চৌগাছায় অতিবৃষ্টিতে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি

0

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সৃষ্ট নিন্মচাপে অসময়ে টানা বর্ষণে চাষীদের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টরের বিভিন্ন ধরনের ফসল নষ্ট হয়েছে বলছেন চাষীরা। পানিতে ভাসছেজমিতে কেটে রাখা ধান।বোরোর বীজতলা, সরিষা, মসুর, আলু, পেয়াজ, পটল, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালং, ধনিয়া ও মরিচসহ সবধরনের সবজি চাষীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এছাড়াও যেসব চাষী ধান ঘরে তুলতে পারেননি তারাও পড়েছেন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে। কৃষকরা অভিযোগ করে বলছেন তবে এই বিপদের দিনে কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে দেখা মিলছে না।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের পাওয়া তথ্য মতে ৩০ হেক্টর বোরো বীজতলা, ৪০৭ হেক্টর মসুর, ৬৭ হেক্টর গম, ৭৪৫ হেক্টর সরিষা, ৮২০ হেক্টর বিভিন্ন ধরনের সবজি, ১৭০ হেক্টর গোলআলু, ৮৭ হেক্টর পেয়াজ, ৬৫ হেক্টর মরিচ খেত টানা বর্ষণে নিমজ্জিত হয়েছে। এরমধ্যে ২০ হেক্টর বোরো বীজতলা, ১৪১ হেক্টর মসুর, ৩৪ হেক্টর গম, ৩০১ হেক্টর সরিষা, ৪৭৮ হেক্টর বিভিন্ন ধরনের সবজি, ৯০ হেক্টর গোলআলু, ৩৭ হেক্টর পেয়াজ, ২৩ হেক্টর মরিচ ক্ষেত স¤পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। তবে এ উপজেলার কৃষকদের দাবী গত রবিবার ও সোমবারের টানা বৃষ্টিতে মাঠের পর মাঠ ফসলি জমি ও সবব্জি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় গম ৭০ হেক্টর, মশুড়ী ১০০ হেক্টর, আলু ১০৫ হেক্টর, মরিচ ৬০ হেক্টর, বেগুন২৭০ হেক্টর, ফুলকপি ৩২৫ হেক্টর, বাঁধাকপি ২৫০ হেক্টর, টমেটা ৫৫ হেক্টর, শরিষা ১২৫ হেক্টর, বোর-বীজতলা৩০ হেক্টর ও আমন ধান ২৫০ হেক্টর নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন পানি নিস্কাশন যতো দ্রুত হলে ফসলের ক্ষতি ততো কম হবে। পানি নিস্কাশন হতে দেরি হলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। তবে কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য ক্ষতির সঠিক চিত্র নয় বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা। তাদের দাবি এখনো অনেকের আমন পাকা আমন ধান কেটে রাখা ক্ষেতের উপর দিয়ে পানির প্রবল স্রোত বইছে। অনেক জালি দিয়ে রাখা ধান পানিতে তলিয়ে রয়েছে। আমনের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন না। তারা বলেন কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে না গিয়ে অফিসে বসেই ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করেছেন বলে প্রকৃত ক্ষতি হিসাব রিপোর্টে উঠে আসেনি। উপজেলার সিংহঝুলী গ্রামের শাহিনুর রহমান দফাদার বলেন, আমার ১০ বিঘা ১৫ কাঠা জমিতে রোপা আমন ধান ছিলো। এর মধ্যে সাত বিঘার ধান বাড়িতে নিতে পারলেও ৩ বিঘা ১৫ কাঠার ধান এখনো পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, আমি কৃষি অফিসের অধীনে বীজধান তৈরিকারী কৃষক গ্রুপের একজন সদস্য। অথচ এ কয়দিনে কৃষি অফিসের একজন কর্মকর্তাও মাঠে দেখা যায়নি। এমনকি তারা মুঠোফোনেও কোন খোঁজ নেননি। সাংবাদিকরা শুধুমাত্র আমার মাঠে এসেছেন ও নিউজ করেছেন।একই গ্রামের আলমগীরের ১০ বিঘা ধানের মধ্যে সাত বিঘাই ঘরে উঠাতে পারেন নি। তারও অভিযোগ কৃষি অফিসের কেউ এখন পর্যন্ত মাঠেই আসেন নি। অথচ তাঁরা সাংবাদিকদের কাছে বলছেন রোপা আমনের কোনো ক্ষতি হয়নি। পৌরসভার বেলেমাঠ গ্রামের আজগর আলী বলেন, আমার দেড় বিঘা পেঁয়াজ এবং এক বিঘা গোল আলু স¤পূর্ণ নষ্ঠ হয়ে গেছে। তবে কৃষি অফিসের কেউ এখনো পর্যন্ত মাঠেও আসেননি বা খোঁজও নেননি বলে তিনি অভিযোগ করেন।একই গ্রামের হানেফ আলী বলেন, আমার এক বিঘা জমির মসুর নষ্ঠ হয়ে গেছে। তারও অভিযোগ কৃষি কর্মকর্তারা কোনো খোঁজ নেননি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন মাঠে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দিয়েছেন। রোপা আমনের ক্ষয়ক্ষতির কোনো হিসাব না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন অল্পকিছু রোপা আমন ধান মাঠে আছে। যার আংশিক ক্ষতি হয়েছে। তবে পানি নিস্কাশন যতো দ্রুত হবে ফসলেরক্ষতি ততো কম হবে। পানি নিস্কাশন হতে দেরি হলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।