে আটকা পড়ে অনেক পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ব্যাংকচেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে ভিটেমাটি লিখে নেয়া, এলাকাছাড়া, মারপিট ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। মানসিক যন্ত্রনার কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে মারা গেছেন কেউ কেউ। যশোর সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা ভাদুরী রানী ২০১৮ সালে মেয়ের অস্ত্রপচারের সময়ে দুই দফায় মনিরা বেগমের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। মনিরার চাপে ভাদুরি স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সুদসহ তার দেনা পরিশোধ করেন। তাতেও মনিরার দেনা নাকি পরিশোধ হয়নি। আরো টাকার জন্যে ক্রামাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছেন মনিরা। আরেক মামলার ইলা সরদার উল্লেখ করেছেন, গত ২০১৬ সালের ৫ জুলাই চিকিৎসার জন্যে ৩৫ হাজার টাকা ঋণ নেন মনিরার কাছ থেকে। পরে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেও তিনি রক্ষা পাননি। সুদ হিসেবে আরো ৫ লাখ দাবি করেন মনিরা। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় বাড়িতে গুন্ডা পাঠিয়ে আরো ৮৮ হাজার টাকা জোর করে নিয়ে যান। মনিরার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন ভুলামনি কর্মকার। এরপর তার কাছে আরো টাকা দাবি করা হচ্ছে। তার একমাত্র সম্বল ভিটে বাড়ির দেড় শতক জমি জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে লিখে নিয়েছেন মনিরা। বাড়ি দখলে নেওয়ার জন্য ভুলামনির ঘরের আসবাবপত্র ও থালা-বাটি নিয়ে যায়। মানসিক অত্যাচারে তার ছেলে লিটন কর্মকার সম্প্রতি মারা যান। অভিযোগের বিষয়ে মনিরা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে ফাঁসাতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কয়েকজন মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আমি নিজে স্থানীয় সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ভাদুরি রানী, তার স্বামী রঞ্জন ও ইলা সরদারকে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা ওই ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করছেন না। তাদের কাছ থেকে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া আছে-এটা সত্য। কিন্তু এখানে আমার কোনো লাভ নেই। দুঃসময়ে টাকা দিয়ে আমি তাদেরকে সহায়তা করেছি।’