স্বরাষ্ট্র ও পরিবহন মন্ত্রণালয়কে কঠোর হতে হবে

0

সিট ও সময় নিয়ে যাত্রীদের সাথে প্রতারণা, দুর্ব্যবহার এবং ভাড়া নিয়ে বিতণ্ডার জেরে গণপরিবহন থেকে যাত্রী ফেলে দেওয়ার ঘটনা থেমে নেই। একের পর এক বাস থেকে যাত্রী ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। চালক ও সহকারীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। তাঁদের আচরণে কোনো পরিবর্তন আসছে না। যাত্রীদের জীবনের কোনো মূল্য তাঁদের কাছে আছে বলে মনে হয় না। কিছুদিন আগ পর্যন্ত তারা মানসম্মানহানী করতো, এখন প্রাণহানী করছে।
২০১৮ সালের ২১ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলকে নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন একটি বাস কম্পানির ড্রাইভার, সুপারভাইজার ও হেল্পার। এই মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছিলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন হত্যার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, যা বলাটা বোধ হয় ভুল নয়।’ গত শনিবার চট্টগ্রামে এক স্কুল শিক্ষককে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করায় বাসচালকের সহকারী তাঁকে বাস থেকে ফেলে দেন। ওই শিক্ষকের পায়ের ওপর দিয়ে বাস চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে চট্টগ্রামে। চলতি মাসেই চট্টগ্রামে বাড়তি ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করায় এক যাত্রীকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন বাসের চালক ও সহকারী। গত বছর চট্টগ্রামের জিইসিতে মাত্র এক টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে এক যাত্রীকে হত্যার খবর আসে সংবাদমাধ্যমে। ২০১৯ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে ভাড়া নিয়ে বিবাদে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় এক যাত্রীকে। ২০১৮ সালে রাজধানীর তিতুমীর কলেজের এক ছাত্রকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে হত্যার খবর এসেছিল গণমাধ্যমে। ২০১৮ সালের মার্চে বদরগঞ্জ-রংপুর সড়কের মোক্তারপাড়ায় ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে যাত্রীকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালের মার্চে ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির জের ধরে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে বাস থেকে ফেলে দিলে তাঁর মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন চালকের সহকারী। মাত্র ক’দিন আগে এক স্কুলছাত্রীকে ফেলে দেয় এক হেলপার। এ রকম ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে কোথাও না কোথাও । দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি পরিবহন শ্রমিকরা একেবারেই শ্র্রদ্ধাশীল নন। এ ধরনের ঘটনায় আটক চালক ও সহকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিবহন শ্রমিক, পরিচয়ধারী এসব ঠান্ডা মাথার ভয়ঙ্কর, অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর না হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কখনই দেয়া সম্ভব হবে না। আমরা আশা করবো, স্বরাষ্ট্র ও পরিবহন মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।